Header Ads

নেতাজি কি ফিরে আসবেন?

*স্বামী সোমেশ্বরানন্দজী মহারাজের কলমে..* 🙏
-----------------------------------------------

 *অলোক দত্ত* ●আপনি কী মনে করেন নেতাজি ফিরে আসবেন? আজ বড়ই দরকার স্বামীজিকেও। তারাই পারবেন এ সমাজকে উদ্ধার করতে।
●●●চাইনা নেতাজি স্বামীজিকে। আজ দরকার লাখ লাখ মিনি-সুভাষচন্দ্র মিনি-বিবেকানন্দ। আর কতকাল অন্যের উপর নির্ভর করে থাকবো? আমরা কি বেঁচে আছি না টিঁকে রয়েছি? স্বামীজি বলেছিলেনঃ চাইনা রাম যুধিষ্ঠির অশোক আকবরের মতো রাজা; প্রজারঞ্জক রাজার দ্বারা পালিত রক্ষিত হলে প্রজারা কখনো স্বশাসন শেখেনা। স্বামীজির দৃষ্টিতে উন্নয়ন মানে স্বাবলম্বী হওয়া আর এর মাধ্যম সশক্তিকরণ। উন্নত রাজশক্তি নয়, তিনি চেয়েছেন লোকশক্তির জাগরণ। 
 
স্বামীজি বলেছেন, ভারতীয় যুবকেরা দলে দলে জাপানে যাক। কেন? 
 প্রায় সব দেশেই বড় বড় নেতার আবির্ভাব হয়েছে। আমেরিকায় ওয়াশিংটন, লিংকন। বৃটেনে চার্চিল, থ্যাচার। রাশিয়ায় লেনিন, গর্বাচভ। মেয়ার ইজরায়েলে। দঃ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা। মিশরে নাসের। ফ্রান্সে দ্যগল। বর্মায় উনু। কিন্তু জাপানে বিশেষ কোনো বড় নেতার নাম শোনা যায়নি। ঐ দেশে অসংখ্য ছোট ছোট বড়নেতা। সেখানে প্রতিটি পুরুষ প্রত্যেক নারীই দেশনেতা। প্রতি ব্যক্তিই মনে করেন যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তার কর্তব্য। এই কর্মযজ্ঞে তাই সবাই আহুতি দিয়ে চলেছেন নিরন্তর। 
 আর আমরা মনে করি দেশের উন্নয়ন করা মন্ত্রীর কর্তব্য, দেশরক্ষা সৈনিকের দায়িত্ব, শিক্ষা প্রসারে শিক্ষক, সম্পদ তৈরি শিল্পপতির কাজ, রাস্তা পরিষ্কার মিউনিসিপ্যালিটির ডিউটি ....। তাই এখানে রাজশক্তি জোরালো হয়, লোকশক্তি নয়। নেতাজি স্বামীজির মন্ত্র কিন্তু তা ছিলনা। দু'জনই বেরিয়ে পড়েছিলেন "একলা চলো রে" সঙ্গীত নিয়ে। 
 দু'জনেই দেশবাসীকে মুক্ত করতে চেয়েছেন পরনির্ভরতা থেকে। দু'জনেই ভারতের আত্মাকে আবিষ্কার করতে চেয়েছেন। বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন স্বদেশকে। দু'জনেই খালি হাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন চোখে স্বপ্ন নিয়ে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে বরণ করেছিলেন। কিভাবে বেঁচে থাকতে হয় তা শিখিয়েছিলেন। 

ধর্মকে তারা জীবনমুখী করেছিলেন, জীবনকে করে তুলেছিলেন আধ্যাত্মিক। উপনিষদের বাণী (পরা ও অপরা, দুই বিদ্যাই শেখা দরকার)-কে মূর্ত রূপ দিয়েছেন তারা। তিব্বতে অনেক আধ্যাত্মিক মনীষীর আবির্ভাব হলেও আজ সেই দেশ পরাধীন কারণ তার ধর্ম জীবনমুখী ছিলনা। বিপরীত দিকে সভ্যতার শিখরে উঠেও গ্রীস হারিয়ে গেল ধর্মকে গুরুত্ব না দেওয়ায়। 
 আমরা কেউ কুকুর ভালবাসি, কেউ ঈশ্বর। কিন্তু মানুষকে হয়তো ততটা ভালবাসিনা। আর তাই কি আমরা পিছিয়ে? নিজের বাড়িটিকে ভালবাসি, কিন্তু দেশকে? ঘরের জানালা দিয়ে আকাশ দেখি, কিন্তু উড়ে গিয়ে আকাশ ছুঁতে চাইনা।
 অসাধারণ হতে গেলে দায়িত্ব নিতে হয়, ভিড়'কে অনুকরণ না করে মৌলিকতার প্রকাশ দরকার, পথ তৈরি করতে হয়। আর এটাই দেখিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। শুধু নিজের মধ্যে নয়, অন্যের ক্ষেত্রেও। নিরক্ষর লাটূ, ম্যাট্রিক-ফেল বাবুরাম, স্কুলের ছাত্র হরি রাখাল নিরঞ্জন, ডিগ্রিহীন শরৎ কালীপ্রসাদ...। সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার কাহিনী। ইতিহাস রচয়িতা সৃষ্টির ইতিহাস। জীবনের তাত্পর্যই তো এটিঃ সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠা।

দেশ-গঠনের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন নেতাজি স্বামীজি। কীভাবে? তিনটি পদক্ষেপের কথা বলে গেলেন স্বামীজিঃ
১●তোমরা কি প্রাণে প্রাণে বুঝছো যে কোটি কোটি দেব ও ঋষির বংশধর পশুর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে? এই ভাবনা কি তোমাদের অস্থির করে তুলেছে? তোমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে? 
২●এই দুর্দশা প্রতিকার করার কোনো উপায় বের করেছ কি? বৃথাবাক্যে শক্তিক্ষয় না করে কোনো কার্যকর পথ তৈরি করেছ? 
৩●পর্বতপ্রমাণ বাধাবিঘ্ন তুচ্ছ করে কাজ করতে প্রস্তুত আছ?

এই হলো স্বামীজি নেতাজির পথ। তাঁরা কবে আসবেন এ নিয়ে বৃথা চিন্তা না করে আমরা কি নিজেকে এভাবে গড়ে তুলতে পারি?

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.