ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সাংবাদিক বরাকের খবর রাখেন না
নয়া ঠাহর: সংবাদদাতা
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছু অতি পরিপক্ক সাংবাদিক ও উগ্র বুদ্ধিজীবিদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী র বরাক ব্রহ্মপুত্র সমন্বয়ের প্রচেষ্টা বিফল হতে পারে - বিডিএফ।
সম্প্রতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিহুর ছুটি ঘোষণা নিয়ে একটি অবাঞ্ছিত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কের মূল হোতা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার প্রবীণ সাংবাদিক তথা গল্পকার মনোজ কুমার গোস্বামী, যিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিহু উপলক্ষে ছুটি নেই বলে সামাজিক মাধ্যমে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে একাংশ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বুদ্ধিজীবি বরাক সম্বন্ধে আবার তাঁদের বিতৃষ্ণা উগড়ে দিয়েছেন। এই সমগ্র ব্যাপার নিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এক প্রেস বার্তায় বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে এইধরনের বরাক বিদ্বেষী মনোভাব দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ উগ্র জাতীয়তাবাদীরা লালন করে আসছেন যার উদাহরণ আবার দেখা গেল। তিনি বলেন এই প্রবীণ সাংবাদিকদের উচিত ছিল মন্তব্য করার আগে আরো সংবেদনশীল হয়ে প্রকৃত খোঁজ খবর নেওয়া। কারণ প্রতিটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা জাতীয় স্তরে প্রকাশিত হয়,যাতে স্থানীয় ছুটি অন্তর্ভুক্ত না থাকাটাই স্বাভাবিক। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও সেজন্য বিহুর ছুটি নেই। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিন্তু এরপরও একদিনের জন্য বিহুর ছুটি মঞ্জুর করেছেন। এই সাংবাদিক বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে আরো বলেছেন যে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি ছাব্বিশ দিন পুজোর ছুটি দেওয়া হয় যা সর্বৈব মিথ্যা। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিদের এই ধরনের দায়িত্বহীনতার জন্যই বারবার দুই উপত্যকার সমন্বয় বিনষ্ট হয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ' বরাক ব্রহ্মপুত্র পাহাড় ভৈয়াম ' সমন্বয়ের প্রচেষ্টা করেছিলেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় হিমন্ত বিশ্বশর্মাও সম্প্রতি শিলচরে এসে উভয় উপত্যকার মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন,বরাকে অসম সাহিত্য সভার অধিবেশন আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছেন,যাকে বিডিএফও স্বাগত জানিয়েছে । কিন্তু এইধরনের চক্রান্ত চলতে থাকলে সেসব বিফল হতে বাধ্য।
বিডিএফ যুব ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত এদিন বলেন যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ বুদ্ধিজীবি তথা রাজনৈতিক নেতারা প্রচার করেন যে আসুর আন্দোলনের জন্যই নাকি আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এটা যে সর্বৈব মিথ্যা তা সারা ভারতের মানুষ জানেন। আকসার নেতৃত্বে একদশক ব্যাপী আন্দোলনে বরাকের সর্বস্তরের জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলেই বরাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। এর আগে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বরাকের ছাত্র ছাত্রীরা পড়তে গেলে আসুর ক্যাডাররা তাঁদের শারীরিক নিগ্রহ করত, মার্কশিট ছিঁড়ে ফেলত। মূলত আসু এবং গন সংগ্রাম পরিষদের ক্রমাগত বিরোধিতার জন্যই এই আন্দোলন এতটা দীর্ঘায়িত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বরাকের আন্দোলনের জন্যই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অনায়াসে তেজপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে যায়। তিনি বলেন এই ঐতিহাসিক সত্যকে ধামাচাপা দেবার প্রচেষ্টা অব্যাহত। সেজন্যই সরকারি ভাবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোন ইতিহাস প্রকাশ করা হয়না। এমনকি এই ব্যাপারে অধ্যাপক সুবীর কর সম্পাদিত ম্যানুস্ক্রিপ্ট ছাপাখানায় যাবার পরও ফিরিয়ে আনা হয়েছে, কারণ এটি প্রকাশিত হলে আসু এবং গন সংগ্রাম পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধিতার কাহিনী সামনে চলে আসত। কল্পার্ণব বলেন এই ধরনের মানসিকতাই এই উপত্যকাকে পৃথকীকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন দুই উপত্যকার মধ্যে ভৌগলিক,ভাষিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈশাদৃশ্য সুস্পষ্ট। তাই আগামীতে বরাক পৃথক হবে এই কথাও জোর দিয়ে বলা যায়।
বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন যে এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ বুদ্ধিজীবি মন্তব্য করেছেন যে বরাক উপত্যকা নাকি বাকি আসামের মাথা ভেঙে খাচ্ছে তাই একে আলাদা রাজ্য করে দেওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন বরাক উপত্যকায় ১২৫ টি চা বাগান রয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের অফুরন্ত ভান্ডার। কাছাড় জেলা থেকে রাজ্যের সর্বোচ্চ ভূমি রাজস্ব আদায় হয়। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থান সহ অন্যান্য যেসব সুবিধা রয়েছে তাঁতে আলাদা হলে বরাকের কোন সমস্যাই হবে না, স্বনির্ভর হয়ে থাকতে পারবে। কাজেই এইসব অবাঞ্ছিত মন্তব্য করার আগে আরো পড়াশোনা করা দরকার। তিনি বলেন সমন্বয় কখনো একতরফা হতে পারে না। তিনি এই ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই