Header Ads

পাপ মুক্ত সমাজ গড়া কি সম্ভব?





সমাজকে পাপাচার,ভ্রষ্টাচার, দূরাচার মুক্ত করতে‘দফা এক, দাবী এক— পশুবৃত্তি উৎসাহকারী অশ্লীল সিনেমা, ব্লু ফ্লিম, মদ, গাঁজা, মাদকদ্রব্য সহ অপরাধের সমস্ত উৎস নিপাত যাক’ ।

লেখক— তপোময় বিশ্বাস


‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ফাঁসী চাই’....রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল , ডাক্তারবাবুদের কর্মবিরতি হাজারো মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু মুখে ঠেলে ফেললেও তাঁরা অনড় ! ১টার বদলে ১০০০ টা প্রাণ যায় যাক তবু প্রতিবাদের জন্য কর্মবিরতি দরকার (যদিও প্রাইভেটে তাদের আনাগোনা চলছে)...জনরোষে দিশাহীন শাসকদলের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দাবী— আর.জি.কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়া ‘অভয়া’ -র নৃশংসতম ধর্ষণ ও নির্মমতম খুনের বিচার , দোষীদের সাজা চাই। এরই মধ্যে আলিমুদ্দিনের পাকা চুলের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দফা এক দাবী এক— মুখ্যমন্ত্রীর (মমতার) পদত্যাগ’ নতুন ভাবে উজ্জিবিত করছে তরুণ কমরেডদের।পশ্চিমবঙ্গের এমন এক প্রান্ত নেই যেখানে ‘রাত দখলে’র পথে মেয়েরা রাস্তায় নামেনি। রাজ্য-দেশের সীমা অতিক্রম করে মোমবাতি মিছিলে পা মিলিয়েছে দূরদেশের প্রবাসীরাও ... হাজারো হাজারো নারী পুরুষের কণ্ঠে দোষীদের শাস্তির দাবীতে স্লোগান মুখরিত ধ্বনিতে রোজই দুবেলা কম্পমান রাজপথ।মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া (?) মমতা ব্যানার্জীর অনুচিত মন্তব্য,দেহ উদ্ধারের সারাদিন অতিবাহিত হওয়ার পর রাত ১১.৪৫এ পুলিশে জানানো কেন?ধর্ষণ-খুনকে আত্মহত্যা বলার মতন বিতর্কিত মন্তব্যের পরেও আর.জি.করের প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যালকে ঘিরে ‘সেল্টার’ দেওয়া রাজনীতি বিরোধী দলগুলো বেঁচে থাকার ‘ইস্যু’ পাইয়ে দিয়েছে। এই হল মোটামুটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। 
    অবশ্যই বিচার চাই, শাস্তি চাই, সেই সঙ্গে চাই পৃথিবী থেকে এই ‘রোগ’ নির্মুল হোক , তা না হলে কোনদিন এই ধরনের পাপাচার, ভ্রষ্টাচার, ব্যাভিচার, দূর্বলের ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে না , হতে পারে না। সমগ্র সমাজ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলাতে হবে। মনবিজ্ঞান অনুসারেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে—(ডারউইনের বিবর্তনবাদানুসারে পশু থেকেই উন্নত জীব-মানুষে আমরা উন্নীত) প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনেই সহজাত ভোগ বৃত্তি, পশুবৃত্তি রয়েছে। আমাদের উচিত এই ভোগবৃত্তি, পশুবৃত্তি গুলোকে উৎসাহ দিতে পারে এমন অশ্লীল সাহিত্য-শিল্প-সিনেমা-নীল ছবির মতন জিনিসকে কঠোরভাবে কড়া হাতে নিষিদ্ধ করা। মদ,ড্রাগস,গাজার মতন মাদককেও নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু তাই নয় স্কুলের পাঠ্যসূচীতে ছোট থেকেই ‘নৈতিক শিক্ষা’র ব্যবস্থা করে শিশুমনে নীতিবাদের প্রবেশ করাতে হবে। ধান্দাবাজ,সুবিধাবাদী উন্মাদ তথাকথিত ‘বিপ্লবী’দের জন্য আমার এই বক্তব্য নয়, যাঁরা সত্যিকারের সমাজের পরিবর্তন চান,যাঁরা রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে ওই তরুণীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ন্যায্য বিচারের