Header Ads

bijoy chakraborty. ১৯মে ভাষার অধিকার লড়াই, রক্ত ঝরেছিল ১১ প্রাণ

"১৯ শে মে শুধু একটি নস্টালজিয়া নয় 
১৯ শে মে রক্তে ভেসে যাওয়া কবিতার পঙক্তি নয়
এ এক অধিকারের কন্ঠস্বর।
ইতিহাসের কাল প্রহরী।"
সত্যিই১৯শে মে ইতিহাসের কাল প্রহরী, অধিকারের কন্ঠস্বর।
    মাতৃভাষায় কথা বলা, মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করা ভারতে সাংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। আসামে সেই অধিকার রক্ষার সংগ্রামের নাম ১৯শে মে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা-সেই ভাষায় কথা বলার, শিক্ষা গ্রহণ করার অধিকার থেকে আসামের বাঙালিকে বঞ্চিত করার তৎকালীন আসাম সরকারের কূটকৌশলের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষীর উপত্যকা বরাকে যে মরণপণ সংগ্রামের জন্ম হয়েছিল তার অন্তিম পরিণতি ১৯ শে মে, ১৯৬১।-কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদের আহবানে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার দাবিতে গণসত্যাগ্রহের দিন। মাতৃভাষা বাংলাকে কেড়ে নেবার বিরুদ্ধে বারকের সংগ্রামী জনতার কন্ঠস্বর রেল চলাচল বন্ধ করে ষড়যন্ত্রের অভিকেন্দ্র শিলং-দিল্লীতে পৌঁছে দেবার তাগিদে সূর্যদেবের ঘুম ভাঙার প্রাগ মূহর্ত থেকে গণ বন্যার প্লাবন বইছিল শিলচর রেলস্টেশনের দিকে - উদ্দেশ্য গান্ধীবাদী কায়দায় রেল অবরোধ, সত্যাগ্রহ। এই গান্ধীবাদী আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে সসস্ত্র পুলিশ ও সামরিক বাহিনীতে ছেয়ে গিয়েছিল সমগ্র শিলচর সহ রেলস্টেশন। বৈশাখে সূর্যদেবের প্রখর অগ্নি বর্ষণ ছিল যদিও সংগ্রামী বাঙালির সত্যাগ্রহ ছিল সম্পূর্ণগান্ধীবাদী। কিন্তু বাঁধ ভাঙা জনতার ধর্য্যচ্যুতি ঘটল তখনি যখন কাটিগড়া থেকে পুলিশ শান্তিপ্রিয় সত্যাগ্রহি কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে ট্রাকে করে তারাপুরের উপর দিয়ে থানায় নিয়ে যাচ্ছিল। ট্রাকে থাকা সত্যাগ্রহিগণ স্লোগান দিচ্ছিল, "জান দেব তবু জবান ছাড়বনা।" হাজারকণ্ঠে স্লোগান প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল স্টেশন চত্তরে। ধ্বনি প্রতি ধ্বনিতে কাঁপছিল সমগ্র শহর-কাঁপছিল সশস্ত্র বাহিনী। বেলা তখন দুটোর কাঁটা ছেড়েছে। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে কেঁপে উঠল রাজধানী শিলং। তাই, আসাম পুলিশের নেতৃত্বে আসাম রাইফেলে শান্তিপ্রিয়, নিরস্ত্র গান্ধীবাদী সত্যাগ্রহির উপর এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিছোড়তে আরম্ভ করল। ক্ষণিকের মধ্যেই শতশত আহত। আহতদের ১১জন বুলেটের আঘাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আবারো বুঝিয়ে দিল- বাঙালি প্রাণ,  "তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি, মা তোমার ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে প্রয়োজনে আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। "শহীদত্ব বরণ করা ১১ জনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠা কমলা ভট্টাচার্য- বিশ্বের প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ-বাংলা ভাষা মাতৃর অহঙ্কার। " যে ভাষায় নিতাই গৌরা আনলো দেশে ভক্তির ধারা।" সেই ভাষাকে ধরিত্রীর বুক থেকে মুছে ফেলার এত ষড়যন্ত্র কেন? কেন ভাষা রক্ষায় বার বার বাংলা মায়ের সন্তানকেই প্রাণ দিতে হচ্ছে?
