২০২৪ লোকসভা ফল দেশকে ভাবাচ্ছে
২০২৪ সের লোকসভার সাধারন নির্বাচন ও একটি পর্যালোচনা:-
যা হবার ছিল তাই হয়েছে। বিজেপি নেতা মাননীয় নরেন্দ্র মোদি ক্রমান্বয়ে তৃতীয় বার বিশ্বের বৃহত ও সফল গণতান্ত্রিক দেশ ভারত বর্ষের প্রধান মন্ত্রী পদে ০৯ জুন' ২৪সে আসিন হয়েছেন। ৪৪ দিনের নির্বাচনি যুদ্ধের পর মোদির ৪০০ পার দুরের কথা সরকার গঠনের সংখ্যা গরিষ্ঠতা ম্যাজিক সংখ্যায়ও প্রাপ্ত হন নি। সরকার গঠনের ম্যাজিক সংখ্যায় না পৌঁছেও বিজেপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে পর নির্ভরশীল সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন আগের সরকার পর নির্ভরশীল ছিল না যদিও জুট সরকার ছিল।
এবারের নির্বাচনে মোদির আমিত্ব ও অমিত শাহর অহংকারের পরাজয় হয়েছ - জয় হয়েছে বিজেপি তথা NDA এর। এই নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির অশ্ব মেদ যজ্ঞের ঘোড়া দিল্লী থেকে জুর কদমে দৌড় শুরু করে প্রথম বাঁধার সম্মুখীন হয় রাম রাজ্য খ্যাত হিন্দি বলয়ের অন্যতম প্রদেশ যুগী রাজ্য উত্তর প্রদেশে। সেখান থেকে অশ্ব মেদের ঘোড়া খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পশ্চিম বঙ্গে প্রবেশ করলো সত্যি কিন্তু দিদির কৌশলী চালে আরও কিছু সৈন্য হারিয়ে প্রভু জগন্নাথ এর দেশ কলিঙ্গ-উড়িষ্যায় গিয়ে প্রভু জগন্নাথের কৃপায়, অভাবিত ভাবে উড়িষ্যার অবিসংবাদী নেতা বীজু পট্টনায়েক কে পরাজিত করে কিছু সৈন্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়ে সন্মান রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে । অন্যদিকে মা কামাখ্যার আশীর্বাদে আসাম রাজনীতির চাণক্য ড: হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দাবার চালে কিছু আসন বৃদ্ধি হয়।এবারের জন্য দিল্লীশ্বরের সিংহাসন কব্জায় রাখতে নরেন্দ্র মোদিকে সহায় করছে দক্ষিণের কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং বিজেপির বন্ধু রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ। দক্ষিণের রাজ্য গুলো থেকে বিজেপি অকল্পনীয় ভাবে ২৭ টি আসন সংগ্রহ করতে পারায় এবং উড়িষ্যায় ১৯ টি আসন পাওয়ায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন INDIA এবারও সরকার গঠন করতে ব্যার্থ হলো।কংগ্রেস/ INDIA কে দারুন ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছ মোদি রাজ্য গুজরাট, সিন্ধিয়া গড় মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় হিমাচল, উত্তর খণ্ড। নির্বাচনের ফলাফল আবারও প্রমাণ করলো মধ্য ভরতের হিন্দি বলয় বিজেপির গড়। এই গড় ভাঙতে না পারলে কংগ্রেসের দিল্লী দখল দিবা স্বপ্ন হয়েই থাকবে। বিরোধীদের পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকলে গড় ভাঙ্গা কঠিন। শুধু ধর্মীয় সংখ্যা লঘু সৈন্য নিয়ে এই গড় ভাঙ্গা সম্ভব নয়, গড় ভাঙতে চাই সংখ্যা গুরু সৈন্যও।