ধ্রুপদী ভাষা বাংলা ,অসমীয়া বাসীকে গর্বিত করেছে
বিজয় চক্রবর্তী। মাননীয় শ্রী যুক্ত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বধীন কেন্দ্রীয় সরকারের কেবিনেট গত ৩রা অক্টোবর বাংলা,অসমিয়া সহ ইন্দু ইউরোপিয়ান গোত্রের মোট ৫ টি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেয়ায় বাংলা ভাষী অসমিয়া হিসাবে আমি গর্বিত। বাংলা আমার মাতৃভাষা,অসমিয়া আমার ধাত্রী ভাষা। এই দুই বোন একই মায়ের গর্বজ্যাত- যমজ সন্তান।
দেখে নেয়া যাক ধ্রুপদী ভাষা কাকে বলে? ধ্রুপদী ভাষা বলতে সেই ভাষা গুলোকেই বুঝায় যে ভাষা গুলো অতি প্রাচীন, যাদের ন্যুনতম বয়স ১৫০০ বৎসর। যাদের লিখিত সাহিত্যও অতি প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। যাদের সাহিত্যের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা আছে এবং যারা অন্য কোনো সাহিত্যের পরম্পরা বহন করে না।
ভারত সরকারের মতে যে ভাষা প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত এবং যে ভাষার স্বাধীন প্রাচীন ঐতিহ্যময় সাহিত্য আছে সে ভাষা ই ধ্রুপদী। প্রাচীন বহু ভাষা ই বর্তমানে নেই কিন্তু সেইসব অপ্রচলিত ভাষার শব্দ ভান্ডার থেকে ঋণ নিয়ে অন্য ভাষা ও সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে, হচ্ছে।
২০০৪ সনের ১২ অক্টোবর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার (ড: মনমোহন সিং এর নেতৃত্বাধীন) হটাত তামিল ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করেন। তামিল ভাষা দ্রাবিড় গোত্রের।দ্রাবিড় গোত্রের অন্য ভাষা তখনও ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পায় নি । ইন্দু ইউরোপিয়ান গোত্রের অন্যতম ভাষা সংস্কৃতকে একই কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৫ সনের ২৫ সে নভেম্বর ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। এই গোত্রের অন্য ভাষা গুলো বিশেষ করে বাংলাকে ধ্রুপদী র স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ২০০৪ সন থেকে লাগাতার বহু অনুনয় বিনয়, তথ্য পূর্ণ দাবী পত্র বিদগ্ধ পণ্ডিত গণ কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিতে শুরু করেন । দাবী দাবা, অনুনয় বিনয় ২০০৮ সনের নভেম্বর থেকে ক্রমস আন্দোলনের দিকে পা বাড়ায়।কারন, কেন্দ্রীয় সরকার ৩১/১০/২০০৮ সনে দ্রাবিড় গোত্রের আরও দুটি ভাষা তেলেগু এবং কন্নড় কেও ধ্রুপদী র তকমা লাগিয়ে দেন। আবার ২৩/৫/২০১৩ তে একই গোত্রের মালায়ালম ও ২০/২/২০১৪ সনে ইন্দু ইউরোপিয়ান গোত্রের উড়িয়া ভাষাকেও ধ্রুপদী স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সরকার তখনও ড: মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন UPA সরকার। বাংলা সহ অন্য ভাষার প্রতি UPA সরকারের উদাসীনতায় বাংলা ছড়াও অন্যান্য ভাষীক সম্প্রদায়ের মধ্যেও আন্দোলনের সূচনা হয়। বাংলা ভাষীদের মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে।
আমি গর্বিত যে, "মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা "কে ধ্রুপদী র স্বীকৃতি আদায়ের একটি অন্দোলনের কর্মসূচিতে কলকাতায় অংশ গ্রহণ করেছিলাম। সাথী ছিলেন আমার মাননীয় শিক্ষক শ্রী কমাল দত্ত মহাশয়। তারিখ টি খুব সম্ভব ১৯ সে নভেম্বর ২০২১ ছিল। কার্যসূচি অনুযায়ী বিকেল চারটায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে পদযাত্রা করে কলেজ স্কয়ারের বিভিন্ন পথ পারি দিয়ে পুণরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটকে উপনিত হয়ে প্রতিবাদী সভার মাধ্যমে সেই দিনের কার্যসূচির সমাপন। এই পদযাত্রার সম্মুখের বেনার ধরেছিলাম আমি এবং শ্রদ্ধেয় কমল দত্ত মহোদয়। এই পদযাত্রার আহ্বায়ক ও আয়োজক ছিলেন সারা ভারত বাংলা ভাষা মঞ্চের সম্পাদক, ভাষা বিপ্লবী শ্রী নীতিস বিশ্বাস মহোদয়। আমিও উক্ত সংগঠনের সাধারণ সদস্য হোজাইর শ্রী অমার চাঁদ দে ও শ্রী নিবাস দাস ও উক্ত সংগঠনের সাধারণ সদস্য।
বাংলা ভাষা ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পাবার পর আসামের বাঙালিরাও আনন্দিত। আনন্দের বহিঃপ্রকাশের একটি সংবাদ গত ৫ই অক্টোবর যুগশঙ্খ পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় "বাংলা ও অসমিয়াকে ধ্রুপদী স্বীকৃতি
বাংলা সাহিত্য সভা, অসম এর কৃতজ্ঞতা নিবেদন " শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে দেখে সুখ অনুভব করছি। সংবাদে প্রকাশ শিলচরের জনৈক সমর বিজয় চক্রবর্তী বাংলা ভাষা কে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি প্রদানের দাবি উত্থাপন করে ছিলেন সাহিত্য সভাটির প্রথম রাজ্য সম্মেলনে। তাঁর এই দাবী টি হোজাইর প্রাক্তন বিধায়ক, তরুন তুর্কি বিজেপি নেতা মাননীয় শিলাদিত্য দেব মহাশয় ত্রিপুরা সরকারের মাধ্যমে দাবী টি কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট পাঠিয়ে ছিলেন। প্রশ্ন হলো নিজ দলের সরকার আসামে থাকা সত্বেও কেন অন্য রাজ্যের মাধ্যমে পাঠানো হলো? বাংলা ভাষা কি আসামে সন্ত্রাসীর ভাষা না কি বাংলা ভাষা আসাম সরকারের এলার্জী? উত্তর কি দেবেন অসম বাংলা সাহিত্য সভার সাধারন সম্পাদক, আধ্যাপক, ড: প্রশান্ত চক্রবর্তি মহাশয়?
ইতি
বিজয় চক্রবর্তি।
সাধারন সম্পাদক।
অসম নাগরিক মঞ্চ।
কোন মন্তব্য নেই