বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ঝুলি থেকে বিড়াল বেরোতে শুরু করেছে।
শেষ পর্যন্ত ঝুলি থেকে বিড়াল বেরোতে শুরু করেছে।
বিজয় চক্রবর্তী
বাংলাদেশের কোটাআন্দোলন যে মুলত বাংলাদেশকে হিন্দু মুক্ত করার আন্দোলন ছিল তা ক্রমস সত্যে পরিণত হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলনের মোড়কে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী মুসলিমদের আন্দোলন ছিল কোটা বিরোধী আন্দোলন। ছাত্র আন্দোলনকে কৌশলে গণ অভ্যুত্থানের রূপ দিয়ে,সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদ ত্যাগে বাধ্য করিয়ে,বাংলা দেশের সামরিক প্রধান,জেনারেল ওক্কারুজ জামান শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন। হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের সামরিক প্রধান, জেনারেল ওয়াক্কারুজ জামান ক্ষমতা দখলের পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়া মাত্রই আন্দোলন কারিদের মনোবল বেড়ে যায়। তারা হিংসাত্মক আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। বঙ্গ ভবন, গণ ভবন অর্থাৎ প্রধান মন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, সংসদ ভবনের দখল নিয়ে ছাত্র নামধারী চুর, ডাকাত, গুণ্ডারা ব্যাপক ভাঙ্গ চুর , লুটপাট করেই ক্ষ্যান্ত থাকে নি মহিলার অন্তর্বাস দিয়ে বিজয় পতাকা উড়িয়ে মেধার পরিচয় দিয়েছে। মেধার পরিচয় দিতে দেশ জুড়ে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট , মট মন্দিরে লুটপাট ভাঙ্গ চুর, অগ্নি সংযোগ করে মেধার জয় উৎসব পালন করেছে। বঙ্গ বন্ধু মিউজিয়াম জ্বালিয়ে দিয়ে আনন্দ উৎসবের উল্লাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভেঙ্গে চুর মার করে, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রাথ ঠাকুরের মূর্তিও ভেঙ্গে ফেলে অসভ্যতার নতুন ইতিহাস গড়ে -তারা যে অসভ্যতার তালিকায় শ্রেষ্ঠ মেধাবী তার প্রমাণ দিয়েছে। মেধাবীদের এই কর্ম কাণ্ড কে প্রথম দিকে আওমী লীগের প্রতি মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে বিশ্ববাসীকে বুর্বক বানাতে আন্দোলন সমর্থক একশ্রেনীর বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক প্রয়াস চালিয়ে ছিলেন। তাঁদের সাথে সুর মিলিয়ে ছিলেন আমাদের দেশ ভারত বর্ষেরও কতিপয় স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাঁদের মধ্যে আমার পরিচিত একজন হলেন পশ্চিম বঙ্গের স্বঘোষিত তপ শীলি নেতা সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস।
ছাত্র আন্দোলনের গতি বিধি দেখে সামাজিক মাধ্যমে আমি তখন লিখেছিলাম,"চুলি কে পিছে ক্যা হ্যাঁয়"," ডাল মে কুচ কালা হ্যাঁয়।" আমার তখনি সন্দেহ হয়েছিল যে ,কোনো এক সময় কোটা বিরোধী আন্দোলন হিন্দু বিরোধী আন্দোলনে পরিবর্তন হযে যেতে পারে- কারন, কোটা প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল করে অধ্যাদেশ জারি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। বহালের আদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ হাই কোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করে ছিল শেখ হাসিনার সরকার। তাহলে হাসিনার দোষ কোথায়? তবু হাসিনার পদত্যাগ চাই, কিন্তু কেন? উত্তর-ভারত যাদের মামার বাড়ি দেশ ছাড় তাড়াতাড়ি। জামাতের কাছে ভারত মানে হিন্দু। তবু বহু হিন্দু আন্দোলনে শামিল হয়েছিল শুধু হাসিনা বিরোধিতার জন্য!
৫ই আগষ্ট হাসিনার দেশ ত্যাগের পর,সামরিক শাসনের দুই তিন দিনে শতাধিক হিন্দু মন্দির জ্বালিয়ে দেয়া হলো বা ভেঙ্গে দেয়া হলো। দেশময় নামী দামী হিন্দুদের সাথে সাধারন হিন্দুদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে, অগণিত হিন্দুকে খুন করা হলো। সামরিক প্রশাসন নীরব দর্শক। পুলিশ, মিলিটারি সবাইকে সমরিক প্রশাসক বেরেকে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। যার কারণে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পেলোনা বাংলাদেশর হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাস ও প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী অর্জুন আনন্দের ( দাস)বাড়িও। চুরি, ডাকাতি, লুট পা, খুন, রাহাজানি, মহিলার শ্লীলতা হানি, হিন্দু নির্যাতনে যে যত পারদর্শী সে তত মেধাবী এটাই কি বিএনপি, জামাত, আধ্যাপক ইউনূস ও বাংলা দেশের সেনা প্রধানের মেধার মাপকাঠি? জামাত,বিএনপি , ছাত্র সমন্বয় কমিটি,আন্দোলন সমর্থক শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী তথা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকগণ কি এই বিষয়ে কিছু বলবেন ? জানতে চায় জাগ্রত বিবেক।
"দেশ টা তুর বাপের নাকি?" গানটি কি দারুন। আমিও জানতে চাই বাঙলাদেশটি কি জামাত, বিএনপি, ছাত্র সমন্বয় কমিটি ও হিন্দু বিদ্বেষী মৌলবীদের বাপের না কি? বাঙ্গাল সুব্বা- পূর্ব বঙ্গ - পূর্ব পাকিস্তান- বাংলাদেশ কোটি কোটি ভারতীয় বাঙালি হিন্দুরও পিতৃ ভূমি/ পিতা মহ প্রপিতা মহের বাপের বাড়ি।১৯৫২ ভাষাআন্দোলন,১৯৭১ এর স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দুদেরাও রক্ত দিয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনেই অনেক হিন্দু যোগ দিয়েছিলেন। তাই বাংলাদেশ হিন্দুদেরও বাপের বাড়ি।
সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে আধ্যাপক ইউনূস তথা সামরিক শাসনের নির্লজ্জ্ব, অমানবিক, বর্বরতার দৃশ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় ছি ছি পড়ে যায় বাংলাদেশর উপর । মুখ রক্ষায় বাধ্য হয়ে সামরিক প্রশাসকের মুখ্য উপদেষ্টা, আমেরিকার পুষ্যপুত্র, আধ্যাপক ইউনূস ঘোষণা করলেন যে, দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ নাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। ফলে আবারো বিশ্ব বাসীর চোঁখে ধুলো দিতে হিন্দু নির্যাতনের গতি পথ আপাতত পরিবর্তন করা হলো।এই যাত্রায় পথের নাম পদত্যাগ পত্র। হিন্দু সরকারি চাকুরে, আধ্যাপক, শিক্ষক আদি বিভিন্ন সরকারি বিভাগে কর্মরত হিন্দুকে বলপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। মান ও প্রাণ বাঁচাতে পদত্যাগ করছেনও। হিন্দু বিরোধী ছাত্রদের মেধা আছে বলেই ত বাংলা দেশে হিন্দু নিপীড়নের নতুন পথের আবিস্কার হলো। ধন্য আধ্যাপক ইউনূস ! তাঁর মেধার প্রশংসা করতেই হবে বৈকি!!?? কত আধুনিক ও উন্নত মেধা মাপার মাপ কাঠি! অতীতের মতো এবারও সরকার ও প্রশাসন নীরব। বলা ভালো প্রশ্রয় দাতা। আইন শৃঙ্খলা বলতে বাংলাদেশে কিছুই নাই। জামাত, বিএনপির ছাত্রদের কথাই সরকারি আদেশ।প্রগতিশীল, উদার পন্থী, যুক্তিবাদী মুসলিমও চলতি বর্বরতার বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন,হিন্দুদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন কিন্তু শয়তান নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী। সকল চেষ্টাই বৃথা। নির্দোষ হিন্দুর পক্ষ নেয়ায় তারও নির্যাতনের শিকার।সামাজিক মাধ্যমে জানা জাচ্ছে যে, কোনো কোনো স্থানে হিন্দুদের জমি জায়গা দখলও বল পূর্বক নিচ্ছে এক শ্রেনীর মুসলমান।
গত ৫ ই আগষ্ট থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যা ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে তার উপর ভিত্তি করে বলছি কোটা বিরোধী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হিন্দু মুক্ত বাংলা দেশ গঠন, যা জামাতের মুল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন প্রতিহত করতে হলে বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়কে এগিয়ে এসে অন্যান্য প্রগতিশীল সমাজকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশর কু চক্রান্তের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে UNO এবং তার মানবাধিকার কমিশনকে বাংলাদেশর চলমান ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। আমেরিকার হিন্দু জনগণকে উদার পন্থী আমেরিকানদের কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশর হিন্দু হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করে মার্কিনী সরকারকে বাংলাদেশর উপর ব্যাবস্থা গ্রহণে বাধ্য করতে হবে।দায়িত্ব অবশ্যই অতীতের মতো ভারত সরকারকেই নিতে হবে। ভারত সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না ভারতের জাতীয় প্রতিশ্রুতির কথা। ভারতকে আরো মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ নাহলে তার কুফল ভারতেও পড়বে। হিন্দুত্ব বাদী ভারত সরকারের বাংলাদেশর হিন্দু নির্যাতনে নীরব দর্শক থাকা কি শোভনীয়?তাই সাধু সাবধান।
ইতি
বিজয় চক্রবর্তী।
সাধারন সম্পাদক,
অসম নাগরিক মঞ্চ। হোজাই।ফোন নং ৯৪০১২৪৪৫৬৪
কোন মন্তব্য নেই