  সেই অজস্র কেনর উত্তর খুঁজে যা পেলাম তা সংক্ষেপে
তুলে ধরলাম:--
  প্রথমেই আলোকপাত করছি আমাদের রাজ্য আসামে। আসামে বাংলাভাষা ও বাঙালি বিদ্বেষী বিষবৃক্ষ রূপন করেছিল আমেরিকার ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি পাদ্রী মাইলস ব্রণসন। কি ? চমকে উঠলেন ত!মাইলস ব্রণসন আসামে আধুনিক শিক্ষার পথিকৃৎ। তাঁকে অসমীয়া ও ইংরেজি শিক্ষার অগ্রদূত বল্লেও উত্যক্তি হবেনা। তবে কেন তাঁকেই আমি অভিযুক্ত করলাম। কৈফিয়ত দিচ্ছি।

   আসামে প্রথম ১৬২৬সনের ২৬ শে সেপ্টেম্বর দুই পর্তুগীজ মিশনারি কার্বেল ও কাছেলা বঙ্গের হুগলি থেকে জলপথে তিব্বত যাওয়ার পথে গৌহাটির হাজুতে পদার্পন করেছিলেন। তাঁদের এই আসা আসামে কোনো প্রভাব বা তাৎপর্য বহন করে না। ১৮৩৬ সনে ডঃ নাথান ব্রাউন ও তাঁর বন্ধু অলিভার কাটার সপরিবারে বার্মা থেকে আসামের সাদিয়ায় পদার্পন করেন। তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন একটি আস্ত ছাপা মেশিন (Printing Machine)। এই দুই জনই আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মিশনের পাদ্রী। তাঁদের আগমনের উদ্দেশ্য ছিল আসামে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার ও প্রসার করা। এইটি সত্য যে, তাঁরা আসামে খ্রীস্ট ধর্ম প্রচারের সাথে অসমীয়া ভাষা ও খামতি ভাষায় শিক্ষা প্রসারে মনোনিবেশ করেছিলেন কিন্তু খ্রিস্টধর্ম প্রচারের স্বার্থে। তাঁরা আসামের সদিয়ায় থাকা কালিন আরও একজন আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি তাঁর বন্ধু থমাস জেকবকে সঙ্গে নিয়ে খ্রীস্ট ধর্ম প্রচার হেতু বার্মা থেকে সদিয়ায় এসেছিলেন। তিনিই মাইলস ব্রণসন্স।
   শাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে বলা ভালো শোষণের পথকে আরও সুগম করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ
 সরকার তখন কলকাতার পরিবর্তে আসামের প্রশাসন আসাম থেকে পরিচশলনার জন্য অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বহু সংখ্যক কেরানি কলকাতা থেকে আসামে এনেছিল। তাঁদের অধিকাংশই ছিল বাংলা ভাষী। ইংরেজ আসামের প্রশাসনিক ভাষা ১৮৩৬ সনে বাংলায় প্রচলন করেছিল কারন বাংলা ভাষা তখন সকলের কাছেই বোধগম্য ছিল।১৮৩৬ সনের পূর্বে আসামের সরকারি ভাষা ছিল পার্সি।
     ইংরেজ অধিক সংখ্যক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাম থেকে সৃষ্টির জন্য সরকারি উদ্যোগে বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়ও খুলেছিল। ইংরেজ সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মাইলস ব্রণসন্স এর নেতৃত্বে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তৎকালীন আসামের এক শ্রেণীর নবযুবক আন্দোলনে নেমেছিল। মাইলস তাঁদের কর্ণকুহরে বিষ ঢেলে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে প্রশাসনের বাঙালি কর্মকর্তাগণের কুমন্ত্রনায়ই ইংরেজ আসামে প্রশাসনের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম বাংলা করেছে। সুকৌশলে যে বিষ মাইলস সেদিন একশ্রেণীর অসমীয়ার কর্ণকুহরে ঢেলে ছিলেন সে বিষ এর বিষক্রিয়া আজও শেষ হয় নি। কিন্তু, অদূর অতীতের ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখাযায় কোনো বাঙালি নয় বরঞ্চ দুই উচ্ছপদ মর্য্যদার ইংরেজ আমলা আসামে বাংলা মাধ্যম চালু করার সুপারিশ করেছিলেন। একজন তৎকালীন আসামের শিক্ষা সচিব রবিনসন ও অন্যজন রাজস্ব বিভাগের সচিব জোন্স কিল। অপর দিকে আসামে শিক্ষার মাধ্যম বাংলার পরিবর্তে
অসমীয়া করার যে দাবিপত্র ইংরেজ সরকারের কাছে
প্রেরণ করা হয়েছিলো সেটির অন্যতম স্বাক্ষরকারীতৎকালীন নগাঁও দুইজন খ্যাত নামা উকিল জানকী নাথ সেন ও রাম লোচন সেন।
[  অন্যদিকে অসমীয়া ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার দাবিতে যে দাবিপত্রটি অরুনুদয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল সেই দাবিপত্রেও যোরহাটের স্বরূপ চন্দ্র ঘোষ দেয়ান ও মদন মোহন ঘোষ দেয়ান নামের দুই প্রখ্যাত বাঙালি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই সত্যকে চেপে রাখার জন্যই আজও আসামে বাংলাভাষা ও বাঙালিকে অসমীয়া ভাষা ও অসমীয়া জাতির শত্রু বলে মনে করে উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদের প্রভুত্ব বাদী গুষ্ঠি। মাইলস কেন বাংলা ভাষা ও বাঙালির প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে নিরাপরাধী বাঙালিকে অসমীয়ার চক্ষুশূল করেছিলেন? আমার মতে সহজ সরল অতিথি বৎসল অসমীয়ার মধ্যে খ্রীস্ট ধর্ম প্রচার এবং প্রসারের পথ প্রসস্থ করতে তিনি বাঙালি জাতিকে অন্তরায় বলে মনে করেছিলেন। কারন, আসামের অনেক অনেক বছর আগেই খ্রীস্ট ধর্মীয় ধর্ম প্রচারক বাংলায় পদার্পন করলেও জাতপাতের বেড়াজালে আবদ্ধ বাঙালি কিন্তু চৈতন্য চেতনায় উদ্বুদ্ধ থাকায় বাঙালি সম্প্রদায়কে খ্রীস্ট ধর্মে রূপান্তরিত করা তেমন সম্ভবপর হয় নি। শুধু মাত্র উচ্চ বর্গের, উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে খানিকটা প্রভাব বিস্তার হয়েছিল। তাতেও বাঁধসেধেছিল রাজামোহনের ব্রহ্ম সমাজ। হয়ত মাইলস ভেবেছিলেন অসমীয়া সমাজকে বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রভাব মুক্ত করতে না পারলে আসামেও খ্রীস্ট ধর্ম প্রচার ও প্রসার কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর জানা উচিত ছিল যে চৈতন্য সমসাময়িক নব বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক মহাপুরুষ শ্রীশ্রী শঙ্করদেবের একশরণ নাম ধর্মের প্রভাবে এক শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর অসমীয়া হিন্দু সমাজ। যেখানে অন্য