গড় ভাঙতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নির্ভীক, নিরলস কঠিন পরিশ্রম- ভারত জুড়ো যাত্রা, ভারত জুড়ো ন্যায় যাত্রায় কংগ্রেসকে অক্সিজেন সরবরাহ করে সম্মান জনক স্থান উপহার দিয়েছে, রাহুল গান্ধীর প্রতি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাও অনেকটা বাড়িয়েছে। কিন্তু মধ্য ভারত/ হিন্দি বলয়ে বিজেপিকে আটকাতে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবারও কংগ্রেস ব্যার্থ হয়েছে।
ফলে১৮ তম লোক সভার নিবার্চনের স্পষ্ট ইঙ্গিত বিজেপির মোহ হিন্দি বলয় থেকে ক্রমান্বয়ে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে - উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমেও পদ্ম ফুল ফুটছে। কিন্তু কেন এই মোহ? নরেন্দ্র মোদির রাজত্বে ত গরীব আরও গরীব হচ্ছে, গগন চুম্বী হয়েছে ধনীর সম্পদ। ২০% ভারত বাসীর নিকট ৯০% সম্পদের স্তূপকৃত হওয়ার বিপরীতে ৮০% ভারত বাসীর নিকট মাত্র ১০% সম্পদ অবশিষ্ট আছে। ভোকাতুর দেশের তালিকায় লজ্জ্বা জনক ১১১ তম স্থানে উন্নিত হয়ে দরিদ্র ভারতে অবনমিত হয়েছে। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিষের দাম অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে প্রতিদিন এভারেস্ট জয়ের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। কর্ম সংস্থাপনের সমস্ত পথ বন্ধ- খোলা দিল্লী দূর অস্ত কারন সরকারি নীতি। বাড়ছে বেকারত্ব। সরকারি নীতির জন্য কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু বিক্রয় মূল্য লাভ জনক না হওয়ায় এক দিকে কৃষকরা পথে নেমে আন্দোলনে করছে , অনাহারে মরছে,অন্য দিকে কৃষি কাজ ছেড়ে কৃষক সন্তানরাও কাজের ধান্ধায়, পেট পূরণের তাগিদে শহরে পাড়ি দিচ্ছে। শহরের বেকাররা চোঁখে সরষে ফুল দেখছে - ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আত্ম হত্যা দিন দিন বাড়ছে। যুব প্রজন্ম বাঁচার তাগিদে ড্রাগস মাফিয়াদের খপ্পরে পড়ে হাবু ডুবু খাচ্ছে - ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা - ত্রাহি মাং মধু সুধন। কে দেবে বাঁচার আশ্বাস ? তবু কেন মানুষ বিজেপি কে আঁকড়ে ধরছে? নরেন্দ্র মোদিকেই কেন মুস্কিল আসান বলে ভাবছে? কিসের অভাব- নীতি, নেতা না আত্ম বিশ্বাসের? অন্তর্নিহিত কারণ কি কেবলই হিন্দুত্ব? না কি বিরোধীর অতি মাত্রায় ধর্মীয় সংখ্যা লঘু প্রীতি?
আমি আসামের হিন্দু মুসলামান মিশ্রিত একটি গ্রামে থাকি। সারা ভারতের জন বিন্যাস সম্পর্কে আমি তত ওয়াকিবহাল নই। কিন্তু আসামের জন বিন্যাস আমার নখ দর্পণে। আসামে বিজেপির উত্থান আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। "ধর্ম জাতির জন্য আফিঙ "মার্ক্সীয় এই ত্তত্বের বাস্তব চিত্র আমি আসামে দেখেছি।