দাবীতে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে আমার বার্তা এগিয়ে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ ; শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ ; বিবেকানন্দ , নেতাজী সুভাষের রচনাবলী এগুলি তৎকালীন তরুণদের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছে দেশপ্রেম, মাতৃ ভক্তি, নারী জাতিকে মায়ের সমান মর্যাদা। আর আজকের বিপরীতধর্মী নগ্ন যৌনতা মার্কা অশ্লীল সাহিত্য, সিনেমা ;  নেট দুনিয়ায় ব্লু ফ্লিমের অবাধ বিচরণ মানুষকে কি নৈতিক অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না? সুশীল সমাজ ভাবুন। সমাজে নৈতিক দৃঢ়তার প্রতিষ্ঠাই সমাজকে এইসব পাপাচার ব্যাভিচার নির্যাতন মুক্ত করবে। পাশাপাশি একটি কথা গোটা বাঙলার মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাই ... শুধু অভয়া নয়- পার্কস্ট্রিট, হাস খালি, কামদুনি,বিগত বাম আমলের বানতলা,তারকেশ্বর,বিরাটী,অনিতা দেওয়ান, সাঁই বাড়ি, বিজন সেতু,ছোটো আঙারিয়া সহ যত গণহত্যা ও অবিচার মহিলাদের ওপর সংগঠিত হয়েছে তার বিচার চাই। বাম আমলের অনেক দোষীই হয়ত মারা গেছে তাও সত্যিটা সামনে আসুক। আর.জি.কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে বেশকিছু রাজনৈতিক দল। তারা জনমানসকে  প্রভাবিত করে ‘বাংলাদেশ মডেল’ -এ বাঙলার মসনদ দখল করতে চাইছে। আর সি.পি.এমের ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কোন নৈতিক অধিকার আছে কি? বিরোধীদের মা-বোন-স্ত্রী কে ক্যাডার লেলিয়ে ধর্ষণ করানোর রাজনীতি বাঙলায় প্রবেশ করিয়েছে এই মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। বর্তমান শাসক দলের নেত্রীও তদন্তের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি। তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে গেছে, আমরা আশা রাখছি কেন্দ্রীয় সংস্থা অবিলম্বে তদন্ত শেষ করে দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেবে ও প্রত্যেক নারীর ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা দেওয়ার যথাযথ পদক্ষেপ চাই।চিকিৎসার মতন মৌলিক পরিষেবা বন্ধ রাখা অমানবিক।প্রতিবাদ হোক, তবে দয়াকরে চিকিৎসা বন্ধ করে অমানবিকতার দৃষ্টান্ত রাখবেন না প্রতিবাদী ডাক্তারবাবুদের কাছে আমার এই অনুরোধটি রইল।হাসপাতাল গুলিতে দালাল রাজও বন্ধ করে প্রত্যেকে যাতে সুস্থ পরিবেশ ও সঠিক চিকিৎসা পায় সরকারকে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।আপনারাই বিচার করুন মমতা ব্যানার্জীর সরকার পরিবর্তনেই কি ধর্ষণ নির্যাতন বন্ধ করে দেবে? আর মমতাকে সরিয়ে সিপিএম কে আনলে কি পাব? আবার গণহত্যা,গণধর্ষণ? বিজেপি ক্ষমতাসীন রাজ্যগুলির নমুনা কে না জানে?? উত্তরপ্রদেশে ধর্ষিতা থানায় অভিযোগ করতে গেলে সেই থানার অফিসারেরা তাকে গণধর্ষণ করে,উন্নাও,হাতরাস কাউরই অজানা নয়। তাই ভাবুন শুধু সরকার বদলেই ধর্ষণ-ব্যাভিচার-অন্যায় বন্ধ হবে না।সর্বাঙ্গীণ শোষণমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসুন সুশীল সমাজ, আসুন ছাত্র-যুব-মহিলা সমাজ। আমরা ঐক্যবদ্ধ হই,আওয়াজ উঠুক ‘দফা এক— দাবী এক— নিম্নরুচিসম্পন্ন অশ্লীল সিনেমা সাহিত্য, মদ গাঁজা মাদকদ্রব্য সহ অপরাধের সমস্ত উৎস নিপাত যাক’ ।

লেখক— তপোময় বিশ্বাস 
          বারাসাত, কলকাতা—১২৪
         (৮২৪০৭০৪৫৫৮)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.