Header Ads

সবাই এক গোত্রের নয় ১০৪ বছরের ডাক্তার মণি কুমার চেত্রীর মত ডাক্তার রাও আছেন।

বিশিষ্ট চিকিৎসক মণি কুমার ছেত্রী ১০৪ বছরে পদার্পণ করেছেন। একশো চার বছরের এই তরুণ এই বয়সেও রোজ নিয়ম করে ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠেন।
যাঁর প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের উদযাপনে ভরপুর। সৃষ্টি ও কর্মোদ্যোগের ভিড়ে সেখানে হতাশা বা ক্লান্তির তিলমাত্র ঠাঁই নেই। সৌজন‌্য ও ভদ্রতারও প্রতিমূর্তি। ছাত্র হোন বা পরিচিত-অপরিচিত, সকলকে আপনি সম্বোধন। দেখা হলে উঠে দাঁড়িয়ে করজোড়ে নমস্কার।  অনেকে বলেন, বিধানচন্দ্র রায়ের পর পশ্চিমবঙ্গে চিকিত্‍সার বিবর্তন যেন খানিকটা থমকে গিয়েছিল। তবে স্থায়ী হতে দেননি ডাঃ মণি ছেত্রী। 

১৯২০ সালের ২৩ মে দার্জিলিঙে জন্মগ্রহণ করেন শতায়ু চিকিৎসক মণি ছেত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা দার্জিলিং মিউনিসিপ্যালিটি প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে ডাক্তারিতে স্নাতক। ১৯৪৯-এ ডাক্তারিতে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। এরপর চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে আরও পড়াশোনার জন্য যান বিদেশেও। ১৯৫৫ সালে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ ফিজিসিয়ানস থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯-এ আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি থেকে ফেলোশিপ করেন। ১৯৭২ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস থেকে ফেলোশিপ করেন। ১৯৭৩ সালে রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিসিয়ানস থেকে ফেলোশিপ করেন।

লন্ডন থেকে ফিরে কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে শুরু মণি কুমারের কর্মজীবন। যোগ দেন রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান হিসেবে। পরবর্তীকালে বিধানচন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান হিসেবে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে। বর্তমানে যাকে সবাই এসএসকেএম বলে চেনে। এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন সার্জেন সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন মণি ছেত্রী ।সামলেছেন আইপিজিএমইআর তথা ইনস্টিটিউ অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের কার্ডিওলজি এবং মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডিরেক্টরের দায়িত্বও। 

বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি এবং আইপিজিএমইআরের ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তারও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই এসএসকেএম হাসপাতালে তৈরি হয় ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিট তথা আইটিইউ সেটআপ। এনডোক্রিনোলজি, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, ডায়াবিটিস, রিউম্যাটোলজির মতো আলাদা আলাদা বিভাগ চালু হয়। যা রাজ্যের কোনও হাসপাতালে প্রথম। আজও এসএসকেএম হাসপাতালের রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ে মেডিসিন বিভাগে তাঁর নামে একটি কেবিন রয়েছে। 

জীবদ্দশায় কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। পদ্মশ্রী (Padmasree) চিকিৎসক ডা. মণি ছেত্রী। বয়স আদতে সংখ‌্যামাত্র – এই প্রবচনকে হাতে-কলমে প্রমাণিত করেছেন। জরাকে ছক্কা মেরে জীবনের ক্রীজে ডাক্তার মণি ছেত্রী ব্যাটিং ১০৪ । এসবের পিছনে জিনের খেলা', বলছেন পদ্মশ্রী খ্যাত চিকিৎসক। তাঁর কথয় ‘‘দেখুন, চিকিৎসাবিজ্ঞান যে ভাবে এগোচ্ছে, একশো বছর বাদে তা চলবে জিনথেরাপির (Gene Therapy) উপর ভিত্তি করে। জিনই বলে দেবে, কে কত দিন বাঁচবেন, কার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা।’’ পাশাপাশি জানাচ্ছেন, সুস্থ থাকার জন‌্য কঠোর শরীরচর্চার দরকার নেই। কিন্তু সব ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর সময়মতো খেতে হবে, এক মিনিট এদিক-ওদিক হওয়া চলবে না। ‘‘আমাকে দেখুন। আমিষ-নিরামিষ সব খাই, কোনও বাছবিচার নেই। কিন্তু ঘড়ি ধরে খাই। আর হাসিখুশি থাকি। জীবনকে ভালবাসি। একশো চার বছরেও সুস্থ-সচল হয়ে বেঁচে থাকার এটাই বোধহয় আসল চাবিকাঠি।’’ গতকাল ছিল ডাঃ মণি ছেত্রীর আরও একটি জন্মদিবস। আমাদের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা 🙏💐🙏
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে।
সংগৃহীত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.