২০০৬ সনে সুপ্রীম কোর্টের IMDT আইন খারিজের রায়ে আসামে UDF নামে ধর্মীয় সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। জন্ম দাতা আসামের সুগন্ধী সম্রাট, আন্তর্জাতিক আগর ব্যবসায়ী, কট্টর ইসলাম পন্থী নেতা মওলানা বদর উদ্দিন আজমল। UDF দলের উত্থানে প্রায় ৭০%মুসিলম ভোট কংগ্রেস ,AGP ও বাম পন্থী দের ঝুলি থেকে UDF এর ঝুলিতে চলে যায়।কংগ্রেস ,AGP র বাঘা বাঘা নেতারা ২০০৬ সনের আসামের বিধান সভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট বঞ্চিত হয়ে পরাজয় বরন করেন। অনুরূপ ভাবে ২০০৮ সনের লোকসভার সাধারন নির্বাচনে মুসলিম ভোট বঞ্চিত হয়ে শিলচরের হেভি ওয়েট কংগ্রেস নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব (রানা বাবু) ও হেরে জান।
২০১১ সনের আসাম বিধান সভার সাধারন নির্বাচনে আসাম কংগ্রেস কৌশল বদল করে মুসলিম ভোটের উপর নির্ভর কমিয়ে হিন্দু ভোটের উপর জুর দেয়। বিশেষ নজর দেয় বাঙালি শরণার্থীর নাগরিকত্বের উপর। ফল হাতে নাতে পায়। হিন্দু বাঙালি প্রধান সমষ্টিতে কংগ্রেসের জয়ের ব্যবধান (Margin) বেড়ে যায় ।১৯৫২ সনের পর কংগ্রেস সর্বাধিক হিন্দু সমষ্টির আসনে জয় লাভ করে ক্রমান্বয়ে তৃতীয় বারের জন্য প্রায়ত তরুণ গগৈ সরকার গঠন করেন।
আসাম বুঝে যায় হিন্দু ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক দল বা এক প্রার্থীকে ভোট দিলে ধর্মীয় সংখ্যা লঘু ভোট নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হতে পারবে না।২০১১ র বিধান সভার সাধারন নির্বাচন আসাম বিজেপিকে নতুন দিশা দেখালো। ২০১৬ আসাম বিধান সভার সাধারন নির্বাচনে ২০১১র কংগ্রেস ফর্মুলাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি আসামের ক্ষমতা প্রথম বার দখল করতে সক্ষম হয়।মূখ্যমন্ত্রী পদ অলংকৃত করেন প্রাক্তন AASU,AGP নেতা সর্বানন্দ সানোয়াল।
হিন্দু ভোট একত্রি করণ, মুসিলম ভোটের বিভাজন ও বদর উদ্দিন জু জু ছিলো বিজেপির জয়ের কৌশল। বিজেপিতে এই কৌশলের উদ্ভাবক ও প্রয়োগ কর্তা ড: হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যাঁর রাজনীতির হাতে খড়ি কংগ্রেসে। ২০১৬র পর আসাম বিজেপিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।২০১৯ সে এই ফর্মুলাকেই কাজে লাগিয়ে পশ্চিম বঙ্গ বিজেপি লোকসভায় আশাতিথ সাফল্য পায়। অনুরূপ ভাবে ২০২১র বিধান সভার সাধারন নির্বাচনেও পশ্চিম বঙ্গে বিজেপি আশাতিথ সাফল্য পায়। দিদির চাতুরালি ও সাংগঠনিক শক্তির কাছে হার মেনে পশ্চিম বঙ্গে বিজেপিকে বিধান সভার স্বীকৃত বিরোধী দলের মর্যাদা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় যদিও বামেদের হিন্দু ভোট দিদিকে আটকাতে রামের ও মুসলিম ভোট রামকে প্রতিরোধ করতে দিদির ঝুলিতে চলে যাওয়ায় পশ্চিম বঙ্গ বাম মুক্ত বিধান সভা পায়।
