Header Ads

তিনসুকিয়ার উজান পত্রিকা নিয়ে বললেন অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য

মহাকাব্যের শুরু আছে, শেষ নেই; মহাকাব্যের একক কোনো পাঠ নেই---
বিংশতিতম ‘উজান’ পত্রিকা উন্মোচন করতে গিয়ে বললেন 
অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, স্বপ্না ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য।
উন্মোচিত হল ‘উজান’ বিংশতিতম সংখ্যা গেল ৫ জানুয়ারি,২০২৫।রবিবারে সন্ধ্যাবেলা তিনসুকিয়ার প্রমোদ আসাম হোটেলের সভাকক্ষে। বাংলাসাহিত্যের আধুনিকতার অগ্রদূত মাইকেল মধুসূদন দত্তের এবারে জন্মের দুশো বছর। সেই কথা ভেবে এবারে কাগজের বিষয় করা হয়েছিল "মাইকেল ও মহাকাব্য'। সবিতা দেবনাথ, নন্দিতা মুখার্জিকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত সম্পাদক মণ্ডলীর এবারের মুখ্য সম্পাদক ছিলেন সুশান্ত কর। সঙ্গে অতিথি সম্পাদক হয়ে যোগ দেন কবি ও সাহিত্য-তাত্ত্বিক , আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য ও লেখক-গবেষক, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বর্তমান প্রধান অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য। মহাকবি মাইকেলের সঙ্গে বিশ্ব-মহাকাব্য সাহিত্যের রূপবৈচিত্র, নির্মাণ-বিনির্মাণকে ধরতে পুরো বছরভর পরিকল্পনা করে ভারত বাংলাদেশের জনা পঁচিশেক লেখকের কাছে আমন্ত্রণ যায় শুধু প্রবন্ধ লিখতে। অধ্যাপক দিলীপ কুমার বসু, অধ্যাপক নন্দিতা বসু, অধ্যাপক উদয়চাঁদ দাশ, মোহাম্মদ সাদিক,অধ্যাপক সুমন ঘোষ, অমিতাভ দেবচৌধুরী, সপ্তর্ষি বিশ্বাস, শম্পা রায়, পাপড়ি ভট্টাচার্য প্রমুখ উনিশজনে লিখেছেন। গৌতম চৌধুরী, সঞ্জয় চক্রবর্তী, স্বর্ণালি বিশ্বাস, সুজিত দাশ, সুমন পটারী, সুতপা চক্রবর্তী, শ্রীতন্বী চক্রবর্তী, তন্ময় বীর প্রমুখ ত্রিশের বেশি কবি কবিতা লিখেছেন। অনুবাদে রয়েছেন দুজন অসমিয়া কবি স্নেহাঙ্কর চক্রবর্তী ও কমল শর্মা। এবং স্বপ্না ভট্টাচার্য, মিথিলেশ ভট্টাচার্য, শ্যামল ভট্টাচার্য, রণবীর পুরকায়স্থ, মলয় কান্তি দে প্রমুখ নজনের ছোটোগল্পে সংখ্যাটি সেজে উঠেছে। মেঘনাদবধ কাব্যের রামের সেনা শিবিরের পথ অতিক্রম করে প্রমীলার যুদ্ধাভিযানের কথা মনে রেখে প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন ত্রিদিব দত্ত। ভেতরের অলঙ্করণের ছবি এঁকে দিয়েছেন অর্ঘ্য বিশ্বাস ও পৌষালি কর।
 উজান সম্পাদনা সমিতি সব সময়েই মনে করে—ছোটো কাগজকে কেবলই কিছু কবিতা আর কথাশিল্পের গণ্ডিতে বেঁধে রাখাটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বাকি শিল্প ও সমাজ নিয়ে ভাবাটাও বুদ্ধিমানেদের দায়। সেই জন্যে আগেই দুটি সংখ্যা কেবল ‘অভিনয়’ শিল্প নিয়ে করেছে। করেছে ‘মাতৃভাষা মাধ্যমের শিক্ষা’ নিয়ে। নাগরিকত্বের সংকট নিয়ে করেছে দুই দুইটি সংখ্যা।  ছুঁয়েছিল ‘অতিমারি’। সঙ্গীত নিয়ে করেছিল একটি সংখ্যা। গেলবারের সংখ্যাটি সাজানো হয়েছিল  শিশু কিশোর সাহিত্য নিয়ে। এবারে নিবেদিত হল মাইকেল মধুসূদন স্মরণে। 
জানুয়ারিতে কলকাতা বইমেলাতে কাগজটি পৌঁছুবে। আর পৌঁছুবে শীতের নানান বইমেলাতেও। শিলচরের বাতায়নে এবং আগরতলার ‘অক্ষর পাবলিকেশন্সে’ও পাওয়া যাবে।
