Header Ads

নেতাজি দিনে ২৫-৩০,কাপ চা খেতেন আর ভাতেভাত পছন্দ করতেন

| নেতাজির ভোজন রসিকতা |

দিনে প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ কাপ চা খেতেন তিনি, প্রচন্ড সুপারি খেতেন, ছিলেন Chain Smoker এই জন্য সহকর্মীদের বকাঝকাও কম সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিলো 'ভাতে ভাত'....!!
 
বাঙালী মনিষী বলতে প্রথমেই যাঁদের নাম মনে আসে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আপামর বাঙালীর প্রিয় নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু। তাঁর গুরু স্বামী বিবেকানন্দের মত তিনিও কম ভোজন রসিক ছিলেন না। গুরুর ছোঁয়া তো তাঁর মানস পুত্রের উপর প্রভাব ফেলবেই.. তাই চলুন দেখেনি তারই কিছু নমুনা....

ভীষণ ভালোবাসতেন চা খেতে, দিনে পঁচিশ ত্রিশ কাপ চা খেতেন তিনি। আর তাঁর প্রিয় পানীয় ছিল গরম জলে বিটনুন দিয়ে লেবুর রস।তবে সিঙ্গাপুরে থাকা কালীন কফির প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে ছিলেন যথেষ্ট।

ভীষণ পছন্দের খাবার ছিলো খিচুড়ি, ভাত আর সোনা মুগ ডাল, মাছের ঝোল আর ভাত, এছাড়াও সুক্ত এবং পুঁইশাক তার খুব পছন্দের খাবার ছিল। আলু সিদ্ধ ভাত যাকে বাঙালির ‘ভাতে ভাত’ বলে। সুভাষের তা ছিল খুবই প্রিয় খাদ্য। ১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে ৩৮/২ এলগিন রোড-এর (অধুনা নেতাজি ভবন) পারিবারিক ভবন থেকে মহানিষ্ক্রমনের ঠিক আগে সুভাষকে শেষ বার দেখেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহধর্মিনী বাসন্তী দেবীকে। যাঁকে তিনি মায়ের আসন দিয়েছিলেন। অনশন করার পর সদ্য জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, শরীর তখনও বেশ দুর্বল। বাসন্তী দেবীর দিকে তৃষ্ণার্ত ভাবে চেয়ে হেসে সুভাষ বলেছিলেন, “মনে রেখো, শিগগিরই আমাকে এক দিন ভাতে ভাত খাওয়াতে হবে।"

 প্রথম দিকে তিনি সব রকম আমিষ খাবার খেলেও পরে তিনি মাছ ছাড়া কোনো আমিষ খাবার সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেছিলেন। তখন শুধুমাত্র মাছ আর সবজি খেতেন আর কিছু ফল (পছন্দের ফল আপেল কলা আর আঙ্গুর)। 

 খাবার শেষে সব থেকে পছন্দ করতেন মিষ্টি। খাদ্য তালিকায় তার মিষ্টি থাকতই। পছন্দের মিষ্টি ছিলো তিনি রসগোল্লা, চমচম, পিঠেপুলি এবং সন্দেশের মত মিষ্টি পছন্দ করতেন এছাড়া নারকেলের  তৈরী যে কোনো মিষ্টি । বিশেষত গ্রামের তৈরি খাবার তিনি খুব পছন্দ করতেন।
যেমন, চিনির পুলি, মনোহরা, নারকেল নারু, রসকরা, ছাতুর বর্ফি, মুরির নারু, মোয়া, মনোহরা, তিলের তক্তি, তিলের নারু এবং তিলের চাকতি ইত্যাদি।

অবশ্য লিভারের সমস্যা ধরা পরার পর তিনি বেশির ভাগ সময় লেবু, লবন, চিনি, জলই খেতেন।
ছাত্রাবস্থায় এবং তারপরেও রাজনৈতিক জীবনের প্রথমদিকে নিয়মিত ছিলেন কফি হাউসের ৪ নম্বর টেবিল এ সেখানে আবার ওনার প্রিয় ছিল চিকেন কাটলেট।

সুভাষ চন্দ্র বসুর এক পরিচিত ডাক্তার এর কথায় তিনি সবসময় সুপারি এবং ভাজা মশলা চিবোতেন। অনেক বারণ করা সত্বেও তিনি শুনতেন না। প্রচন্ড সুপারি খেতেন নেতাজি। এমনকি ব্যাডমিন্টন খেলার সময়ও সুপারি খাওয়ার উল্লেখ রয়েছে ওনার ভাইপোর চিঠিতে, পরে অবশ্য সুপারি সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে হরিতকি খেতেন।

Chain Smoker ছিলেন নেতাজি। সেই নিয়ে নিজের অনুগামীদের বকাঝকাও সহ্য করতে হতো ওনাকে। ভোজন রসিক নেতাজীর প্রিয় খাদ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশ কিছু এখনো বর্তমান। যা ওনার খাদ্য রসকতার স্বাক্ষর এখনও বহন করে চলেছে।

হাতিবাগানের লক্ষীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স। এই তেলেভাজার দোকানটা এখনো ২৩ শে জানুয়ারীর দিন সবাইকে বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ করে ওনার স্মৃতিতে। শোনা যায় নেতাজি ওনার জন্মদিন পালন করেছিলেন এই দোকানে।

বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিটের প্যারামাউন্ট শরবতের দোকানটিও ছিলো ওনার খুব প্রিয়। আড্ডাজগতের মক্কা হিসেবে প্রখ্যাত ইন্ডিয়ান কফি হাউসের ৪ নম্বর টেবিল এখনো বিখ্যাত নেতাজির স্মৃতিতে। সূর্য সেন স্ট্রিট অঞ্চলে আজও ফেভারিট কেবিনের ৪ নম্বর টেবিল শ্রদ্ধার বিষয় এখনও।

স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলে নিজের হাতে শতরঞ্চি পেতে বন্ধুদের নিয়ে এক আনায় দু-বেলা ভরপেট মাছ ভাত খেতেন নেতাজি বহু বছর। কলেজ স্ট্রিটের কাছেই ৮/২ ভবানী দত্ত লেন-এ এখনো স্বমহিমায় বিরাজ করছে স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল। এছাড়াও প্যারিসের ১৫ 15 quai de la Tournelle এ অবস্থিত La Tour d'Argent রেস্টুরেন্টটি আজো বিখ্যাত। ১৯৪১ সালে নেতাজির সাথে তৎকালীন ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপট হিসেবে। এখানেই ওনারা লাঞ্চ মিটিং-এ দেখা করেছিলেন।

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ শহরের এক মিষ্টান্ন কেবিনে একবার গিয়েছিলেন নেতাজী, তারপর থেকে ওই দোকানের নাম হয় বোস কেবিন। 

ডায়েটের ক্ষেত্রে আবার তাঁর পছন্দ  ছিল অতি সাধারণ। তবে খাবারে আতিশয্য থাকলেও অবশ্য ওনার সমস্যা হত না। খাবার ব্যাপারে সেরকম বাছবিচার ছিল না তাঁর, সেরকম দাবিও করতেন না। খাবারের জন্য কখনই কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না নেতাজির। 

এসব থেকেই বোঝা যায় আদ্যোপান্ত ভোজন রসিক বাঙালি ছিলেন আমাদের প্রিয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু....!!

© এক যে ছিলো নেতা

#সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.