২০২৪ সের লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল গুলো পুরোনো পথেই দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করে। কার ঝুলিতে কি ঢুকলো ৪ঠা জুন তা প্রকাশ পেলো। ধর্মীয় সংখ্যা লঘু ভোট বিশেষ করে মুসলিম ভোট যেখানেই ঐক্য বদ্ধ হয়েছে সেখানেই কংগ্রেস/ INDIA জুট বিজেপি/ NDA জুট কে হারিয়ে জয় হাসিল করেছে। অন্য দিকে নীতি আদর্শের তোয়াক্কা না করে যেখানে হিন্দু ভোট ঐক্য বদ্ধ হয়েছ সেখানেই বিজেপি/NDA জয়ী হয়েছে- যেসব রাজ্যে ধর্মীয় সংখ্যা লঘু বিশেষ করে মুসলিম ভোট নিয়ন্ত্রক নয় সে সব রাজ্যে বিজেপির ঝড়ে কংগ্রেস /INDIA ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। যেমন, গুজরাট,মধ্যপ্রদেশ , ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, উত্তরাখণ্ড , দিল্লী, হিমাচল প্রদেশ ত্রিপুরা, অরুনাচল প্রদেশ। এই রাজ্য গুলোর কোনও সমষ্টিতেই ধর্মীয় সংখ্যা লঘু ভোট বিশেষ করে মুসলিম ভোট জয় পরাজয়ের নির্ণায়ক ভূমিকায় নেই। অন্যদিকে কেরল পশ্চিম বঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রে জয় পরাজয় নির্ভর করে ধর্মীয় সংখ্যা লঘু বিশেষ করে মুসলিম ভোটের উপর।
কেরলে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৫%হিন্দু,৪৫% ধর্মীয় সংখ্যা লঘু (খ্রিষ্টান ও মুসলিম)। বাম কংগ্রেস পাল্টা পাল্টি করে শাসনচালায়। কেরলে এবার বাম কপোকাত হলেও INDIA ২০ মধ্যে ১৮ পেয়েছে,১৮ র ১৬ ই কংগ্রেস। বিজেপি এবার প্রথম ০১, পেলো, মুসিলম লীগ চির চারিত ভাবে ০১ পেয়েছ।
পশ্চিমবঙ্গ প্রায়১০(দশ )কোটি লোকের বাসস্থান যার প্রায় ৩ (তিন)কোটি ইসলাম ধর্মী। ইসলামী ভোট রামের ভয়ে ঐক্য বদ্ধ ভাবে, বাম কংগ্রেস নির্বিশেষে দিদির ঝুলিকে স্ফীত করায় দিদি ৪২ সে ২৯। তৃণমূলের নিজস্ব হিন্দু ভোটের সাথে সার্বিক মুসলিম ভোট যোগ হওয়ায় দিদির রমরমা। ৪২ এর মধ্যে বিজেপি ১২,কংগ্রেস ০১। পরোক্ষ ভাবে INDIA ৩০। যার জন্য অধীর রঞ্জন চৌধুরীও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে ধর্মীয় মেরুকনের জন্য তাঁর পরাজয়।
জাত পাতের রাজ্য উত্তর প্রদেশে প্রায় ১৮কোটি হিন্দুর বিপরীতে প্রায় ৪ কোটি মুসলীম। মুসলীম ভোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার ঝুলিতে পড়ে উত্তর প্রদেশ তার হয় যায়। মুসলীম ভোটের বলে বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী, এবং সমাজ বাদীর মোলায়েম, আখিলও মুখ্য মন্ত্রী হয়েছিলেন।এবার ঐক্যবদ্ধ মুসলিম ভোট সমাজবাদী অখিলেশের ঝুলিতে পড়ায় যোগী পিছনে।
পশ্চিম বঙ্গে রাজনীতির দাবা খেলায় দিদির জুড়ি মেলা ভার - নীতিশ বাবুও তাঁর কাছে শিশু। পশ্চিম বঙ্গে হিন্দি ভাষী ভোট একটি বড় ফেক্টর। বিজেপির প্রতি দুর্বলতা থাকা এই ভোটকে নিজের ঝুলিতে পুরার জন্য তিনি বহির্বঙ্গের তিন অবাঙালি গ্ল্যামারকে হাওলাত এনে পশ্চিম বঙ্গের তিনটি হিন্দি ভাষী প্রধান সমষ্টিতে দাড় করিয়ে বাজিমাত করেছেন। এই তিন জন হলেন হিন্দি সিনেমার বিহারী বাবু, বিজেপির প্রক্তন নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শত্রুঘ্ন সিনহা, ক্রিকেটার ইউছুফ পাঠান ও কীর্তি আজাদ। আসানশোলে শত্রুঘ্ন হারিয়েছেন বিজেপি নেতা আলুওলিয়াকে, বহরম