 ধর্মের সূচও ফুটানো কঠিন ছিল। হলও তাই। মাইলস মাত্র কেওট সম্প্রদায়ের একজনকে খ্রীস্ট ধর্মে দীক্ষিত করে পাদ্রী বানাতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রোথিত বিষবৃক্ষের বিষা। এখনও ফলছে। এই বিষ ফলেই আক্রান্ত হয়েছিল অসম জাতীয় মহাসভা।
তাইত, ইংরেজের কূটচালে বশীভূত হয়ে দেশের অঙ্গচ্ছেদ করিয়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতার মাসখানেক পরই মাইলস ব্রণসন্স প্রোথিত বিষবৃক্ষের ফল খেকোরা গৌহাটি, গোয়ালপাড়া আদি অঞ্চলে বাঙালি নির্যাতন শুরু করেছিল। নেতৃত্বে অসম জাতীয় মহাসভা। এই সংগঠনের সচিব ছিলেন আসামের অগ্নিকবি অম্বিকা গিরি রায়চৌধুরী। স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামে বাঙালি নির্যাতনের সেই শুরু আজও থামেনি। বিভিন্ন অজুহাতে এই সংগঠনের নবরূপের অনুজরা আজও বাঙালি নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তখনও সরাকরের প্রচ্ছন্ন মদত ছিল এখনো আছে। সরকারের রঙ বদল হয় কিন্তু বাঙালির দূর্ভোগের অন্ত পড়েনা। অসম জাতীয় মহাসভার পরবর্তী প্রজন্ম সারা আসাম ছাত্র সংস্থা, (AASU), আসাম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ (AJYCP), অবশ্যই সদ্য ভুমিষ্ট বীর লাচিত সেনার উশৃংখল বাহিনী ও অন্যান্য সমগোত্রীয় সংগঠন।
   স্বাধীন ভারতের আসামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী পদে
স্বাভাবিক ভাবেই অসিন হয়েছিলেন লোকপ্রিয়
গোপীনাথ বরদলৈ। তিনি পরাধীন ভারতেরও আসামের
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সৌজন্যে। রাজ্যপাল পদে আসীন ছিলেন ইংরেজ আসামের গবর্নর এন, আলী আকবর হায়দারি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই গোপীনাথ বরদলৈ সগর্বে ঘোষণা করলেন যে অসমীয়াই হবে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম। প্রমাদ গুনল অনা অসমীয়া সম্প্রদায়, বিশেষ করে বাঙালি জাতি। মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ের বক্তব্য পাকাপোক্ত রূপ নেয় রাজ্যপাল হায়দারির আসাম বিধানসভার প্রথম উদ্বোধনী ভাষনে। তিনি বলেছিলেন স্থানীয় অসমীয়ারাই এখন তাঁদের বাড়ির প্রভু, (মালিক)। এই সরকার তাঁদের প্রতি পূর্ণ দায়বদ্ধ ও দায়িত্বশীল। বাঙালিদের আর কোনো ক্ষমতা নেই, চাইলেও তাঁরা (অসমীয়ার) উপর কোনো কিছু চাপাতে পারবে না-পাহাড় এবং উপত্যকা নিয়ে গঠিত আসাম বাসীর উপর। নেতাজীর সৌজন্যে আসামের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়া লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ সরকারের মনোভাবই বুঝিয়ে দিয়েছিল আগামী দিনগুলোতে বাঙালির কপালে কি ঝুটবে!!!! 
