পৃথক বরাক উপত্যকা আজ তৃতীয় পর্ব
নয়া ঠাহর বারাক উপত্যকা পৃথকীকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ না থাকলেও পৃথক হবার পর অবস্থার উন্নতি না অবনতি হবে এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি নিয়ে সীমিত পরিসরে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।আজ রইল এই ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব।
**কেন চাই পৃথক বরাক*
*পর্ব -৩*
প্রসঙ্গ -
৩) এই উপত্যাকার একাংশের বক্তব্য এই যে বরাকের কোন আভ্যন্তরীন সম্পদ নেই। কাজেই অর্থনৈতিক কারনে এই পরিকল্পনা গ্রহনযোগ্য নয়।
*এই প্রসঙ্গে আমাদের নিবেদন -*
এই ব্যাপারে একটি পুস্তিকা কিছূদিনের মধ্যেই আমরা জনগণের হাতে তুলে ধরব যাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত রাজ্যের অর্থনৈতিক রূপরেখা বিশদে আলোচিত হবে।
তবে সাধারন তথ্যের ভিত্তিতে এটা বলা যায় যে কৃষি,শিল্প,বানিজ্য ও সেবা এই চারটি ক্ষেত্রেই বরাকের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে - এতটাই যে যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিলে এটি উত্তর পূর্বের অন্যতম সমৃদ্ধ শালী রাজ্য হবে। বরাক উপত্যকার অন্যতম সম্পদ তার জলসম্পদ । এখানে রয়েছে প্রচুর নদী,নালা,খাল,বিল - অধিকাংশই প্রাকৃতিক। বর্ষাকালে এসব জলে পূর্ণ থাকে কিন্তু সেই জলকে ব্যাবহারিক কাজে লাগানো যায়না পরিকাঠামোর অভাবে। বরাকে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২,৯৮,৫০০ হেক্টর যার অধিকাংশই পৌষ মাসে শাইল ধান কাটার পর পরবর্তী শ্রাবন মাস অব্দি পতিত পড়ে থাকে একমাত্র জলসিঞ্চনের সুবিধা নেই বলে। যদি বরাকের জলসম্পদকে সেচ ব্যাবস্থা উন্নীতকরণের মাধ্যমে কাজে লাগানো যায় তবে এখানো দুফসলা এমনকি তিনফসলা চাষ করা সম্ভব। এছাড়া আরো ৫৯,০০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনা যায়। জলসেচের ব্যাবস্থা থাকলে অন্যান্য অর্থকরী ফসল উৎপাদন সম্ভব যারমধ্যে ডাল এবং তৈলবীজ জাতীয় শষ্যকে মনে রাখতে হবে। এখানকার টিলাগুলি বিভিন্ন ফলমূল যথা আনারস,লেবু জাতীয় ফল এবং কাজুবাদাম চাষের জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হতে পারে। এইসব ফলের প্রক্রিয়াকরণ শ্রমিক নির্ভর ও এতে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাশরুম চাষ হতে পারে। মাছ চাষে নব নব দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে হাওর ও নদী বিধৌত এই উপত্যাকায় মাছ উৎপাদন করে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে রপ্তানিও করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে এই উপত্যকায় রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী সাম্প্রতিক বরাক সফরে এসে বলেছেন যে এই উপত্যাকা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের উপর ভাসছে। এই গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হতে পারে তেমনি সিএনজি প্ল্যান্ট তৈরি করে স্থানীয়রা ব্যাবসা করতে পারেন। উপত্যকার নদীসমূহে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন যে সম্ভব সেটা সমীক্ষা করে এক বিশেষজ্ঞ দল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই উপত্যকায় উৎপাদিত হয় প্রচুর বাঁশ। এখানকার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বাশকে কাজে লাগিয়ে বড় না হলেও ছোট ছোট কাগজ কল তৈরি হতে পারে। বাশকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হতে পারে ইথানল যা আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা যেতে পারে।
বরাকে রয়েছে ১২৫ টি চা বাগান। সংস্কার ও পুঁজি বিনিয়োগের অভাবে এসব ধুঁকছে। এই ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ নিলে এই উপত্যাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। যদি নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সিলেটে উন্নতমানের চা উৎপাদন হতে পারে তবে পার্শ্ববর্তী বরাক উপত্যকায় তা না হওয়ায় কোন কারন নেই। এখানে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ছোট ছোট চাবাগান করা যেতে পারে।
বরাক উপত্যকার ভৌগলিক অবস্থান আন্তর্জাতিক বানিজ্যের জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময়। ট্রান্সএশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়াই সুবিধাজনক। এর ফলে বাকি ভারতের সাথে বাংলাদেশ, মায়ানমার সহ পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সংযোগস্থল হতে পারে এই উপত্যাকা যা এখানে বিশাল বানিজ্যের বাজার খুলে দেবে ।
বরাকের মেধাবী শিক্ষিত যুবসম্প্রদায় এই উপত্যাকার অন্যতম সম্পদ যারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন এবং স্বক্ষেত্রে প্রতিভার সাক্ষর রেখে চলেছেন। পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এই মানবসম্পদকে বরাকের সেবাক্ষেত্রে নিয়োজিত করা সম্ভব।
কাজেই যারা বলছেন ' পৃথক হলে খাব কি?' তাঁদের আশঙ্কা ভিত্তিহীন। মনে রাখা এও জরুরী যে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড বা অরুনাচল প্রদেশেও প্রাকৃতিক সম্পদ তেমন কিছুই নেই। তাও তো এইসব রাজ্য টিকে আছে। আর এতো সম্ভাবনা নিয়ে বরাক উপত্যকা আলাদা রাজ্য হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না,এ মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কোন মন্তব্য নেই