Header Ads

অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ লস্কর প্রয়াত

অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ লস্কর 

ড: কে এম বাহারুল ইসলাম  

আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্বনামধন্য অধ্যাপক ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ আলহাজ জহির উদ্দিন আহমেদ লস্কর সাহবের গত ২৯ জুন ২০২৪ তারিখে পরলোক গমনের সংবাদ পেয়ে আমরা মর্মাহত। আগামীতে গৌহাটি গেলে উনার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, সেই সুযোগ আর হলো না।  

মরহুম অধ্যাপক জহির উদ্দিন সাহেবের জন্ম হাইলাকান্দি জেলার লালা টাউন সংলগ্ন জয়কৃষ্ণপুর এলাকার সকালাপার গ্রামে। ১৯৫৭ সালে লালা লালা এইচ এস অ্যান্ড এম পি স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা (ম্যাট্রিকুলেশন) শেষ করার পর, তিনি গুরুচরণ কলেজ শিলচরে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক (আইএসসি) শেষ করেন। তারপর তিনি আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জালুকবাড়ি, গুয়াহাটিতে যান এবং সেখান থেকে ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে প্রথম বিভাগে স্নাতক (বিই) ডিগ্রি লাভ করেন। সেবছরই তিনি জন্য শিলচর পলিটেকনিকে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৬৫ সালে প্রথমে জোড়হাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এবং এরপর আবার গুয়াহাটিতে আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই প্রভাষক নিযুক্ত হন। পরবর্তী কালে তিনি ব্যাংককের মর্যাদাপূর্ণ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ১৯৭১ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

অধ্যাপনা এবং গবেষণার জগতে প্রচুর খ্যাতি লাভ করে, অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের আলোক ছড়িয়ে ‘জহির স্যার’ পয়লা জানুয়ারি ২০০১ সালে আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যেই অবসর গ্রহণের আগে তিনি সেই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। চাকুরী থেকে অবসর নিলেও উনার অধ্যাপনার কাজে ছেদ পড়েনি। অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে তিনি গৌহাটির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং স্কলারস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট-এ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। গুয়াহাটিতে তাঁর বর্তমান বাসস্থান ছিল সিক্সমাইল এলাকায়। তিনি রেখে গেছেন উনার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, জামাই, পুত্রবধূ, নাতি এবং নাতনী। উনার সুযোগ্য পুত্র ড: সুলায়েম মুসাদ্দিক লস্কর বর্তমানে দিল্লির নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত হয়ে অধ্যাপনার জগতে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন।  

এত বছর পরও স্যারের কথা মনে পড়লেই আমি নস্টালজিক। শিক্ষক জীবনের শুরুতে অনেক বছর আগে আমি তাকে তার আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কোয়ার্টারে দেখা করতে গিয়েছিলাম, কোন যোগাযোগ না করেই। সেই সময় আমি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি কিন্তু আমার আম্মা আমাকে শিলচরে ফিরে এসে আরইসি/এনআইটি’তে যোগ দিতে বলছিলেন। আমি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি মূলধারার ইংরেজি বিভাগ ছেড়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যোগ দিতে খুবই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। আমি স্যার’কে খুব একটা চিনতাম না, একমাত্র এক বাল্য স্মৃতি ছিল যে আমাদের পাশের গ্রাম মধুরবন্দে উনার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমরা স্বপরিবারে আমি উপস্থিত ছিলাম, তখন আমি হয়ত ক্লাস ফাইভ বা সিক্স এ। সেই ছোট্ট স্মৃতি নিয়েই আমি উনার কাছে পৌঁছেছিলাম – কি করব, শিলচর ফিরে যাব কি না।   

উনি আমাকে অনেক স্নেহ করে, আপ্যায়ন করে আমার মনের দোটানার কথা শুনে পরামর্শ দিলেন আমি যেন আম্মার ইচ্ছাকেই সম্মান করি, বিশেষ করে যখন আমার আব্বা আর তখন জীবিত নেই। আল্লাহর ইচ্ছা হলে পরে কেরিয়ার গড়ার আরো অনেক সুযোগ আসবে, এখন যেন মায়ের পাশেই ফিরে যাই। আজ উনার বলা সেই কথাগুলি স্মরণ করি। মনে অপার শান্তি নিয়ে সেদিনই আমি শিলচরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সেই দিনগুলিতে গৌহাটিতে আমার পরিচিতদের মধ্যে আমাদের বরাক উপত্যকার শিক্ষা জগতের খুব কমই সেরকম কোন সিনিয়র ব্যক্তি ছিলেন যিনি আমাকে পরামর্শ দিতে পারতেন। উনি নিজের বিদেশে উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতার কথা আমাকে বলে অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন। আর আমার সৌভাগ্য যে উনি যে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন, সেই এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (ব্যাংকক)এ আমি কয়েক বছর পরে পোস্ট-ডক্টরেট করতে যাই। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেও যে সেই কারিগরী প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করা যায় মরহুম জহির উদ্দিন আহমেদ স্যার না বললে আমি কোনদিন স্বপ্নেও সেটা ভাবতে পারতাম না। 

আমি স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তাঁর অত্যান্ত আন্তরিক স্নেহবৎসল ও যত্নশীল পাঠ্যদানে বহু শিক্ষার্থী ব্যক্তি জীবনে আলোকিত মানুষ হওয়ার পাশাপাশি তারা সমাজে আলো ছড়াচ্ছেন। পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করি তাকে বেহেশত নসিব করুন। 

__________
লেখক উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট-এ পাবলিক পলিসি এণ্ড গভর্নমেন্ট এর প্রধান অধ্যাপক তথা লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের ভিজিটিং প্রফেসর ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.