Header Ads

নারকীয় হত্যাকাণ্ড বিচার হবেই মোমবাতি মিছিল ব্যর্থ হবে না

যারা হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, বলছেন বিচার পাওয়া যাবে না তাদের একটি ভুলে যাওয়া ঘটনা মনে করিয়ে দিই। 

২৯ শে এপ্রিল, ১৯৯৯। দিল্লীর মেহরৌলিতে ট্যামারিন্ড কোর্ট রেস্তোঁরাতে একটি পার্টি চলছিল। বীনা রমানির দেওয়া সেই পার্টিতে নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ৩০০ জন। মদের ফোয়ারা ছুটছিল। মডেল কাম বারটেন্ডার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেসিকা লাল ও সায়ন মুন্সি। হাই প্রোফাইল অনেকের সাথে পার্টিতে নিমন্ত্রিত ছিলেন হরিয়ানার কংগ্রেস নেতার ছেলে মনু শর্মা ও তার বন্ধুরা। 

বার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও মনু জেসিকার কাছে গিয়ে মদ পরিবেশন করতে বলায় জেসিকা দিতে অস্বীকার করেন। প্রথমে মনু তাকে ১০০০ টাকা টিপস দিতে গেলে জেসিকা সেটাও নিতে চাননি। রেগে গিয়ে মনু একটি রিভলবার বের করেন ও জেসিকার কপালে গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ জেসিকা পড়ে যান মাটিতে। মনু ও তার বন্ধুরা আতঙ্কিত ও নিস্তব্ধ রেস্তোঁরা ছেড়ে পালিয়ে যায়। জেসিকাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। 

এর পর শুরু হয় আসল কাহিনি। জেসিকার হয়ে হাই প্রোফাইল অপরাধীদের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াই শুরু করেন জেসিকার বোন সাবরিনা। ৩০০ আমন্ত্রিত লোকের মধ্যে একজনও এগিয়ে আসেন না সাক্ষী দিতে। সাবরিনা হাল ছাড়েননি। কয়েকজন সাক্ষী জোগাড় হয়। পুলিশি তদন্তে মনু শর্মাকে কাস্টডিতে নেওয়া হয়। মনু শুরুতে অপরাধ স্বীকারও করে নেন। তবু নেতার ছেলে তো! তদন্তের গতি থেমে যায় ধীরে ধীরে। সাক্ষীরা কেউ বিদেশে পালিয়ে যান, কেউ টাকা খেয়ে মুখ বন্ধ করে নেন, কাউকে প্রাণের হুমকি দেওয়া হয়। সাবরিনা বিচার চেয়ে একা সিস্টেমের সাথে লড়াই করতে থাকেন। 

চার্জশিট দাখিল হতেই লেগে যায় পাঁচ মাস। ২৩ শে নভেম্বর, ২০০০ সালে দিল্লী ট্রায়াল কোর্টে মনু শর্মা ও তার বন্ধু বিকাশ যাদব দোষী সাব্যাস্ত হন। কিন্তু সাক্ষীরা বিদেশে থাকার কারণে দিল্লী পুলিশ কেস সাজাতে পারেনি ঠিক করে। তাই দোষী ৯ জনকেই দিল্লী হাইকোর্ট মুক্ত করে দেয়। সবাই ভেবেছিলেন অন্য অনেক কেসের মত এটাও ক্লোজ হয়ে গেছে। মিছিলের মোমবাতিগুলো নিভতে শুরু করে।

কিন্তু অন্ধকারেও একটা আলো পাওয়া যায় ঠিক। এগিয়ে আসে নিউজ পোর্টাল তহলকা। তারা একটি স্টিং অপারেশন চালায়। এবং সায়ন মুন্সি সহ বাকীদের দিয়ে পুরো ঘটনাটির বিবৃতি রেকর্ড করে। বন্ধুরা, তখনও সোশ্যাল মিডিয়া আসেনি। দেশ জুড়ে চালানো হয় মেসেজ ক্যাম্পেন। আওয়াজ ওঠে - 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।

১৩ই মার্চ, ২০০৬ এ দিল্লী হাইকোর্টে একটি আবেদনের ভিত্তিতে জেসিকা লাল হত্যা মামলা আবার খোলা হয়। জনতা ও মিডিয়ার চাপে এটিকে ফাস্ট ট্র্যাকের আওতায় এনে ২৫ দিন ধরে টানা হিয়ারিং হয়। বিচার শেষে মনু শর্মাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। মনু সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন কিন্তু ১৯ শে এপ্রিল ২০১০ সালে সেখানেও তার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ বহাল রাখা হয়। বাকী অভিযুক্তদেরও জেল হয়। 

আমরা যারা মনে করি, আওয়াজ তুলে কী হবে, মোমবাতি মিছিলে লাভ কী, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' বললে শুনছে কে - মনে রাখবেন যতই তথ্যপ্রমাণ লোপাট হোক, সাক্ষী এগিয়ে না আসুক, রাজনৈতিক চাপ থাকুক - জনতার আওয়াজের শক্তি অনেক। আর মিডিয়া তথা সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি এতটাই, যাকে বিচারব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পারে না... পারবে না।

সুতরাং, হাল ছেড়ো না বন্ধু...

লেখা 
জয়াশিস ঘোষ    

(Collected)

Spread this inspiring write-up to bolster the morality of the protestors. Show our solidarity with them.

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.