Header Ads

kajiranga প্রাক নির্বাচন পর্যালোচনা

প্রাগ নির্বাচনী পর্যালোচনা -১০নং কাজিরঙ্গা লোকসভাসমষ্টিআসাম 
    নবগঠিত ১০ নং  কাজিরঙ্গা লোকসভা সমষ্টির প্রাকৃতিক বৈচিত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে জন বিন্যাসগত বৈচিত্র্ও সকলের নজর কাড়ে।আসামের আয়ুস রেখা ব্রহ্মপুত্রকে ছুঁয়ে খরস্রোতা কপিলির পারে এসে ঠেকেছে কাজিরঙ্গা লোক সভা সমষ্টির সীমা।"নানা জাতি উপ জাতি রহনিয়া এই কৃষ্টি"র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কাজিরঙ্গা সমষ্টি। বিশ্ববিখ্যাত জাতিয় উদ্যান কাজিরঙ্গার নামানুসারে সমষ্টির নাম। কাজিরঙ্গা একশির গণ্ডারের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত।
             ২০ লাখের অধিক ভোটারের এই সমষ্টিতে পাঁচ লক্ষাধিক ইসলাম ধর্মীয় ভোটারের বিপরীতে লক্ষাধিক খ্রীষ্টিয়ান ভোটার আছে। বাকি অংশ হিন্দু ভোটার। নানা জাতি উপ জাতি র হিন্দু ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪ (চার) লক্ষ হিন্দু বাঙালি, তিন লক্ষাধিক চা শ্রমিক সম্প্রদায়, প্রায় এক লক্ষ হিন্দি ভাষী । বাদবাকি মূল অসমীয়া/নতুন পরিভাষায় খিলঞ্জিয়া। মুসলীম ভোটারের সিংহ ভাগ হোজাই জিলার বাসিন্দা। নব গঠিত বিন্নাকান্দি বিধান সভা সমষ্টিতে দুই লক্ষাধিক মুসলিম ভোটার।হোজাই- লুমডিং এবং নগাঁও জিলার বহরম ও কলিয়াবর বিধান সভা সমষ্টি মিলিয়ে আরও প্রায় দু লক্ষ মুসলীম ভোট আছে। সরু পাথার , গোলাঘট, দেরগাঁও, খুমটাই ও বোকাঘট এই চার বিধান সভা সমষ্টিতে লক্ষাধিক মুসলিম ভোটার আছে। মুসলিম ভোটারের ৯৫% বঙ্গীয়।
         বাঙালি হিন্দু ভোটারের অধিকাংশের বাসস্থান হোজাই ও লামডিং বিধান সভা সমষ্টিতে - যা প্রায়  আড়াই লক্ষ। সরু পাথার বিধান সভা সমষ্টিতে প্রায় ৫০(পঞ্চাশ) হাজার হিন্দু বাঙালি ভোটারের বিপরিতে গোলাঘাট বিধান সভা সমষ্টিতে প্রায় পঁচিশ(২৫) হাজার হিন্দু বাঙালি ভোটার আছে। বাকি  ছয়টি সমষ্টিতেও বাঙালি হিন্দু ভোট অল্প সল্প আছে। চা শ্রমিক ভোটারদের মুল ভাণ্ডার সরু পাথার, গোলাঘাট, দেড়গাঁও, বোকা ঘাট, কলিয়াবর খুমটাই। গড়ে  পঞ্চাশ হাজার করে ভোটার ধরলে অঙ্ক দাঁড়াবে তিন লক্ষ। বাদবাকি মূলস্রোতের অসমীয়া।
            বিজেপি, কংগ্রেস সহ এগারো জন প্রার্থীর ভাগ্য ১৯সে এপ্রিল নির্ধারিত হবে। তবে মূল প্রতিযোগিতা শাসক দলীয় বিজেপি প্রার্থী, রাজ্য সভার সাংসদ কামাখ্যা প্রসাদ তাসার সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থী, প্রাক্তন বিধায়ক শ্রীমতী রোজ লিনা তিরকির। দুজনই চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের। বিন্নাকান্দি বিধান সভা সমষ্টির নিলবাগানের জনৈক আব্দুল হক- প্রাক্তন AIUDF নেতা ও ডবকার শ্রীমতী দিলওয়ার বেগম, রাইজর দলের প্রক্তন নেত্রী এই নির্বাচনে অবতীর্ন হয়ে শোরগোল সৃষ্টি করে কংগ্রেস প্রার্থীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়েছেন। অন্য দিকে জনৈক শৈলেন মালাকার ভাগপার মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য হিন্দু বাঙালি ভোট। শুনা যাচ্ছে তিনি না কি কংগ্রেসের ডেমি! সত্য মিথ্যা জানি না। কিন্তু আচরনে তাই মনে হয়।
            মূল প্রতিদ্বন্ধী বিজেপির কামাখ্যা প্রসাদ তাসার হয়ে ইতি মধ্যেই বিজেপির আসামের মুখ্য সেনাপতি,  আসমের মুখ্যমন্ত্রী  ড:  হিমন্ত বিশ্বশর্মা ময়দানে নেমে গেছেন। তিনি  (তাসা)নিজেও স্থানীয় বিধায়কদের নিয়ে প্রথম দফার প্রচার সেরে দ্বিতীয় দফার প্রচারে নেমেছেন। তৃতীয় দফায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির সঙ্কট মোচক মাননীয় অমিত শাহ ৮ই এপ্রিল নির্বাচনী যুদ্ধের চূড়ান্ত রূপ দিতে হোজাইতে বৃহত জনসভায় অংশ নিয়ে জ্বালা ময়ী ভাসন দ্বারা কর্মী সমর্থকদের তাতিয়ে দেবেন। তাই, কর্মী সমর্থক মহলে সাজ সাজ রব। কংগ্রেস দলের রোজ লিনাও সাদা মাটা ভাবে প্রচারে নেমেছেন। তাঁর প্রচারে বিজেপি প্রার্থীর মত যৌলস নেই। নেই কংগ্রেসের প্রথম শ্রেণীর কোনো নেতা। সাংগঠনিক শক্তিতে বিজেপি কংগ্রেসের চেয়ে সহস্র যোজন এগিয়ে আছে। সমষ্টির ১০টি বিধন সভা সমষ্টির মধ্যে ৯ টি তেই বিজেপি ও মিত্র দল AGP বিধায়ক আছেন। ৯ জনের তিন জনই আসাম সরকারের পূর্ণ মন্ত্রী। এক মাত্র বিন্নাকান্দি সমষ্টি AIUDF র দখলে। কংগ্রেস বিধায়ক শুন্য এই লোকসভা সমষ্টিতে রোজ লিনার লড়াই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন। হার জেনেও তাঁর মনোভাব "বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী,।" আমি কি ডরাই সখি---  রাঘবে? "গুচের। জিত নিশ্চিত জেনেও প্রতিপক্ষকে দূর্বল ভাবতে রাজি নন কামাখ্যা প্রসাদও। পছা সামুকে যাতে পা কাটতে না পারে তাই তাঁর হয়ে ক্লান্তিহীন লড়াই চালাচ্ছেন ৯জন বিধায়ক। সেই তুলনায় রোজ লিনার দক্ষ সেনাপতি হীন সৈন্যদের একাগ্রতা, আন্তরিকতায় অনেক খামতি আছে। রোজ লিনা রাডার বিহীন জাহাজের যাত্রী।
     জন বিন্যাসের আধারে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ : --
সারা ভারতে বিশেষ করে আসামে কংগ্রেস দল একটি বিশেষ ধর্মীয সম্প্রদায়কে তুষ্ট করেতে গিয়ে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় গুলোকে রুষ্ট করে BJP গামী করেছে। তাই, দেখা যায় মূল অসমীয়া সম্প্রদায় CAA বিরোধী হওয়া সত্বেও বিজেপি গামী হতে শুরু করেছিলেন ২০১৪সন থেকেই, সেই ধারা আজও অব্যাহত।কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপির শাসন কালে চা শ্রমিক ও তাঁদের অঞ্চল উন্নয়নের গতি প্রবল হওয়ায় আসামে কংগ্রেসের অন্যতম শক্তি চা শ্রমিক ভোটাররাও ২০১৬সন থেকেই কংগ্রেসকে টাটা দিচ্ছে। হিন্দু বাঙালি ভোটকে ত কংগ্রেস জুর করে BJP ঢুকিয়ে দিয়েছে উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদী শিবির ও ধর্মীয় সংখ্যা লঘু সমপ্রদায়কে কংগ্রেস  মুখী করার জন্য এবং AIUDF থেকে মুসলিম ভোট ছিনিয়ে আনার জন্য। হিন্দি ভাষী ভোটের সিংহ ভাগ পূর্বের ন্যায় এখনো বিজেপি তে আছে, ভবিষ্যতে থাকবে কি না সময় বলবে। মূল অসমীয়া সম্প্রদায় CAA হওয়ার পরেও যত নির্বাচন আসামে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিটি নির্বাচনেই বিজেপি কে বিপুল ভোট দিয়ে কংগ্রেস বিরোধিতার স্বাক্ষর রেখেছে। চা শ্রমিকও রাম চন্দ্রের কৃপায় মোদী মোহে আচ্ছন্ন। এমত অবস্থায় কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী রোজলিনার দিল্লী যাবার সপ্ন -দিল্লী দূর অস্ত!এবার লোকসভা নির্বাচনে একাংশ মুসলিম ভোট বোনাস হিসেবে বিজেপিতে হয়ত যাবে। তাঁদের কথা যে, বিজেপি মুখে যাই বলুক বাস্তবে তার উল্টো। হিন্দুদের সম হারে মুসলিমরাও অরুণোদয়, প্রধানমন্ত্রী আভাস যোজনা, বিনা মূল্যের রেসন, বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বীমা, মাইক্র ফাইন্যান্সের ঋণ মুক্তি,নেতা মন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া বিনে পয়সায় চাকরি, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং সহ উচ্চ শিক্ষার সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনা সুপারিশে মেধার ভিত্তিতে আসন লাভ আদি বিভিন্ন  ধরনের উন্নয়ন কাজে মুসলিমদের একাংশকে  বিজেপি আকর্ষিত করেছে। তাঁরা হয়ত বিবেক ভোট বিজেপিকে দেবেন। আসামের রাজনৈতিক পরিবেশ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এতে কংগ্রেসের মুসলিম ভোটে ভাটা পড়বে।
          কাজিরঙ্গা সমষ্টিতে কংগ্রেসের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা পূর্বে উল্লিখিত দুই হেভি ওয়েট নির্দল মুসলিম প্রার্থী। দুইজনই পারিবারিক ভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী। যেজন AIUDF গন্ধ যুক্ত তাঁকে যদি কংগ্রেসকে গো হারা হারারবার তাগিদে AIUDF সুপ্রীমো মৌলানা মাননীয় বদর উদ্দিন আজমল তাঁর হোজাইর সৈন্যদের ইঙ্গিত দিয়ে দেন তাহলে কংগ্রেসের কি হবে?ভাবিয়ে তুলছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। AIUDF কাজিরাঙ্গায় প্রার্থী প্রক্ষেপ না করায় কংগ্রেস যে সুযোগ পেয়েছিল উল্লিখিত নির্দল প্রার্থীদের কল্যাণে তা আনেক খানি বাঁধা গ্রস্থ হবে। 
      বাঙালি হিন্দুর জন্য কংগ্রেস বিজেপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ তবু তাঁরা কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপি কে নিরাপত্তার স্বার্থে অধিক গ্রহণ যোগ্য মনে করে যদিও মিশন বসুন্ধরার সুবিধা ভোগী হতে কৌশলে বাঙালি হিন্দুদের বিজেপি সরকার বঞ্চিত করেছে। হোজাই কংগ্রেসে রোজলিনা রকিবুল হুসেইন পন্থী। প্রদ্যুৎ পন্থী হোজাইর কংগ্রেস কর্মীরা রোজলিনার হয়ে আন্তরিক ভাবে লড়াই করবে ত!!??
                 পাঁচ লক্ষাধিক মুসলীম ভোটের ৯০% কাষ্ট হলে মুটামুটি চার লাখ সাট হজার কাষ্ট হবে। কাষ্ট ভোটের ৮০% কংগ্রেস পেলে অঙ্ক দাঁড়াবে সাড়ে তিন লাখ। অন্য দিকে পনেরো লক্ষাধিক ভোটের সত্তর % কাষ্ট হলে প্রায় ১১এগারো লক্ষ্য কাষ্ট হবে। কাষ্ট ভোটের ৭০% বিজেপি র ঝুলিতে জমা পড়লে অঙ্ক দাঁড়াবে ৭ সাত লাখের উপর বাকী টা কংগ্রেসের ঝুলিতে গেলে কংগ্রেসের মুট ভোট দাঁড়াতে পারে সাত লাখ। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে হিন্দু ভোটের ৮০ % যাবে তাসার ঝুলিতে যাবে । যদি তাই হয় তাসার ভোট দাঁড়াবে প্রায়  ১১ লাখ ।

         উল্লেখিত যুক্তি এবং তথ্য বলছে কাজিরঙ্গায় বিজেপি  কংগ্রেসের চেয়ে অনেকে এগিয়ে  যদিও AIUDF এর প্রার্থী নেই। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে শেষ কথা বলবে জনগণ। এখনও অনেকে দিন বাকী আছে। দেখার বিষয় রাজনৈতিক নির্বাচনি তুফান আদৌ কি গতি পরিবর্তন করবে? না যে দিকে বইছে সে দিকেই বইবে?
              প্রতিবেদক - বিজয় চক্রবর্তি।
               হোজাই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.