Header Ads

সলিল চৌধুরী সেতার লন্ডন

১৯৫৮ সাল। সাদামাটা পোষাকে ৩৫/৩৬ বছরের এক লোক লস এঞ্জেলসের মিউজিকের একটি দোকানে এসে ঢুকলো। আমেরিকার মধ্যে এটি তখন ইন্ডিয়ান মিউজিকের সবথেকে বড় দোকান। মালিক ডেভিড বার্নার্ড সেই সমস্ত জিনিস দোকানে রাখেন যা দুনিয়ার ধ্রুপদী সংগীতের সমঝদাররা কদর করতে পারেন।

দোকানের কর্মী ক্রিষ্টিনা তাই সাধারণ পোষাকের এই ভদ্রলোকটিকে তেমন পাত্তা দিলেন না। অনেকটা বাধ্য হয়ে বলতে হয় তাই বললো-- 'এক্সকিউজ মি স্যার, আপনাকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারি?' ভদ্রলোক সেতার দেখতে চাইলে ক্রিষ্টিনা শিউর নির্ঘাত শখের বাজনাদার! মাথায় ভূত চেপেছে তাই সেতার বাজাতে চাইছে! এমন একজন মানুষ সেতারের কি বোঝে!!

লোকটি নিজ থেকেই সেতার দেখে দেখে যখন পছন্দ করতে পারলেন না ক্রিষ্টিনার বিরক্তি তখন চরমে! হঠাৎ উপরের দিকে বেশ বড়সড় একটি সেতারের দিকে চোখ যেতেই বললেন 'ওই সেতারটা যদি একটু বাজাতাম যদি দেখান..'! ক্রিষ্টিনার সাফ উত্তর 'ওটা সাধারণ সেতার নয়, নামানো যাবে না। তা ছাড়া ওটা বাজানোর অনুমতিও আপনি পাবেন না, কারণ ওটা ‘বস সেতার’। অত্যন্ত দামি এবং বাজানোও সহজ না। এটা শুধু নামী সেতারবাদকেরা বড় অনুষ্ঠানে বাজিয়ে থাকেন। আপনি বরং অন্যগুলির থেকে একটি নিন'!

লোকটি নাছোড়বান্দা! ওই সেতারটাই বাজিয়েই তার দেখা চাই। মালিক ডেভিড কী মনে করে সেতারটি নামিয়ে বাজানোর অনুমতি দিলেন। সেতারের তার টিউন করতে করতে লোকটি বললেন ‘আপনারা একে বলেন ‘বস সেতার’ আর আমাদের দেশে ‘সুরবাহার সেতার’! তারপর চোখ বুজে বাজানো শুরু করলেন!

বাজনা যখন শেষ হল দোকানের ভিতরে-বাইরে তখন ভীড়! ডেভিড এগিয়ে ভদ্রলোকের হাত ধরে বললেন-- 'অসামান্য, অভূতপূর্ব! এমন বাজনা আমি শুধু পণ্ডিত রবিশঙ্করের শো-তে শুনেছি। হলফ করে বলতে পারি, আপনি তার চেয়ে কম প্রতিভাধর নন। কে আপনি? দয়া করে আপনার পরিচয় দিন, আর বলুন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি।’

ভদ্রলোক বললেন 'এই সেতারটি আমি কিনব, আপনি শুধু বিলটুকু করে দিন।’ ডেভিড বললেন 'কিনতে হবে না আপনাকে এই সেতারটা উপহার হিসেবে দিলাম।’ আর দোকান কর্মী ক্রিস্টিনা? সেতারের সুর শুনে সে তখন আবেগে কাঁদছিলো! লোকটির হাতে একটি ডলারের নোট দিয়ে বললো, 'আপনাকে আমি গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু আপনার বাজনা আমাকে যেন চাবুক মারলো। অনুগ্রহ করে এই নোটে যদি আপনার একটা অটোগ্রাফ দেন খুব খুশী হব। এমন এক অসাধারণ প্রতিভার স্মৃতি হিসেবে এটি আমি সাথে রাখবো!'

সাদামাটা ভদ্রলোকটি সে বছরেই সুরবাহার সেতারটি দিয়ে তৈরি করা সুরে লতা মঙ্গেশকর গাইলেন তার অবিস্মরণীয় সেই গান-- ‘না যেয়ো না, রজনী এখনও বাকি...’! সুপারহিট গান পরের বছর হল হিন্দিতেও!

ক্রিস্টিনার নোটে অটোগ্রাফ দেওয়া সেই ভদ্রলোকের নাম-- সলিল চৌধুরী! যার এক একটি গান যেন এক একটি মহাকাব্য! দৈর্ঘ্যে বা প্রস্থে নয়, চিন্তার ব্যাপ্তিতে। সময় পেরিয়ে সবকিছু হারিয়ে যখন এসে গেছে নতুন সমাজ, নতুন যুগ, নতুন প্রযুক্তি, নতুন মানসিকতায় হাপিয়ে সবাই রসাস্বাদের জন্য হাতড়ে বেড়াই, বুঝতে পারি সলিল চৌধুরীর গানে কি যাদু, কি বিস্ময়কর! জন্মদিনে হাজারো প্রণাম--- হে কিংবদন্তি ☘️💙🍂

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.