পুরে ইউছুফ পাঠান পরাজিত করেছেন ১৭ তম লোক সভায় কংগ্রেস দলের নেতা, পশ্চিম বঙ্গ কংগ্রেসে সভাপতি, কট্টর মমতা বিরোধী, তুখোড় সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে । দূর্গা পুরে বিজেপির তাব্বড় নেতা, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দীলিপ ঘোষকে হারিয়েছেন ক্রিকেট তারকা কীর্তি আজাদ। এই সমষ্টি গুলোতে বামপন্থিরা লজ্জ্বা জনক ভাবে হেরেছে। এই ভাবে রাজ্য ভিত্তিক, সমষ্টি ভিত্তিক লোক সভা নিবার্চনের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে নীতি, আদর্শ, উন্নয়ন বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতবর্ষের নির্বাচনি ফলাফলের কারক নয়, কারক ধর্মীয় মেরু করণ- ধর্মীয় ভয়- ভীতির অপ প্রচার জনিত উন্মাদনা।
অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম দলের নেতা ,মূখ্যমন্ত্রী শ্রী চন্দ্রবাবু নাইডু সাদে কি NDA এর ঘটক হওয়া সত্বেও মুসলিমদের সংরক্ষণ চেয়েছেন!? কারণ ,অন্ধ্র - তেলেঙ্গানার মুঠ জনসংখ্যার ১২% ধর্মীয় সংখ্যা লঘু, তাঁদের ভোট নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারণ করে। বহু দিন পর সংখ্যা লঘু ভোট চন্দ্র বাবুর ঝুলিতে পড়ায় তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের ক্রেঞ্চ হতে পেরেছেন। দক্ষিণভারতে বাংলা দেশি, পাকিস্তানি, ঘুছ পেটিয়া শব্দ নেই , নেই হিন্দু মুসলামন শব্দও।
আসামের নির্বাচনি ফলাফল ধর্মীয় মেরুকরণের উলংগ উদাহরণ। আসাম রাজনীতির চাণক্য মূখ্যমন্ত্রী ড: হিমন্ত বিশ্বশর্মা ক্ষুদ্র রাজনীতির স্বার্থে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আসামে নির্বাচন কমিশনের দ্বারা সীমানা পুনরনির্ধারণ করিয়ে আসামের ১৪ টা লোকসভা সমষ্টির মুসলিম ভোট যথাসম্ভব তিনটি সমষ্টিতে জমা করিয়ে পরোক্ষ ভাবে হিন্দুর আসাম এবং মুসলামনের আসমে বিভক্ত করেছেন। সমষ্টি তিনটি- ধুবড়ি, নগাঁও ও করিমগঞ্জ। ধুবড়ির প্রায় ২৭ লাখ ভোটের মধ্যে মাত্র ৭লাখ হিন্দু ভোট। করিমগঞ্জ লোকসভা সমষ্টিতে প্রায় ১৬ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৬ লাখ হিন্দু, নগাঁও লোক সভা সমষ্টিতে ১৬+ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬লাখ হিন্দু ভোট। এই তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে ধুবরী ও নগাঁও ৮০% মুসলীম ভোট কংগ্রেস পেয়েছে, বাকী ২0% AIUDF এবং অন্যদের ঝুলিতে পড়েছে। করিমগঞ্জে মুসলিম ভোটের কিছু সংখ্যক মাইমাল উন্নয়ন পরিষদের সৌজন্যে বিজেপির ঝুলিতে জমা পড়ায় ঐক্য বদ্ধ হিন্দু ভোট খানিকটা স্ফীত হোয়ায় বিজেপি ভাগ্যের জুরে জিতেছে।আসামের প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে ভোটের ধর্মীয় মেরুকরণের অভূতপূর্ব দৃশ্য নজরে আসে। এই প্রবণতা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ তথা কংগ্রেসের জন্য অশনি সংকেত।।কংগ্রেস জেনেবুঝে হো'ক বা অজানিতে হোক বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ক্রমস ধর্মীয় সংখ্যা লঘুর রাজনৈতীক দলে পরিণত হচ্ছে।
প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ভারত বর্ষে প্রায় ২২ কোটি ইসলাম ধর্মী লোক। বিজেপি বিরোধী (কংগ্রেস , বাম, সমাজবাদী তকমা ধারী ও অন্যান্য) রাজনৈতিক দলগুলোর শ্যানচক্ষু ২২কৌটির উপর। ২০২৪ সের লোকসভা নির্বাচনে INDIA নামের ছাতার নিচে বিরোধীরা অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় ২২ কোটির বিভাজন রোধ অনেকটা সম্ভব হয়েছে। অন্য দিকে বিজেপি ২২ কোটির জু জু দেখিয়ে, কল্পিত ইসলামী আগ্রাসন প্রতিরোধার্থে ১১৮ কোটিকে আবেগিক করে এক তরফা বিরোধী পক্ষকে গোল দিয়েই চলছে। গোল প্রতিরোধার্থে বিরোধী শিবির বিশেষ করে কংগ্রেস ২২ কোটিকে দিয়ে রক্ষণভাগ গড়ে তুলতে চাইছে। ১১৮কোটির দাপ lটে সারা মাঠের নেতৃত্বে বিজেপি।এটাই বিজেপির সাফল্যের চাবিকাঠি।
উত্তর প্রদেশে যোগীর বোল্ডেজার রাজ ও মোদিশাহের জাতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে জনগণের রায় ও মহারাষ্ট্রে মোদিশাহ র গণতন্ত্র হত্যা ও অপরের ঘর ভাঙার বিরুদ্ধে গণ রায়ের সহায়ক ঐক্যবদ্ধ মুসলিম ভোটে এগিয়ে INDIA পিছিয়ে NDA।
আসমে বিজেপি ভীতি মুসলিম সম্প্রদায়কে আজমল ছেড়ে কংগ্রেসে পুনঃপ্রবেশ করিয়েছে একই ভাবে উত্তর প্রদেশেও মায়াবতীর মায়া কাটিয়ে অখিলেশের চাইকেলে উঠতে বাধ্য করেছে। পশ্চিম বঙ্গে দিদির রথে চড়াই নিরাপদ ভেবে তাঁরা বাম কংগ্রেসকে তালাক দিয়েছে। সংবিধান রক্ষা ছল মাত্র।
২০২৪ সের সাধারন নির্বাচনে বাঙালি হিন্দু ভোট আসাম, পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ছত্তিশগড় আদি প্রদেশে বিজেপির বিজয় রথকে রাজধানী দিল্লীর দিকে অনেক পথ এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বার বার তিনবারের পরেও যদি বিজেপি সরকারের বাঙালি বিরোধী নীতি, বাঙালি বঞ্চনা নীতি বন্ধ নাহয়, CAA র নীতিকে সহজ করে বাঙালির নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পথ সুগম ও সুনিশ্চিত করা নাহয়, বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দে'য়া নাহয়, আসামে খিলঞ্জিয়ার অজুহাতে হিন্দু বাঙালিকে বঞ্চনা করা বন্ধ নাহয়, আসামে বাঙালিরা অসমিয়ার সম মর্যাদা নাপায়, বাঙালিকে ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে আসাম সরকারের অঘোষিত নীতি বন্ধ নাহয়,CAA র মাধ্যমে, ডিটেনসন মুক্তি, তথা কথিত "D" ভোটার সমস্যা সমাধান করা না হয়, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ছত্তিশগড়, বিহার প্রভৃতি প্রদেশে মাধ্যমিক স্তর পর্য্যন্ত বাঙালিকে বাংলা মাধ্যমে পড়ার সুযোগ করে দেয়া নাহয় তাহলে বিজেপি,NDA বুঝে যাবে কত ধানে কত চাউল। বাঙালি কোনো দিনই কারুর FIXED DEPOSIT ছিলনা, থাকবেও না ।
তাই ফের কহ ভাই সাধু সাবধান।
ইতি
বিজয় চক্রবর্তী।
হোজাই।
ফোন নং ৯৪০১২৪৪৫৬৪
কোন মন্তব্য নেই