বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের দাবী বি ডি এফের
নয়া ঠাহর ,শিলচর
বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি তথা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে, হামলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে হিন্দুদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাল বিডিএফ।
হাসিনা সরকারের পতনের পরই কিছু দুস্কৃতী বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা,নির্যাতন চালায়,যা নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাঙালি হিন্দুদের জানমালের নিরাপত্তা সহ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
আজ বিডিএফ কার্যালয়ে এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে তাঁরা চাননা যে এবার আর বাংলাদেশের কোন সংখ্যালঘু নাগরিক শরনার্থী হয়ে আসাম বা ভারতে পালিয়ে আসেন, কারণ ১৯৪৭ বা ১৯৭১ এর পরিস্থিতির সাথে বর্তমান পরিস্থিতি তুলনীয় নয়। কিন্তু তারজন্য বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু কথায় নয় কাজে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন বর্তমান সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনিস ইতিমধ্যে হিন্দু সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসেছেন তাঁদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছেন। বলেছেন তাঁকে সময় দেবার জন্য। যারা এইধরনের ঘৃন্য ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে তাঁর এই বক্তব্যকে তাঁরা বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এই প্রতিশ্রুতি কতটা পালিত হয় সে ব্যাপারে তাঁরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। এবং শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয় ,যে সব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাঁর সমীক্ষা করে সরকারি তরফে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও দেবার দাবি এদিন জানিয়েছেন তিনি।
প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে বাংলাদেশের এবারের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে । কিন্তু ভারতের বিজেপি সরকারকে এই বিষয়ে আজ অব্দি তেমন মুখ খুলতে দেখা যায়নি। এমনকি এদেশের হিন্দু সংগঠনের ভূমিকাও আশাপ্রদ নয়। প্রদীপ বাবু বলেন যে ১৯৭১এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের হিন্দুদের স্বার্থে যে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা সে তুলনায় একেবারেই নগন্য। তিনি বলেন যে সরকার হিন্দুদের রক্ষাকর্তা বলে নিজেদের জাহির করে তারা বাঙালি হিন্দুদের নিয়ে চরম উদাসীন! তবে কি বিজেপি সরকার বাঙালি হিন্দুদের হিন্দু বলে মনে করেনা ? তিনি বলেন এই প্রশ্ন অবশ্যই তাদের মনে আসছে এবং তারা বিজেপি সরকারের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর দাবি করছেন।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরো বলেন যে বহুদিন পর এবার এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হিন্দুরা একজোট হয়েছেন, মিটিং মিছিল করেছেন। তিনি বলেন এটা খুবই শুভ লক্ষণ। তিনি এজন্য সবাইকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে যদি এই ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে অবশ্যই দুস্কৃতীকারীদের দুরভিসন্ধিকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে। প্রদীপ বাবু বলেন যে বরাকের বাসিন্দারা হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে সবাই মানসিক ভাবে তাঁদের সাথে রয়েছেন। তিনি বলেন প্রতিরোধ গড়ে তোলার এটাই উপযুক্ত সময়।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বলেছেন যে হাসিনা সরকার পতনের পর উদ্ভূত বিশৃঙ্খলাময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যারা হিন্দুদের উপর হামলা,নির্যাতন চালিয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক এবং সেজন্য তিনি হিন্দু ভাই বোনদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে যারা এইসব ঘটিয়েছে সবাইকে আইনের আওতায় আনার ব্যাবস্থা করা হবে। প্রায় একই কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনিস।
জয়দীপ বলেন যে তাঁরা কিন্তু সংখ্যালঘুদের উপর হামলা , নির্যাতন, লুটপাটের কথা অস্বীকার করেননি। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আশাব্যঞ্জক বিষয়। জয়দীপ বলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে তাঁরা উভয়ের বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি
বলেন যে একদম পাশের একটি প্রদেশের বাসিন্দা হিসেবে বরাকের অনেকেরই বাংলাদেশের হিন্দুদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে, অনেকের পরিবারের সদস্যরা ঐদেশে রয়েছেন। তাই কার্যক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা কতটা প্রতিফলিত হয় সে ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।
জয়দীপ বলেন যে তাঁরা চাননা যে একজন সংখ্যালঘূকেও যাতে শরণার্থী হিসেবে আসামে আশ্রয় নিন। এবং সেই নিশ্চিতি এবং তারজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অবশ্যই নিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই