ulta commander ইন চিফ পরেশ বড়ুয়া কে খোলা চিঠি সাংবাদিক pranab দাসের
পরেশ বরুয়ার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি! সাংবাদিক প্রণবানন্দ দাস দাদার
আপনাকে সম্বোধন করার ইচ্ছে থাকলেও ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসেবে আমার সেই রুচি নেই।
এই মুহূর্তে আমি অসমের বাইরে রয়েছি। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও অসমের আপামর বাঙালির উদ্দেশে আপনার সংগঠনের পক্ষে দেওয়া চরম সময়সীমার এক বিবৃতি চোখে পড়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, এ নিয়ে রিঅ্যাক্ট করব না। কিন্তু যেহেতু আমি একজন অসমের বাঙালি তাও আবার বরাক উপত্যকার, তাই ভাবলাম আর কিছু না হোক এমন হুমকিতে চুপ করে থাকা উচিত হবে না। তাই অসমের বরাক উপত্যকার এক বাঙালি নাগরিক হিসেবে এই খোলা চিঠিটি লিখছি। জানিনা, এটা আপনার কাছে পৌঁছবে কী না। আমি চেষ্টা করব, অন্য উপায়েও চিঠিটি আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার।
আগে কয়েকটি কথা স্পষ্ট করে দিচ্ছি।
১) আমি অসমের গোটা বাঙালি সমাজের হয়ে এখানে কিছু বলছি না। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত। কারণ, কাউকে প্রতিনিধিত্ব করার কোনও এক্তিয়ার বা রুচি---- কোনওটাই আমার নেই।
২) আপনার উদ্দেশ্যে এই চিঠিটি লেখার অর্থ এই নয় যে আপনাকে বা আপনার বেআইনি ও নিষিদ্ধ সংগঠনকে কোনোভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। শুধুমাত্র এই রাজ্যে বাঙালিরা যে 'উইপোকা' নয়, তার জানান দিতেই এই চিঠি।
আর
৩) যে বিতর্ককে কেন্দ্র করে আপনি এই হুমকি দিয়েছেন, সেই বরাক পৃথকীকরণের বিষয়টি নিয়ে আমার কোনও অবস্থান নেই। পক্ষে-বিপক্ষে এই বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করার সময় ও সুযোগ আমার হয়ে ওঠেনি। ফলে এ নিয়ে 'আপাতত' আমার বলার কিছুই নেই।
এখন আসি আপনার সংগঠনের অসমের বাঙালিদের উদ্দেশে জারি করা চরম সময়সীমা নিয়ে।
আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে....
১) আমরা সর্বোপরি ভারতের নাগরিক। তারপর অসমের বাসিন্দা। আপনি বা আপনার সংগঠন ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্যের বিষয় নিয়ে নাক গলানোর কে ? আমরা তো জানি আপনার সংগঠনের হয়ে আপনি ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে কার্যত ' যুদ্ধ' চালিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে আমাদের দেশের ভেতরে কী হল, কে কী চাইল তা নিয়ে আপনার বা আপনার সংগঠনের মাথা ব্যাথা কীসের?
২) এই দেশের বহু বীর সেনা, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের (এর মধ্যে খিলঞ্জিয়া অসমিয়াও রয়েছেন) নৃশংস খুনের রক্তে আপনার হাত লাল। তাই আপনার সংগঠন এদেশে আইনের চোখে 'নিষিদ্ধ'! আপনাদের বিরুদ্ধে এ দেশে দেশদ্রোহিতার বহু মামলা ঝুলছে। আর সেই আপনারা এ রাজ্যের বাঙালিদের দেশ-ভক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?
৩) অসমে বিশেষ করে বরাক উপত্যকায় বাঙালিরা কবে থেকে বাসিন্দা, তা নিয়ে আপনার বিবৃতিতে যে মন্তব্য পড়লাম, তাতে আপনাদের ইতিহাস জ্ঞান নিয়ে আমার করুণা হয়েছে। একটা কথা স্পষ্টভাবে বলে রাখি, বাঙালিরা অখণ্ড ভারতবর্ষের প্রাচীনতম বাসিন্দা। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের কী অবদান রয়েছে, তা জানতে হলে একবার আন্দামানের সেলুলার জেলে ঘুরে আসবেন। দেখবেন, বাঙালিরা আপনাদের মতো কখনই " ভুয়ো বিপ্লবী" ছিল না। এতদিনে নিজেদের সংগঠনের সিংহভাগ 'কমরেড'কে আপনার পথ থেকে সরে যেতে দেখেও যদি এই উপলব্ধি না হয়, তবে আপনি ও আপনার অবশিষ্ট সংগঠনের ইতিহাস হতে সময় লাগবে না। ফলে বাঙালি আপনার বা আপনার সংগঠনের সার্টিফিকেটের জন্য কখনই করুণাপ্রার্থী নয়।
৪) কাদের, কীসের সময়সীমা দিলেন? আপনারা কে সার্বভৌম ভারতবর্ষের একটি জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এমন দুঃসাহস দেখানোর? বাঙালির কোন দায় পড়েছে আপনাদের মতো একটি দেশদ্রোহী সংগঠনের কোনো প্রতিক্রিয়াকে পাত্তা দেওয়ার? জঙ্গলে পলাতক হয়ে থেকে হুঙ্কার দেওয়ার বদলে প্রকাশ্যে এসে একবার নিজের জনপ্রিয়তা পরখ করে দেখুন না, 'দুধ কা দুধ, পানি কা পানি' হয়ে যাবে।
শেষে একটা কথাই বলছি, আপনাদের মতো মারণাস্ত্র নিয়ে হুমকি দেওয়ার মানসিকতা আমার মতো বাঙালি রাখে না। সেই রুচিও নেই। আমার মতো লোকের অস্ত্র এই লেখাই। এ দেশের দুর্ভাগা বাঙালির আর কী-ই বা হারানোর আছে। দেশ ভাগের সবচেয়ে বিষাক্ত অভিশাপ তো আমরাই বয়ে নিয়ে চলেছি। ফলে ওই গুলি-বন্দুকের ভয় দেখিয়ে আমাদের কী হবে। গত পাঁচ দশক ধরে এই ভয়-হুমকি-খুন-সন্ত্রাসের 'বাণিজ্য' করে তো রাজ্যের কয়েক প্রজন্মের বারোটা বাজিয়েছেন। এখন এসব করে নিজেদের অস্তিত্বকে জাহির করার চেষ্টা করলেও ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না!
কোন মন্তব্য নেই