দুটি উদ্বোধনী গানে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় , তার একটি ছিল মধুসূদন দত্তের সুপরিচিত কবিতা ‘রেখো মা দাসেরে মনে’-র সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত রূপ। এতে কণ্ঠদান করেন জীবন কৃষ্ণ সরকার, চন্দ্রা চক্রবর্তী, নন্দিতা মুখার্জি, তুহিনা ভট্টাচার্য ও মৌসুমী দাস । তবলাতে সঙ্গত করেন অনিমেষ কলিতা , গিটারে জয় দেব। 
এর পরেই "উজান সাহিত্য গোষ্ঠী'র সভাপতি সুজয় কুমার রায়ের পৌরোহিত্যে  মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তাঁকে একটি উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানান  চন্দ্রা চক্রবর্তী।সূচনাতেই একটি শোক-প্রস্তাবে স্মরণ করা হয়  এবছরে  যারা আমাদের ছেড়ে গেলেন—সেই সব শিল্প ও সাহিত্য জগতের ব্যক্তিত্বদের। প্রথিতযশা তবলা বাদক জাকির হুশেন, প্রখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগাল,প্রখ্যাত নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতা মনোজ মিত্র, গোলাম মুরশিদ,কবি অরুণ চক্রবর্তী,কবি বিজয় কুমার ভট্টাচার্য,কবি-গবেষক তুষার কান্তি নাথ, কবি সুনীতি দেবনাথ,কথাশিল্পী সুবিমল রায়, মানস দেববর্মণ,অনুপ ভট্টাচার্যের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। 

 দুই অতিথি সম্পাদকের সঙ্গে উন্মোচন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যের জীবন সঙ্গিনী ও কথাশিল্পী স্বপ্না ভট্টাচার্য। কিন্তু অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যের রক্তে শর্করা রোগের জটিলতা বেড়ে যাওয়াতে  শেষ মুহূর্তে আসা বাতিল করেন। কিন্তু আন্তর্জালে গোগুলমিটে তাঁরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। সশরীরে উপস্থিত হন এসে অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য । তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানান পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক নন্দিতা মুখার্জি। এর পরে তাঁকে এবং তাঁর হাত দিয়ে বাকি দুই উন্মোচকের জন্যে বই উপহার দিয়ে সম্মান জানান তুহিনা ভট্টাচার্য। 
সভাপতি সুজয় রায় স্বাগত ভাষণ দিলে পরে দুই শিশু শিল্পী টিউলিপ দত্ত ও প্রকৃতি চক্রবর্তী একক সঙ্গীত পরিবেশন করে এবং নৃত্য পরিবেশন করে আরও এক শিশু শিল্পী সঞ্চারী চক্রবর্তী।
এর পরেই উন্মোচিত হয় বিংশতিতম সংখ্যা "উজান' পত্রিকা। কিন্তু তার আগে সংখ্যাটির সম্পর্কে এবং অনুষ্ঠানের তিন অতিথির পরিচয় নিয়ে মুখ্য সম্পাদক সুশান্ত কর একটি ছোটো বক্তৃতা করেন।
আন্তর্জালে অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য ও কথাশিল্পী স্বপ্না ভট্টাচার্য উজানের প্রচ্ছদ উন্মুক্ত করেন। এদিকে মোড়ক খুলে কাগজটি উন্মোচন করেন অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য—তাঁকে সঙ্গ দেন উজানের সভাপতি সুজয় কুমার রায়, সহ সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক ভানু ভূষণ দাস, পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক নন্দিতা মুখার্জি, মুখ্য সম্পাদক সুশান্ত কর, উপস্থিত অতিথিদের থেকে পূর্ণ কাকতি, সুভাষ সেন, অধ্যাপক হিমাংশু বিশ্বাস ও কমলেশ চক্রবর্তী।
