Header Ads

Lalbahadur শাস্ত্রী তাকে কেউ আর স্মরণ করেনা

ভিনগ্রহের মানুষ ............ ‌🍁🍁

আজ দোসরা অক্টোবর, দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে জাতির জনকের জন্মদিন। কিন্তু ওনার আড়ালে চাপা পড়ে গেছে এক খর্বকায় অথচ বজ্রের মতো দৃঢ় মানুষের জন্মদিন। বিদেশের মাটিতে মৃত দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী।

ষাটের দশকের কথা,  নয়াদিল্লিতে সরকারি উচ্চ পদে বসলেন বারণসসীর ওপারে রামনগরের এক ভদ্রলোক । একদম সাদামাটা মানুষ, না আছে বিলেতের কোন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, না আছে পারিবারিক কৌলিন্য । তবে ছোটখাটো চেহারা হলে কি হবে, নিজের আদর্শ ও সিদ্ধান্তে ছিলেন বজ্রকঠিন।

এহেন মানুষটির দুই ছেলে ভর্তি হলো রাজধানীর নামকরা সেন্ট কলম্বাস স্কুলে । অভিজাত পরিবারের সন্তানরা পড়তো সেখানে, স্বভাবতই প্রায় সবাই আসতো নিজেদের গাড়িতে। এই দুই শ্রীমান কিন্তু যেতো ভাড়া করা টাঙ্গায়, তাদের যে গাড়ি নেই । সরকার থেকে তাদের বাবার জন্য একটা সবসময়ের গাড়ি থাকতো, কিন্তু তাদের একগুঁয়ে বাবাটি আবার পছন্দ করতেন না পারিবারিক কাজে সেটা ব্যবহার হোক।মাঝেসাজে বাবার নজর এড়িয়ে যেদিন দুভাই গাড়িতে আসতে পেতো সেদিন তাদের আনন্দ দেখে কে !

ক্রমে বাড়ির সবাই ওনাকে চেপে ধরলো একটা গাড়ি কেনার জন্য । ওনার তখন কাজের চাপে নাওয়া খাওয়ার সময় নেই, বাধ্য হয়ে সেক্রেটারি কে ভার দিলেন । তিনি সব দেখেশুনে একটা ফিয়াট গাড়ি পছন্দ করলেন যার দাম সেসময় বারো হাজার টাকা! এদিকে ওনার ব্যাঙ্কে তখন পড়ে আছে মাত্র সাত হাজার । অগত্যা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের পার্লামেন্ট স্ট্রিট শাখা থেকে লোন নিলেন পাঁচ হাজার টাকা । কেনা হলো 1964 মডেলের ক্রিম কালার একটি ফিয়াট, সবাই খুশি।

এলো 1966 সাল, বছরের শুরুতেই জরুরী এক  কাজে ওনাকে বিদেশে যেতে হলো । তারপরেই এলো দুঃসংবাদ...... ১১ই জানুয়ারীর রাতে বিদেশের মাটিতেই অকস্মাৎ হলো তাঁর মৃত্যু।
আপাদমস্তক সজ্জন মানুষটির মৃত্যুও এক রহস্যে মোড়া । পরিবারের লোকজনদের হাজার অনুরোধেও তাঁর দেহের পোষ্ট মর্টেম করতে দেয়া হয়নি । খুঁজে পাওয়া যায়নি তার সঙ্গে যাওয়া পরিচারক কে। এমনকি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক যিনি তদন্তের জন্য সাক্ষী দিতে যাচ্ছিলেন, সেই আর এন চুঘ দিল্লির রাস্তায় লরী দুর্ঘটনায় মারা যান।

সেসব অন্য কাহিনী, এখন লোনের টাকা কে শোধ করবে ? যথাসময়ে PNB ওনার বিধবা স্ত্রীর কাছে নোটিশ পাঠালো । সেই স্বল্পশিক্ষিত মহিলা বা তাঁর পরিবার ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। ভাগ্যিস একালের নীরব মোদি বা বিজয় মালিয়ার মতো দেহে নীল রক্ত ছিলোনা আর তাই ধারের পরিমাণ ১১ হাজার ৪০০ কোটির বদলে মাত্র তিন হাজার টাকাও হলেও সেদিন তিনি পরলোকগত স্বামীর পেনশন থেকে তা পুরোটাই শোধ করে দিয়েছিলেন।

আজ যখন চুরির দায়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী অভিযুক্ত হয়,অর্থমন্ত্রী জেলে যায়, নগরপাল পালিয়ে বেড়ায়, ক্যামেরার সামনে টাকা নিয়েও নেতারা গলাবাজি করে, তখন বড়ো বেশি করে মনে পড়ে সেদিনের সেই ক্ষীণ খর্বকায় মানুষটিকে।  জন্মদিনে লহ প্রণাম 🌹🏵️ 
               কলমে ✍🏻 স্বপন সেন 🌲

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.