ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি প্রায় ৫০ লাখ তাদের স্বার্থে কিছু করুন স্যার , কাতর আবেদন চিত্ত পালের
সমীপেষু,
ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা,
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, অসম।
নমষ্কার গ্রহণ করবেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনের অন্তঃস্থল থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। বরাক উপত্যকা উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গঠনের পাশাপাশি সেখান থেকে দুজন প্রতিনিধি মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। যদিও কৌশিক রায় বাঙালি নন, হিন্দীভাষী। তবুও তিনি বরাকের প্রতিনিধি, এটা অনস্বীকার্য। আমি বাঙালি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছি। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালির মন মানসিকতা আজও চিনে উঠতে পারি নি। এই উপত্যকায় পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি হিন্দু বাঙালি বসবাস করেন। আপনি আমার চেয়ে বেশি চিনেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। যা আমি পারিনি, সম্ভবতঃ আপনি উপলব্ধি করেছেন। এঁদের কোনো দাবি নেই। নেই কোনও আভিজাত্য কিংবা আত্মসন্মানবোধ! বিশাল এই জনগোষ্ঠীর নেই কোনও মন্ত্রী কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট মর্যদার চেয়ারম্যানের পদ। তবুও তাঁরা খুশি! আপনি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালিরা হচ্ছেন অমাবস্যা রাতের ঝিঁঝিঁ পোকার মতো। ম্লান আলো তাঁদের। দেখতে খুব সুন্দর! এই জনগোষ্ঠীর মানুষের মননে পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলো নেই, যা বিকিরণ করতে পারে গোটা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। অল্পতেই খুশি। কন্ঠে বিষ ধারণ করা শিবের মতো। চাহিদাও সীমিত। তাই অনুদানের ১২৫০ টাকা ও পাঁচ কিলোগ্রাম চালের উপহার পেয়েই সন্তুষ্ট!
হিমন্তবাবু, প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ১৯৯৪ সালে আমাকে কয়েকটি বই দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি বই ছিলো " Assam's Turmoil " ওই বইটিতে আমি পড়েছি। ষাটের দশকে অসমে একটি শ্লোগান ছিলো। "যদি রাস্তায় কখনও একটি সাপ ও একজন বাঙালিকে দেখো, তাহলে আগে বাঙালিকে মারবে, তারপর সাপটিকে মারবে।" মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়, আপনি কী এই ঘৃণার পরিধি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন? যদি পেরেছেন, তাহলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালিদের জন্য কিছু একটি করুন। এঁরা ব্রহ্মপুত্র নদের জলে ভেসে আসেন নি। এই উপত্যকার বায়ু, জল, অন্ন খেয়ে বড় হয়েছে।
আরও একটি কথা। প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য আমাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি ২০০৮ সালে আমাকে বলেছিলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রয়াত সন্তোষমোহন দেব সনিয়া গান্ধীকে কনভিন্স করেছিলেন, অসমের হিন্দু বাঙালিদের জন্য "বাঙালি অটোনোমাস কাউন্সিল গঠন করতে। কিন্তু শোনামতে,, তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত তরুণ গগৈ নাকি বাঁধা দিয়েছিলেন? তখন কথাটা বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু আজ আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে! তরুণ গগৈ বাঁধা দেন নি। বাঁধা দিয়েছিলেন বাঙালি বিদ্বেষী অন্য কেউ। শিখণ্ডি সামনে দাঁড় করিয়ে অন্য কেউ তীঁর মেরেছিলেন। তিনি কে......?
আমার হৃদয় বিশাল বড়। বরাকের দুজন মন্ত্রী ও বরাক উপত্যকা উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গঠনের জন্য আমি দারুন খুশি হয়েছি। কিন্তু দুঃখ হচ্ছে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালিদের ছাগলের তৃতীয় ছানা-ই বানিয়ে রাখলেন। যেমন, দু ভাই মায়ের দুধ খাচ্ছে দেখে তৃতীয় ভাই আনন্দে লাফাচ্ছে! অহংকারের খোলস ছেড়ে এমনিতেই আপনি দুজন মন্ত্রী দেন নি। বরাক উপত্যকায় বিজেপি-র ভোট কমেছে। তারজন্য ই আপনার এতো উদারতা প্রর্দশন। আমরা অপেক্ষা করবো, আপনার আরও উদারতা দেখার জন্য।
"মন করো শেষের সেদিন কী ভয়ঙ্কর,
সবাই বাক্য কবে, তুমি রইবে নিরুত্তর।"
বিনীত
চিত্তরঞ্জন পাল।
কোন মন্তব্য নেই