দক্ষিণের মাতৃ মন্দির ওরোভিল জাত পাত ধর্ম নেই বিশ্বের ৫০ টি দেশের মানুষ একসঙ্গে বাস করে
" অরোভিল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের এক পরিকল্পিত শহর, যেখানে সামান্য কিছু নিয়মেই আপনার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে "
************************************************
ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে একাধিক শহর ও গ্রাম। তার মধ্যে আজ আমরা আপনাদের সামনে এমনই একটি শহরের পরিচয় তুলে ধরব যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে অন্যান্য শহরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আসুন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনেনিই বিশেষ সেই শহরের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।যা অন্যান্য শহর থেকে একে দিয়েছে একটি বিশেষ পরিচয়।
অরোভিল, তামিলনাড়ু, ভারত ::--
আজকের দিনে একথা ভাবলে অবাক হতে হয়।আমাদের দেশের একমাত্র এই শহরটিতে কয়েকটি শর্ত মানলেই থাকা-খাওয়ার জন্য খরচ করতে হয় না। কিছু শর্ত পুরোপুরি পালন করতে পারলে আপনার থাকা খাওয়ার কোন মূল্য প্রদান করতে হবে না।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের অরোভিল শহরটিতে গিয়ে থাকা এবং খাওয়ার জন্য এক পয়সাও দিতে হয় না। শুধুমাত্র তাই নয় এখানে নেই কোনও সরকার। কিন্তু এই শহরের একটি নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। এই শহরে থাকতে হলে সেই শর্ত আপনাকে মানতেই হবে।
চেন্নাই থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার ও পুদুচেরি থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ছোট্ট একটি শহর অরোভিল। ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বৈষম্য ও বৈচিত্রময় ভারতের এক অদ্ভুত শহর এই অরোভিল। এই শহরে ধর্ম, বর্ণ, অর্থ, জাতপাত,ভাষার কোনও ভেদাভেদ নেই। এমনকি এখানে কোনও সরকারও নেই। তবুও শহরে কোনও বিশৃঙ্খলা নেই। শহরের বাসিন্দারা নিয়ম কানুন মেনেই তাঁদের জীবন চালান। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এ যেন এক রূপকথার নগরী।
বইয়ের পাতায় এধরনের শহরের কথা কখনও পড়ে থাকলেও বাস্তবেও যে এরকম হতে পারে তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হল এই অরোভিল। শহরটি 'সিটি অফ ডন' এবং 'সান অফ ডন' নামেও পরিচিত। সম্পূর্ণ বৈষম্যহীন এক সমাজ স্থাপনের উদ্দেশ্যেই এই শহরের গোড়াপত্তন করা হয়েছিল।
১৯৬৮ সালে এই শহরের পত্তন করেছিলেন মিরা আলফাসা। সাধারণ বাঙালির কাছে তিনি পরিচিত শ্রীমা নামে। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ২৪ নভেম্বর পণ্ডিচেরিতে প্রতিষ্ঠিত হয় 'শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম'। তবে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠার এক মাসের মধ্যেই আশ্রমের যাবতীয় ভার মীরা আলফাসা তথা শ্রীমায়ের হাতে দিয়ে নিজে অন্তরালে চলে যান তাঁর গুরু ঋষি অরবিন্দ।
অরোভিল শহরটিকে বলা হয় ইউনিভার্সাল সিটি। যার অর্থ এখানে যে কেউ এসে বসতি স্থাপন করতে পারেন। তথ্য অনুসারে, প্রায় ৫০ টি দেশের মানুষ এখানে বসবাস করেন। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। শহরটিতে থাকার জন্য শুধুমাত্র একটাই শর্ত আপনাকে এখানকার সেবক হতে হবে। মেনে চলতে হবে এখানকার নিজস্ব কিছু রীতিনীতি।
এ কথা শুনলে আপনারা অবাক হবেন যে অরোভিলে সরকার বা ধর্মের কোনও ধারণা নেই। এই শহর প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সমাবেশ দ্বারা পরিচালিত হয়। সদস্যরা সকলে ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন জাতির মানুষ, ভিন্ন ধর্মের মানুষ। তা সত্ত্বেও এঁদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ বা বিশৃঙ্খলা নেই। এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাসের বাইরে সত্যের পথ অনুসরণে বিশ্বাসী এই শহরের প্রত্যেকটি মানুষ। শহরের ঠিক মাঝখানে একটি মন্দির আছে, যাকে বলা হয় " মাতৃমন্দির "। এখানে নির্জনে যোগসাধনা এবং আধ্যাত্মিক চর্চা করা যায়। শহরের মাঝখানে অবস্থিত এই অংশটিকে মাতৃমন্দির বলা হলেও এটি নির্দিষ্ট কোন ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অধিকারভুক্ত নয়।
অরোভিলে নগদ অর্থ প্রদানের চল নেই, এখানে কাগজের মুদ্রার বিনিময় করা হয়। কিন্তু বহিরাগতদের সঙ্গে অর্থ বিনিময় করা হয়। প্রায় ৩৫ বছর আগে এই শহরে একটি আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্রও চালু হয়েছিল। এই কেন্দ্রটিকে এখানকার মানুষ ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। এখানকার বাসিন্দারা এই ব্যাঙ্কে অফলাইন এবং অনলাইন উভয়ভাবেই তাঁদের টাকা জমা দিয়ে থাকেন।
অরোভিলের নিজস্ব স্থাপত্য এবং শহর পরিকল্পনা ব্যুরো রয়েছে। এখানে রয়েছে সংরক্ষণাগার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অডিটোরিয়াম, ৪০টি শিল্প, রেস্তোঁরা, খামার, গেস্টহাউস ইত্যাদি। নিজস্ব স্কুল থেকে হাসপাতাল এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও এখানে উপস্থিত। শুধু তাই নয় ছোট্ট এই শহরটির বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে একটি কম্পিউটার, একটি ই-মেইল নেটওয়ার্ক।
#জ্ঞানওবিজ্ঞান #জ্ঞানওবিজ্ঞানফেসবুকপেজ
কোন মন্তব্য নেই