  ১৯৪৮ সনেই সরকারের মানিসকতা বুঝতে পেরই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের "একই বৃন্তের দুটি কুসুম হিন্দু মুসলামন" এর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একটি "কুসুম" বাঙালি মুসলমান ভাইরা ১৯৫১ সনের জনগণনায় মাতৃভাষা অসমীয়া লিখিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৩১ সনের ২৯% অসমীয়া জনসংখ্যা ১৯৫১ সনে ৫৬% হয়। আসামে অসমীয়া জন সংখ্যার এই বৃদ্ধি হার দেখে জনগণনার তৎকালীন মহানির্দেশক এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধিরহারকে ইঁদুরের জন্মহারকেও হার মানাবে বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি
  ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় কেন স্বাধীন ভারতে রাতারাতি ভাষিক অসমীয়ায় রূপান্তরিত হয়েগেলেন সে বিষয়ে মতভেদ আছ। করো মতে তাঁরা মুসলিম লীগের উত্তরসূরী ছিলেন তাই বাঙালি হিন্দুর সাথে এক সারিতে দাঁড়ানো তাঁদের কাছে গুনাহু ছিল। কারো মতে পিঠ বাঁচাতে, কারো মতে অসমীয়া সেজে অসমীয়া জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী কংগ্রেস সরকার থেকে অধিক লাভান্বিত হওয়ার চেষ্ঠ
     আসাম সাহিত্য সাভা ও আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের ভূমিকা:-
     ১৯৫৫/১৯৫৬ সনে আসাম সাহিত্য সভা তাদের বাৎসরিক অধিবেশনে আসামের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম একমাত্র অসমীয়া হতে হবে বলে প্রস্তাব গ্রহণ করে আসাম সরকারকে উক্ত প্রস্তাব কার্যকরি করতে দাবি জানায়। অনুরূপ ভাবে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ১৯৫৯সনে অসমীয়া ভাষাকে আসামের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করতে আসাম সরকারকে প্রস্তাব প্রেরণ করে। কংগ্রেসের প্রস্তাব পেয়ে আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা প্রস্তাবটি অনা অসমীয়া সম্প্রদায় থেকে আসলে ভালো হত বলে মন্তব্য করেছিলেন যদিও দিল্লীর সবুজ সঙ্কেতে তাঁর সরকার প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত করতে ১৯৬০/১৯৬১ সনে নির্দেশিকা
জারি করে।
   বাঙালির কাছে স্বাধীনতার স্বাদ তিতো। আসাম
সরকারের এই নির্দেশিকা মরার উপর খরার ঘা। এই
 ঘা'তে বরাকের বাঙালি সত্তা জেগে উঠল। ব্রহ্মপুত্রের বাঙালিদের মধ্যেও 
 জাতি বিদ্বেষী ভাষা নীতি জন্য জায়গায় জায়গায় ক্ষোভ পঞ্জীভূত হচ্ছিল যেন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস। সরকারের জাতি বিদ্বেষী ভাষা নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে গঠিত হয় কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ। শুরু হয় সমগ্র বরাক উপত্যকা জুড়ে ২৬দিনের টানাপদ যাত্রা। পদযাত্রার অন্তে ঐতিহাসিক ১৯ শে মের গণসত্যাগ্রহ। করিমগঞ্জ, শিলচরে রেল অবরোধের মাধ্যমে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর শিলং দিল্লীর অন্দর মহলে পৌঁছনোর চেষ্টা। পরের বাকিটা ইতিহাস। ১১জন সত্যাগ্রহীর শহীদত্ব প্রাপ্তি। শত শত ভাষা প্রেমীর রক্ত ক্ষরন। কবির ভাষায় ইতিহাসের কাল প্রহরী ২১ শে মে তোমায় স্মরি।
   দেশ বিভাজনের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বাধীনতাই বাংলা ভাষা ও বাঙালির দুর্দশার অন্যতম কারন। আসামে যখন উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদ প্রভাবিত কংগ্রেস সরকার কৌশলে বলপ্রয়োগ করে অসমীয়া ভাষা বাংলা ভাষীর উপর চাপিয়ে দিচ্ছিল ঠিক তখনি পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকার পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি সত্তাকে নির্মূল করার জন্য বল পূর্বক ঊর্ধু চাপিয়ে দিয়ে ছিল। পূর্ব বঙ্গের বাঙালিরা ধর্মের উর্দ্ধে উঠে জিন্নার পাকিস্তানী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। অমর একুশে সেই আন্দোলনের ফসল।
আজকের এই পবিত্র দিনে বাংলা ভাষার শহীদের জানাই আন্তরিক রক্তিম অভিবাদন।
উচ্চস্বরে বলো,"মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা, তোমার কোলে তোমার বোলে কতই শান্তি ভালো বাসা।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.