উত্তর পূর্বের হিন্দু বাঙালিদের শেষ করার গভীর চক্রান্ত চলছে
চিত্তরঞ্জন পাল
বাঙালি হচ্ছে এক আত্মঘাতী ও আত্মবিস্মৃত জাতি। তাই তাঁরা বুঝতেই পারছেন না যে আগামি দিনগুলোতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের হিন্দু বাঙালিদের সম্পূর্ণ রূপে নিঃশেষ করার এক নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র চলছে। এই জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার ও ক্ষমতা সংকুচিত করার পাশাপাশি ভাষিক পরিচয়ও অক্ষুন্ন থাকবে কী না, তা ভবিতব্যই নির্ধারণ করবে। ওদিকে, বাংলাদেশের চলমান হিংসা নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের হিন্দু বাঙালিরা অত্যন্ত আবেগপ্রবন ও অত্যাধিক উদ্বিগ্ন! যদিও আমরা ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে নিরন্তর ভুগছি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশে জামাত এ ইসলামীর সমর্থকরা অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত। কিন্তু বর্তমানে যে নৈরাজ্য চলছে, তা হিযবুত তাহরীর সৃষ্ট। যার পেছনে স্বয়ং মুহম্মদ ইউনুস রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সংগঠনটি ১৯৫৩ সালে লেবাননের হৈরুথ শহরে গঠন করা হয়েছিলো। তাদের লক্ষ্য হলো, ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা, মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করা ও বিশ্বব্যাপী শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করা। জানামতে, বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর সমর্থকরা তুলনামূলক ভাবে উচ্চ শিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক তাদের আন্দোলন পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দখল ছিলো শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ জামাত এ ইসলামির ছাত্র সংগঠন হচ্ছে "শিবির"। তার আগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে ছিলো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। কিন্তু বর্তমানে তা হিযবুত তাহরীর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি শোনাযাচ্ছে, সেনাবাহিনীতেও হিযবুত তাহরীরের কর্তৃত্ব চলছে। সেনা বাহিনীতে নতুন নিয়োগ পাওয়া সেনা জোয়ানেরা হিযবুত তাহরীর নির্দেশ মতো চলছে। তৃতীয় ও মধ্যম বর্গের সেনার লোকেরাই হিযবুত তাহরীর কট্টর সমর্থক হয়ে উঠেছে। ১৯৪৬ সালের ১৪ই অক্টোবর নোয়াখালীতে যে ইতিহাসের কুখ্যাত নৃশংস দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিলো, সেখানে বাংলার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হুসেইন সুরাবর্দীর পাকিস্তানের উর্দু ভাষী সেনাবাহিনী অসামরিক পোশাকে আক্রমণ করেছিলো। সাম্প্রতিক কালে চট্টগ্রামের হিন্দু মন্দির গুলো ভাঙচুর করা কিংবা হিন্দু বাড়িঘরে আক্রমণ যে চালানো হচ্ছে, তা হিযবুত তাহরীরের নির্দেশে বাংলাদেশের বর্তমান সেনাবাহিনী অসামরিক পোশাকে সম্পাদন করে যাচ্ছে। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, মন্দির ভাঙচুর ও বাড়িঘরে আক্রমণ করা হচ্ছে সুদক্ষ পেশাদারি হাতে। সাধারণ জনগণ এভাবে সন্মিলিত ভাবে আক্রমণ করতে পারে না। অদূর ভবিষ্যতে উত্তর পূর্বাঞ্চলও হিযবুত তাহরীর থাবায় পরার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা চিন্তার বিষয়। মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যে বলেছেন, যদি বাংলাদেশ অস্থির থাকে, তাহলে উত্তর পূর্বাঞ্চলও শান্ত থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতে বোঝা যাচ্ছে যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হবে ভারতের জন্য। সুতরাং উত্তর পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের যে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা ব্যহত করতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে নজর রাখতে আহ্বান জানান।
কারণ, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর ও দার্জিলিং জেলার সংযোগস্থলে অবস্থিত ২২ কিলোমিটার অঞ্চলকে "চিকেন নেক" বলা হয়। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। বাংলাদেশ সরকার দিবাস্বপ্ন দেখছে, তারা এই করিডোর বিচ্ছিন্ন করে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করে ইসলামিক রাষ্ট্র বানাবে। জানামতে, খুলনা জেলার কয়েকটি মন্দির অক্ষত থাকার বিপরীতে বাংলাদেশের প্রায় আশি শতাংশ মন্দিরের বিগ্রহ ভাঙচুর করা হয়েছে। ওদিকে, রিটায়ার্ড জেনারেল জি ডি বক্সি বলেছেন, "আমরা যদি বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি, প্রয়োজনে তা আবার ভাঙতেও পারবো"। তিনি বাংলাদেশের রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলা নিয়ে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে "হিন্দু দেশ" নামে একটি মানচিত্র দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পরবর্তী কুটনৈতিক পদক্ষেপ কী হবে, সেটা এখনও কেউ বুঝতে পারছেন না। তবে হিযবুত তাহরীরের ব্যানার পোষ্টার সারা বাংলাদেশে ছেয়ে গেছে, ভারত শত্রু রাষ্ট্র বলে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। অনেকের ধারণা, হয়তো বা ডোণাল্ড ট্রাম্পের কার্যভার গ্রহণের প্রতীক্ষায় রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিশ্চয় "ওয়ার স্ট্র্যাটেজি" রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি বাংলাদেশের আংশিক এলাকায় সেনাবাহিনী ঢুকিয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশের অবশিষ্ট অঞ্চলের সংখ্যালঘু হিন্দুরা আতংকিত এই ভেবে যে হিন্দুদের ওপর আরো অমানুষিক অত্যাচার শুরু করবে হিযবুত তাহরীর সমর্থকরা। এমন অবস্থায় সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া আর বিকল্প পথ নেই।
কোন মন্তব্য নেই