এর পরে "মাইকেল ও মহাকাব্য' নিয়ে একে একে বক্তব্য রাখেন স্বপ্না ভট্টাচার্য, অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, এবং অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য। তাঁদের বক্তব্যে তাঁরা বিশ্ব সাহিত্যেই মহাকাব্যের রূপবৈচিত্র ও নির্মাণ বিনির্মাণের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন। যদিও অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যের বক্তব্যে জোর পড়ে মাইকেলের রচনা কর্মে, অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্যের বক্তব্যে জোর পড়ে রামায়ণ-মহাভারত এবং আধুনিক রাজনীতি—সমাজতত্ত্বে—শিল্পে –সাহিত্যে এদের বিনির্মাণ প্রক্রিয়ার উপরে যে প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদনে। একবাক্যে তাঁদের মূল কথা ছিল ""মহাকাব্যের শুরু আছে, শেষ নেই; মহাকাব্যের একক কোনো পাঠ নেই।'' তাঁরা তিনজনেই এই সংখ্যা উজানের পরিকল্পনা, গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন। এবং অনুরোধ করেন কাগজটি যেন সবাই নিজেরাও সংগ্রহ করেন, অন্যদেরও করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
পত্রিকা উন্মোচন মুহূর্তে শতাধিক দর্শকে অনুষ্ঠান ঘর ছিল ভিড়ে ঠাসা। লিডো-ডিগবয়—ডুমডুমা –মাকুম থেকেও অনেকেই এসে জুড়েছিলেন।
এর পরেই ‘সঞ্চয়িতা’র শিক্ষক অমল মুখার্জির পরিচালনায় গিটার মোহন বীণা ও তবলাতে রাগ দরবারির উপরে একটি রচনা বাজিয়ে শোনায় তাঁর চার ছাত্র-ছাত্রী আদৃজা পাল, আকাঙ্ক্ষা চক্রবর্তী, সুরিয়াংশু চক্রবর্তী ও নয়ন দে।
হিজুগুড়ির "সুর ও সঙ্গীত'-এর শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। তাতে কণ্ঠ দেন চন্দ্রা দেবনাথ, শিল্পী দে, চৈতালি ভট্টাচার্য, ডরিনা চৌধুরী। তবলাতে সঙ্গ দেন দেবপ্রিয় চক্রবর্তী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সৌমেন্দু ধর ,পৌষালি কর ও জীবন কৃষ্ণ সরকার। সৌমেন্দু ট্র্যাকে গান করলেও বাকিদের তবলাতে সঙ্গত করেন অনিমেষ কলিতা। পৌষালিকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন অমল মুখার্জি। মাইকেল মধুসূদনের কবিতা আবৃত্তি করে শোনান সুতনুকা ভট্টাচার্য, মনীষা বণিক ও সৌমেন ব্যানার্জি। এছাড়াও একটি রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি করে সঞ্চারী চক্রবর্তী। নিজের লেখা কবিতা পড়ে শোনান নন্দিতা মুখার্জি, ভানু ভূষণ দাস ও নীহারিকা দেবী। 
পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ত্রিদিব দত্ত। তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত ধন্যবাদ সূচক বক্তব্যের পরে 
             টানা চার ঘণ্টার অনুষ্ঠান শেষ হয় জমজমাট ধামাইল নাচে। তুহিনা ভট্টাচার্যের পরিচালনাতে "তিনসুকিয়া ধামাইল গোষ্ঠী'র পরিবেশিত ধামাইল নাচে  অংশভাগী শিল্পীরা ছিলেন  সবিতা চন্দ,সুপর্ণা মালাকার, মিনা চন্দ, ঊর্মিলা চন্দ, অঙ্কিতা চন্দ, মায়া চন্দ,সাবিত্রী চন্দ, রূপালী দাস,এবং  নীহারিকা দত্ত। ঢোলে সঙ্গ দেন দীপশিখা দাস।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.