Header Ads

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ২০৪ তম জন্মদিবস "আমরা বাঙালি" স্মৃতি তর্পণ




 নয়া ঠাহর ,শিলচর
২৬শে সেপ্টেম্বর২০২৪, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৪তম জন্মদিনে তাঁর (বিদ্যাসাগরের) জন্মদিবসকে বাঙলার ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারী-বেসরকারী সব স্কুলে পালনের জন্যে বিকাশ ভবনে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি দিল ‘আমরা বাঙালী’ সংগঠন। 
     ‘আমরা বাঙালী’—র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব তপোময় বিশ্বাস বলেন, শিক্ষক মানেই ‘সমাজগুরু’। অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেখান যিনি, তিনিই গুরু পদবাচ্য। সেই অর্থে অশিক্ষা-কুশিক্ষাতে জর্জরিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে আলোর দিশা দেখানো, সমাজকে শিক্ষার আলো প্রদর্শন করানো—  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ই প্রকৃত “আদর্শ শিক্ষক”। 
 ২৬শে সেপ্টেম্বর— মহান বাঙালী মণীষী, শিক্ষা জগতের পুরোধা, সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরে’র ২০৪ তম জন্মদিবস। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালী বিদ্বেষী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির উদাসীনতায় ‘বিদ্যাসাগর’-র মতন মণীষীকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন থেকে ব্রাত্য থাকতে হয়েছে। 
   তাঁর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’—এর দ্বারাই আপনার আমার মতন সমগ্র বাঙালী জাতির অক্ষরজ্ঞানের সূত্রপাত।উনি ছিলেন একজন প্রকৃত সুপণ্ডিত ও সমাজসংস্কারক। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সমাজ যখন এক ঘনান্ধকার সংকটময় মূহুর্তের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছিল, অশিক্ষা-কুশিক্ষা-কুসংস্কারের বেড়াজাল সমাজকে ডগমা-তে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল, নারীশিক্ষাকে সমাজবিরোধীর সমান আখ্যা দিয়ে সমাজের নৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল, গোঁড়া হিন্দুত্ব আগ্রাসনে নারীরা যখন শিক্ষার আলো-জল-বাতাস থেকে বঞ্চিত হয়ে শোষিত হচ্ছিল, সেই  সময়েই তাদের ব্যথা অনুধাবন করে বিদ্যাসাগর সমাজের গোঁড়াদের প্রবল বাঁধা পেড়িয়ে নারী শিক্ষার উদ্যোগে ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের সহায়তায় দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়— যা আজ তিলোত্তমার বুকে ‘বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত, তা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি গ্রামেগঞ্জে বাঙলার দিক-বিদিকে নারীশিক্ষার প্রসার-প্রচারে উদ্যোগী হয়ে সহস্রাধিক (২৮৮টি) বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত করেন। শিক্ষার আলো প্রবেশ করিয়ে নারী সমাজকে অন্ধকারের গহ্বর থেকে বের করে আলোর দিশা দেখানোর সূচনা বিন্দু তাঁর হাতেই সম্পাদিত। স্বামীহারা অল্পবয়সী বিধবাদের চরম বেদনাময় জীবন থেকে উদ্ধার করতে তিনি একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘বিধবাবিবাহে’র প্রচলন ও বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ রদ করতে সচেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাংলাভাষার সরলীকরণ সহ নানান নবজাগরণমূলক কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন। মানবতার সেবায় নিজের সর্বস্ব অকৃপণ হস্তে দান করে গেছেন বীরসিংহের সিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তথা বিদ্যাসাগর, যিনি ‘দয়ারসাগর’ নামেও পরিচিত। 
শিক্ষাজগতে বিদ্যাসাগরের অবদান— 
(ক) প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার—১৮৫৩ সালে বিদ্যাসাগর একটি প্রতিবেদনে ‘গণশিক্ষা’কে আবশ্যিক হিসেবে উল্লেখ করেন।জেলায় জেলায় বিদ্যালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। 

(খ) বর্ণপরিচয় রচনা সহ বাংলা ভাষার ও বাংলা ব্যাকারণের সরলীকরণ ঘটিয়েছেন। 

(গ) নারীশিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ। ২৮৮টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। 

(ঘ) পাঠ্যপুস্তক রচনা— বর্ণপরিচয় (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ),বোধদয়,কথামালা প্রভৃতি।

(ঙ) এছাড়াও বিধবাবিবাহ আইন পাস, বাল্যবিবাহ-বহুবিবাহ রদ সহ একাধিক সমাজসংস্কারক মূলক কর্মকান্ড সম্পাদিত করেছেন তিনি। 
 এককথায় বিদ্যাসাগর-ই প্রকৃত ‘আদর্শ শিক্ষক’।
     এই মহান মণীষীর প্রতি যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে ও তাঁর কর্মধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘শোষণমুক্ত সমাজ’ গঠনে ছাত্র সমাজকে সচেষ্ট করতে সকল বাঙালীর উচিত এক স্বরে আবাজ তোলা— 
 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরে’র জন্মদিবস ২৬শে সেপ্টেম্বর’কে বাঙলার ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারী-বেসরকারী সব বিদ্যালয়গুলিতে আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে। 
    আশা রাখছি, অত্যন্ত সংবেদনশীল মনোভাবের সঙ্গে, যুক্তিপূর্ণ দৃষ্টিতে ‘আমরা বাঙালী’ সংগঠনের এই আবেদনটি প্রত্যেক বাঙালীর কাছে ও রাজ্য সরকারের কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে। এদিনের কর্মসূচিতে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় যুগ্ম সচিব হিতাংশু ব্যানার্জী,কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব উজ্জ্বল ঘোষ, সমতট সাংগঠনিক সচিব জয়ন্ত দাশ, অরূপ মজুমদার, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সচিব বাপী পাল, মিন্টু বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় প্রকাশন সচিব প্রণতি পাল, সুবোধ কর সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ

     নিবেদক—
উজ্জ্বল ঘোষ 
কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব, আমরা বাঙালী

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.