অসুর নিধন হবেই অভয়ার মায়ের দাবি
দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে অসুর নিধন হবেই
মৌমিতা দাস ,কান্দি
মহালয়ার এই গুরুত্ব আগে বুঝিনি। মেয়ে নিজে হাতে বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করার পরেও না। প্রতি বার মেয়ের ডিউটি থাকে। ভোরে মহালয়া শুনে বেরিয়ে যায়। কোনও কোনও বার মহালয়ার ভোরটা ওর হাসপাতালেই কাটে। কিন্তু এ এবারের পূজো একে বারে আলাদা। মহালয়া আলাদা। এত দিন মনে হচ্ছিল আমার বাড়িতে আর কোনও দিন আলো জ্বলবে না। আমার দুর্গা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ বলছি আমার দুর্গায বিচার এখনও বাকি। দেবীপক্ষের শুরু বিচারের লড়াইও শুরু। অসুর নিধন হবেই।
তিন বছর আগে মেয়ে হঠাৎ বলল মা চলো না বাড়িতে দুর্গাপুজো করি। ধমক দিয়ে বলছিলাম পাগল হয়েছিস? দূর্গা পূজার প্রচুর খাটনি মা। মেয়ে বলছিল তুমি চিন্তা করো না। দু'জনে মিলে করলে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ভোগ রান্না করবে আর আমি পুজোর দিকটা সব সামলে নেব। সেই শুরু। পরপর দুবার কি ভালোভাবে যে আমাদের বাড়ির পুজোটা হয়ে গেল বলে বোঝাতে পারবো না। গ্যারাজেই প্রতিমা পাতা হল। বাড়ির সামনে প্যান্ডেল। প্রতিদিন লোকজন খেত। আত্মীয়েরা সব চলে আসত মেয়ের ডাকে। ওর মিশুকে হয় না। ওর মধ্যে এমনই মারা যে কেউ ওর কথা ফেলতে পারত না।
ওর বাবা কাছেই এক জনকে প্রতিমা গড়তে বলে আসত। খুব বড় নয় পাঁচ ফুট মতো উচ্চতা হবে সেই প্রতিমার। নিজের পছন্দ করা শাড়ি দিয়ে আসত প্রতিমাকে পরাবে বলে। আমায় সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কিনত গিয়ে কিনত প্রতিমার শাড়ি। মহালয়া থেকেই নিরামিষ খাওয়া শুরু হত আমাদের। দশমীতে আমিষ। এত ভাল করে পুজোর জোগাড় করত যে পুরোহিতের ওকে ছাড়া চলত না। আমায় পুজোর দিকে মাথাই দিতে হত না। ভোগের দীকটা সব করতাম মেয়ে আমার নিরামিষ খেতেই বেশি ভালবাসত।
পনির কচুর শাক মোচা - ওর পছন্দের খাবারই সকলকে খাওয়াত। প্রতিমা বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের পুজো বলতে ছিল বাড়ি। সকলকে নিয়ে আনন্দ। বন্ধুদের নিয়েই বাড়িতে গল্প করত।
বিসর্জনের পরে একটু মন খারাপ থাকতো ওর। আবার ব্যস্ত হয়ে যেত নিজের কাজে। বলত মা অনেকে এই পুজোর সময়ে খুব কষ্ট পান। ডাক্তারেরা থাকেন না অনেকেই এই সময়ে। মেয়ে কিন্তু অঞ্জলি দিতে বসলেও রোগীর ডাক এলে উঠে যেত। বলত মানুষের ওপর তো পুজো নয় বলো মা।
কি ভাবে যে ও এই রকম তৈরি হয়েছিল জানিনা। আমারা যে ভাবে ওকে কিছুই দিতে পারিনি। টানিল চালের ঘর থেকে ওর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে শুরু। মাধ্যমিক স্কুলে দ্বিতীয় হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম। স্কুলের স্যারেরা ডেকে বলেছিলেন আলেদা করে মেয়ের প্রতি নজর দিন। বিজ্ঞানে খুব ভাল ছিল আমাদের মেয়ে। কিন্তু অনেক জন শিক্ষককে রেখে পড়ানোর সামর্থ ছিল না আমাদের। আমিই পড়িয়েছি মাধ্যমিক পর্যন্ত। উচ্চ মাধ্যমিকের সময় দু-একটা বিষয়ে কোচিংয়ে ভর্তি করিয়াছিলাম। কোনও কিছুর বায়না ছিল না ওর। আমরা তো ওকে বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়িয়েছি। শুধু বছরের শুরুতে যখন নতুন বই কেনার সময় হত তখন এর সঙ্গেই ইংরেজির মধ্যম স্কুলের বই চাইত। ওই টুকু পেলেই মেয়ে আমাদের খুশি। সে সব বই কি তাড়াতাড়ি সে পড়ে শেষ করে ফেলত। এখন মনে হয় যে নামের আগে ডিগ্রি পাওয়ার জন্য এত লড়াই করল মেয়েটা সেই নামটাই এখন মুছে আর জি করের ঘটনার জেরে গোটা রাজ্য যখন প্রতিবাদ-আন্দোলন উত্তাল তখনই মানুষকে উংসবে ফিরতে পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোন মন্তব্য নেই