নরসিংপুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন বি ডি এফের
নরসিংপুর স্বর্ণলক্ষী হাইস্কুলের সামনে ছাত্র প্রহারে জড়িত দুস্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে - বিডিএফ।
গত ১৫ ই আগস্ট নরসিংপুর স্বর্ণলক্ষী হাইস্কুলের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুল৷ গেটের সামনে উপস্থিত আলি আহমেদ তাঁর পুরোনো সহপাঠী একটি হিন্দু মেয়ের সাথে গল্প করছিল। সেই সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কিছু দুস্কৃতী ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছেলেটিকে নাম জিজ্ঞেস করে এবং এরপরই মুসলমান হয়ে হিন্দু মেয়ের সাথে কেন কথা বলছে এই অভিযোগ তুলে তাঁকে খুটিতে বেঁধে নৃশংসভাবে প্রহার করে। ঘটনাটি এতটাই নৃশংস ছিল যে মারের চোটে ছেলেটির নাক, মুখ,কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে এরপর তাদের তরফে ছেলেটির বিরুদ্ধে সোনাই থানায় দুটি এজাহার দায়ের করা হয়,যার ভিত্তিতে ছেলেটিকে বর্তমানে সোনাই থানায় আটক করে রাখা হয়েছে। আজ বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর এক প্রতিনিধি দল কাজিডহর স্থিত আলি আহমেদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পরিবারবর্গের সাথে কথা বলেন এবং অবিলম্বে ছেলেটিকে জামিনে মুক্তি দেবার ও এই কান্ডে জড়িত দুস্কৃতীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হন।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বিডিএফ আহ্বায়ক আইনুল হক মজুমদার বলেন যে মেয়েটি পুলিশের কাছে লিখিত বয়ানে জানিয়েছে যে ছেলেটির সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক ছিলনা এবং সেদিন তাঁরা স্বাভাবিক গল্প করছিল। আইনুল হক মজুমদার বলেন যে এরপর আর এই নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তিনি বলেন ছেলেটির পরিবার খুবই গরীব, কৃষিকাজ করে কোনক্রমে তাঁরা দিন গুজরান করেন। কাজেই মিথ্যা সন্দেহে তাকে এভাবে প্রহার করার ব্যাপারটি দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন মহামান্য আদালতের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তাই তিনি আশাবাদী যে মেয়েটির বয়ানের ভিত্তিতে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আলি আহমেদকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন যে শোনা যাচ্ছে বজরং দলের দুস্কৃতীরা এই ঘটনার সাথে জড়িত এবং এটা অস্বাভাবিক কিছুই নয় কারণ তাঁরা এর আগেও এই উপত্যকায় এই ধরনের ঘৃন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে পুলিশ, প্রশাসনের কাছে এদিন সুবিচারের আর্জি জানিয়েছেন।
এদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বরাক ডেমোক্রেটিক যুবফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন যে একটি মুসলিম ছেলে তার হিন্দু সহপাঠীর সাথে কথা বলতেই পারে,এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এটাকে ইস্যু করে আলি আহমেদকে যেধরনের নৃশংস প্রহার করা হয়েছে তা দেখে তাঁরা হতবাক ও স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যেভাবে এই উপত্যকায় এভাবে বারবার আইন হাতে তুলে নিচ্ছে তাঁতে মনে হচ্ছে উপত্যকায় পুলিশ বা প্রশাসনের কোন ভুমিকাই নেই, আইন শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। তিনি বলেন এটি অবাক হবার মতো ব্যাপার যে বিনাদোষে ছেলেটিকে থানায় আটক করে রাখা হয়েছে অথচ যারা এভাবে আইন হাতে তুলে নিল তাদের একজনকেও আজ অব্দি গ্রেফতার করা হয়নি। কল্পার্ণব বলেন এইসব হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিনা কারণে চমক সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা, বরাকের হিন্দু মুসলমান ঐক্যে ফাটল ধরানো এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত হানা যা উপত্যকার কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, গনতান্ত্রিক নাগরিক মেনে নিতে পারেন না। তিনি বলেন ইদানিং শিলচর শহরেও ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তাই এই ট্রাডিশন অবিলম্বে বন্ধ হতে হবে এবং এরজন্য প্রশাসনকে অবশ্যই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। কল্পার্ণব বলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে তাঁরা স্বর্ণলক্ষী স্কুলের এই ঘটানাকে ধিক্কার জানাচ্ছেন এবং প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন যে এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত অবিলম্বে প্রত্যেককে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
অন্যথা এই নিয়ে আগামীতে তাঁরা প্রতিবাদী কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই