Dilimition এর নামে Hindi রাজ্.এর চক্রান্ত কেন্দ্রের
ডিলিমিটেশনের নামে গোটা দেশে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ কায়েমের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে----
@ তপোময় বিশ্বাস
'ডিলিমিটেশনের নামে গোটা দেশে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ কায়েমের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে' শীর্ষক আলোচনাটিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আসন্ন সংকট ও বাঙালীকে দাবার বোড়ে করে রেখে শোষণ চালানোর নীল নকশা এবং এর হাত থেকে পরিত্রাণের পথ দেখানোর চেষ্টা করছি।ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুস্থানীয় পুঁজিপতিদের সাহায্যার্থে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় ভারতীয় গণতন্ত্র তথা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদী সরকারকে দেখা গেছে। সেই স্বৈরতন্ত্রকে চিরস্থায়ী করতে মোদী সরকারের নয়া পন্থাটি হল- 'ডিলিমিটেশন'। যার অর্থ জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভার রাজ্যভিত্তিক আসনের পুনর্বিন্যাস। মা প্রতি সন্তান জন্মের হার পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণের রাজ্যগুলির তুলনায় উত্তরপ্রদেশের হিন্দী বলয়ে প্রায় দুগুন বেশি হওয়ায় হিন্দী বলয়ের লোকসভা-বিধানসভা আসন সংখ্যা বাড়বে । অপরদিকে পশ্চিমবাঙলা, দক্ষিণের মত অহিন্দীভাষী রাজ্যগুলিতে আসন সংখ্যা কমবে। অদূর অতীতের বিভিন্ন ঘটনাক্রম থেকে আন্দাজ করা অমূলক নয় যে, বেশি আসন সংখ্যাবিশিষ্ট হিন্দী বলয়ের আধিপত্য গ্রাস করে কম আসন সংখ্যাবিশিষ্ট অহিন্দীভাষী রাজ্যগুলির অধিকার খর্ব করবে। আইন পাশ কিংবা সংসদীয় কার্যাবলি, এলাকার উন্নয়নে সংসদীয় তহবিল সবকিছুর উপরেই হিন্দী বলয়ের আধিপত্যবাদ কায়েম হতে চলেছে। 'ডিলিমিটেশন' একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে মোদী সরকার এর অপব্যবহার করছে। প্রতিবার জনগণনার পরেই এক ধরনের আসন পুনর্নির্ধারণ ঘটলেও গত ৫০ বছরেও লোকসভা বিধানসভা আসনের মোট সংখ্যার কোনও পরিবর্তন হয়নি। পশ্চিমবঙ্গেই বিধানসভা ২৯৪ আসন ও লোকসভা ৪২ আসন থেকে গেছে। জনসংখ্যার পরিবর্তন অনুসারে তাদের চেহারা পাল্টালেও আসনের সংখ্যা একই থেকেছে। ৫০ বছর পর এই প্রথম আসন সংখ্যা বাড়তে চলেছে, অঙ্ক অনুসারে হিন্দী বলয়ের আসন সংখ্যা বাড়তে চলেছে। এর মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে গোটা দেশে 'হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ' কায়েম করার চিরস্থায়ী কৌশল বিজেপি নিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী জনগণনার পরেই ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করার কথা। কিন্তু সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইতিমধ্যে ডিলিমিটেশন প্রয়োগ করে বিজেপি শাসিত অসমের বাঙালী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার বিধানসভা আসনের সংখ্যা ১৫ থেকে কমিয়ে ১৩ করা আর বরাকের তুলনায় কম জনসংখ্যার বরোল্যান্ডের আসন সংখ্যা বাড়ানো বিজেপির বাঙালী দমনেই ডিলিমিটেশন প্রয়োগের চক্রান্ত পরিষ্কার। কমবেশি আমরা সবাই জানি এন.আর.সি , ডিটেনশনক্যাম্প সহ নানা অত্যাচার অসমের বাঙালীদের উপর চলছে। এর মধ্যে অসম বিধানসভায় বাঙালী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমিয়ে সেই অত্যাচারের আওয়াজকে ধামাচাপা দেওয়া ও ধীরে ধীরে অসম থেকে বাঙালী বিতাড়নের পথ প্রশস্ত করছে বিজেপি। শুধু অসম নয় খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বাঙালীদের উপর চলছে চরম বঞ্চনা।যৌনতা সর্বস্ব, ভোগমুখী হিন্দী অপসংস্কৃতির স্ট্রীম রোলারে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাঙলার উন্নততর শিক্ষা সংস্কৃতি শিল্পকলা সহ মানসিক সংবেদনশীলতাকে। চাকরি ক্ষেত্রেও বাঙালী ছেলেমেয়েদের ব্রাত্য করে বহিরাগত অবাঙালীদের নিয়োগ, বাঙলার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণেও অবাঙালী গুজরাটি, মারোয়াড়ী বেনিয়াগোষ্ঠী।ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে রাজ্যের শাসক-বিরোধী উভয়েই শীতঘুমে। গোটা দেশে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী বিজেপি সরকার এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে বাংলা ভাষায় কথা বললেই 'বাংলাদেশী' , 'ঘুসপেটিয়া', 'অনুপ্রবেশকারী' র মতন মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাদেরকে দেশ ছাড়ার হুমকি, নির্যাতন , মারধোর করার ঘটনা হামেশাই ঘটছে।পশ্চিমবঙ্গেই দাঁড়িয়ে বাঙালীকে বাংলাদেশী বলে অপমান করে চলেছে বহিরাগত অবাঙালীরা! সমস্ত গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার (ক্ল্যাসিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজ) স্বীকৃতি প্রদান না করে হিন্দী সহ অন্যান্য ভাষাকে তা প্রদান করা, সাংবিধানিক নিয়মানুযায়ী মাতৃভাষা/আঞ্চলিক ভাষায় সমস্ত পরিষেবা পাওয়া অধিকার থাকার পরেও বাঙলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় দপ্তর গুলিতে সেই সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বাংলার বদলে হিন্দীতে পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে, "যারা হিন্দী হিন্দী বলে চীৎকার করে তারা আসলে জোর করে হিন্দী ভাষাটাকে চাপিয়ে দিতে চায়।যাতে তোমরা হিন্দী ভাষীদের দাসে পরিণত হও। নিজেদের দাস তৈরী করবার জন্যে নিজেদের ভাষাকে অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চায় যেমন ইংরেজরা ভারতবাসীদের দাসত্বে পরিণত করার জন্যে ইংরেজি ভাষাটাকে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল।একেই আমরা বলতে পারি মানসিক তথা অর্থনৈতিক শোষণ (Psycho-economic exploitation)।" তথ্যসূত্রঃ অভিমত,শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৭।ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ১৯টি জাতিভিত্তিক রেজিমেন্ট থাকলেও বাঙালী রেজিমেন্টের পুনর্গঠন করা হল না।রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বাঙালী জনসাধারণের উপর চালানো চরম মানসিক শোষণের আড়ালে চলছে অর্থনৈতিক শোষণ। বাঙলার কাঁচামাল বাঙলার বাইরে গিয়ে সেখানকার কারখানায় শিল্পপণ্যে পরিণত হয়ে তা বাঙলায় এনে বাজারজাত করে বিক্রির লভ্যাংশের অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে অবাঙালী বেনিয়াদের পকেটে। এ যেন ঠিক - 'যার শীল যার নোরা তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া।' আর সামান্য উচ্ছিষ্ট 'পার্টি ফান্ডে' ঢোকায় তেনারাও চোখ-মুখ বুজে তেলমাখাতে ছাড়েন না।ঝাড়খণ্ড-অসম-ত্রিপুরার মত প্রতিটি বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাতেও একই ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। ইতিমধ্যে পার্লামেন্টে বাঙালী সাংসদের সংখ্যা কমাতে ডিলিমিটেশন প্রয়োগ করার সম্ভাবনা একশো শতাংশ। এই আসন্ন সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র সমাধান হল, ভারতের সমস্ত বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাকে একত্রিত করে বাঙালীদের নিজস্ব বাসভূমি গঠন। ১৮৭৪ সাল থেকে ব্রিটিশ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির যে যে অঞ্চলগুলি কেটে আলাদা রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে সেই অসমের শিলচর, হাইলাকান্দি, লামডিং, লঙ্কা, হোজাই , বিহারের ও বর্তমান ঝাড়খণ্ডের বিস্তৃর্ণ বাঙালী অঞ্চল, সমগ্র ত্রিপুরা সহ উত্তরপূর্ব ও ভারতবর্ষে যে যে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা আছে, সংবিধান মেনে সেগুলি একত্রিত করে বাঙালীর নিজস্ব রাজ্য গঠন করাতেই সমাধান। অন্যথায় যদি কেউ মনে করেন বঞ্চনার বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে কেটে কেটে আলাদা ছোট ছোট রাজ্য করা উচিত তা হলে বিরাট ভুল হবে। রাজ্যের সীমানা যত ছোট তত অর্থনৈতিক সমস্যা এবং ক্রমাগত বহিরশত্রুর আক্রমণে মুখ থুবড়ে পড়বে রাজ্যটির অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। অপরদিকে একই সামাজিক অর্থনৈতিক সম্ভবনা ও একই সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য নিয়ে ভারতের সমস্ত বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে বাঙালীদের নিজস্ব বাসভূমি গঠনেই একদিকে যেমন অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চিততা দেবে তেমনই বাঙলার মাটিতে দাঁড়িয়ে কোন বাঙালীকে হিন্দীত্বের দাসত্ব গ্রহণ করতে হবেনা। মাথা উঁচু করে বাঙালী তার মাতৃভাষা তথা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টতম ভাষা বাংলায় নিঃসঙ্কোচে কথা বলবে, বাংলা ভাষায় দাফতরিক পরিষেবা পাবে। সমস্ত হীনমন্যতা, ভয় কাটিয়ে বাঙালীর জয়ের একমাত্র পথ এটিই। বাঙালী জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধতাই তাদের নিজস্ব বাসভূমি গঠনের প্রথম পদক্ষেপ। দুনিয়ার বাঙালী এক হও।
কোন মন্তব্য নেই