বরাক ভাগ একমাত্র সমাধান : বি ডি এফ
৬ নং দফার আওতা থেকে বরাককে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত স্বাগত, কিন্তু এতে জটিলতা বাড়বে, তাই পৃথকীকরণই একমাত্র সমাধান - বিডিএফ।
আসাম চুক্তির ছয়নং দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত বিপ্লব শর্মা কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সম্প্রতি রাজনৈতিক তৎপরতা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যেই এর ৫২ টি সুপারিশ বাস্তবায়িত করা হবে এবং বাকি প্রস্তাবনা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তিনি আলোচনা করবেন। তবে এটাও বলেছেন যে এই প্রক্রিয়ার আওতা থেকে বরাক উপত্যকাকে বাদ রাখা হবে। আজ বিডিএফ অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর সদস্যরা।
এদিন সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে বিপ্লব শর্মা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম বক্তব্যের পরই তাঁরা বরাক উপত্যকাকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। যেহেতু মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই দাবির সপক্ষে মতামত দিয়েছেন তাই তাঁরা এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।জয়দীপ বলেন যে বিপ্লব শর্মা কমিটির রিপোর্টে ভুমিপুত্র বা খিলঞ্জিয়ার যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী ১৯৫১ সাল বা তার আগে থেকে যারা আসামে বসবাস করছেন একমাত্র তাঁদেরই ভুমিপুত্র হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে। তাঁদের জন্য লোকসভা,বিধানসভা এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ পদ সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের পদ এবং বেসরকারি সমস্ত চাকরিতেও একই ভাবে পদ সংরক্ষিত করা এবং ভুমিপুত্র ছাড়া কাউকে জমি হস্তান্তর করা যাবে না বলেও সুপারিশ করা হয়েছে। জয়দীপ বলেন এইসব সুপারিশ কতটা সংবিধান সম্মত তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে কারণ যদিও এই কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশে তৈরি হয়েছিল কিন্তু তাঁদের এই চূড়ান্ত রিপোর্ট কিন্তু কেন্দ্র সরকার গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন এটি গৃহীত হলে স্পষ্টতই রাজ্যে দুই ধরনের নাগরিক তৈরি হবেন। যাদের ১৯৫১ বা তার আগের নথিপত্র রয়েছে তাঁরা সমস্ত নাগরিক সুবিধার অধিকারী হবেন। অপরদিকে ১৯৫১ এর পর থেকে ১৯৭১ অব্দি যাদের নথিপত্র রয়েছে তাদের শুধু ভোটাধিকার ছাড়া অন্য অধিকার থাকবে না। তিনি বলেন যে একমাত্র ষষ্ঠ তফসিল ভুক্ত এলাকা ছাড়া ভারতীয় সংবিধান এই ধরনের বৈষম্যকে মান্যতা দেয়না। তাই বিপ্লব শর্মা কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সরকারের এই তৎপরতা পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে পারে। তিনি আরো বলেন যে বিডিএফ বিশ্বাস করে যে বরাকের ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাঁরা এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সবাই ভারতের বৈধ নাগরিক এবং ভুমিপুত্র। তাঁরা সরকার প্রদত্ত সমস্ত নাগরিক সুবিধা পাবার অধিকারী। তিনি আরো বলেন যে বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন জাতি জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছেন ।তাই এখানে কোন বিভাজনের চেষ্টা করা হলে বিডিএফ সর্বাবস্থায় তার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য থাকবে।
জয়দীপ এদিন আরো বলেন যে যদিও বরাককে এই কমিটির সুপারিশের আওতা থেকে বাদ রাখা হবে বলা হচ্ছে কিন্তু যদি এই সুপারিশগুলি কার্যকর করা হয়, তাঁতে জটিলতা বাড়বে বই কমবে না। তিনি বলেন চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্য ব্যাপী যেসব পরীক্ষা হবে সেখানে বরাকের কর্মপ্রার্থীরা বরাকের বাইরের সংরক্ষিত পদে নিয়োজিত হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।বিভ্রান্তি তৈরি হবে বরাকের কেউ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় জমিজমা কেনাবেচা করতে চাইলেও। তিনি বলেন এই ক্ষেত্রেও একই রাজ্যের মধ্যে অবস্থানের ভিত্তিতে দুই ধরনের নাগরিক তৈরি হবার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন যে সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার এক বিতর্কিত জাতিয়তাবাদী নেতা মন্তব্য করেছেন যে বরাক উপত্যকার বাসিন্দারা নাকি অসমিয়া দের নিজেদের অঙ্গ বলে মনে করেননা তাই বরাক আসাম থেকে বেরিয়ে গেলেই ভালো। সরকারি তরফে বা অসমিয়া বুদ্ধিজীবী মহল থেকে এখন অব্দি এই মন্তব্যের কোন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। তিনি বলেন সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে মনে হচ্ছে আসাম থেকে বরাক পৃথকীকরণই একমাত্র যুক্তিযুক্ত বিকল্প। এতে এইসব জটিলতা থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া যাবে তেমনি উভয় উপত্যকার মধ্যে বিভেদের পরিবর্তে সম্প্রীতির পথ সূচিত হবে। তিনি বরাকের সমস্ত সচেতন নাগরিকদের এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আহবান জানিয়েছেন।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে হৃষীকেশ দে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই