আর্ন্তজাতিক সাহিত্য উৎসব ব্যতিক্রমী আলোচনা
বাংলার জনরবের আন্তর্জাতিক সাহিত্য অনুষ্ঠানে সাহিত্যে সিরাতুন নবী-ব্যতিক্রমী আলোচনা
প্রতিনিধি কলকাতা: প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জন্মদিন উপলক্ষে 'সাহিত্যে সিরাতূন নবী' শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী আন্তর্জাতিক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল গত ১ অক্টোবর ২০২৩(রবিবার) পশ্চিম বাংলার জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বাংলার জনরবের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে। আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ, ড. শামিউল ইসলাম এবং কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মুহাম্মদ সাদউদ্দিন।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী মাফরুহা বিনতে মামুন এর মিষ্টি কন্ঠে 'ফুলের মতো ফুল হতে চাই,ফুলের মতো ফুল/ যে ফুল পেল নবীর পরশ/ গন্ধ তার অতুল' নাত এ রসুল পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে আলোচনার শুভ সূচনা হয়।
আলোচনার শুরুতে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক সাংবাদিক মুহাম্মদ সাদউদ্দিন বলেন পশ্চিমবঙ্গের স্কুল,কলেজ যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই অর্থে সিরাত সাহিত্য পড়ানো হয় না। যদিও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিরাত সাহিত্য পড়ানো হয়। পশ্চিম বাংলায় সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, আব্দুল জব্বার এবং কাজী নজরুল ইসলাম সিরাত সাহিত্য নিয়ে অনেক কাজ করেছেন যা আমাদের সম্পদ। তিনি বলেন একবার সাহিত্যিক মুস্তাফা সিরাজ একবার মন্তব্য করেছিলেন যে কাজী নজরুল ইসলাম যদি আরও কয়েক বছর জীবীত থাকতেন তাহলে সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় 'সিরাত কাব্যলঙ্কার' সৃষ্টি করতে পারতেন। প্রসঙ্গত তিনি হরফ প্রকাশনীর শ্রষ্ঠা মরহুম আবদুল আজিজ আল আমানের সিরাত সাহিত্য 'কাবার পথে' হজ কেন্দ্রীক উপন্যাসের কথা উল্লেখ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা 'অনুকার' পত্রিকার সম্পাদক, গবেষক ড. শামিউল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে 'সিরাতুন নবী' নিয়ে এক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। কথা প্রসঙ্গে সাহিত্যে ফিক্সন ও ননফিক্সন বিষয়ে আলোচনা করে তৎকালীন পুঁথি সাহিত্যের তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন বর্তমানে বাংলাদেশে লেখকদের কলমে বেশকিছু ধর্মীয় সাহিত্য রচনা হচ্ছে যা আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশে সিরাত সাহিত্যে উল্লেখ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আল্লামা মৌলানা মহীউদ্দীন খান, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের কথা আলোচনা করেন।
এদিন আলোচনার অন্যতম আলোচক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক হিস্ট্রি এ্যান্ড কালচারের প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ তাঁর আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন যশস্বী সিরাত সাহিত্যিকের সাহিত্য নিয়ে আলোকপাত করেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাহ মুহাম্মদ সগীর এর 'ইউসুফ জুলেখা' কাব্যগ্রন্থ, কবি জয়নুদ্দীন রসুল বিজয়, খন্দকার শামসুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, মীর মশাররফ হোসেন, কবি জসীমউদ্দীন, গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদ, আবদুল সাত্তার, কবি মতিউর রহমান প্রমুখের রচিত সিরাত সাহিত্য ধরে ধরে পাঠ ও আলোচনা করে 'সাহিত্যে সিরাতুন নবী' বিষয়ে আলোচনাকে এক অনন্যমাত্রায় পৌঁছে দেন। তিনি নব প্রজন্মের মধ্যে সিরাত সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করতে 'শিশুতোষ সিরাত সাহিত্য' বেশি বেশি করে সৃষ্টি হওয়া উচিত বলে মনে করেন। তবে এ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় যে সিরাত সাহিত্য রচিত হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন। তিনি খেদ প্রকাশ করে বলেন এখনকার দিনে নতূন প্রজন্ম মুঠোফোনের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে তারা কোনো বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী নয়। যা আগামীর অশনি সংকেত। তিনি বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের সৃষ্ট সিরাত সাহিত্য নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেন।
বাংলার জনরবের কর্ণধার তথা এদিন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেখ ইবাদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্যের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের বিষয়ে সম্পর্কে নিজের অনুভূতির কথা প্রসঙ্গে আমন্ত্রীত বক্তা ড. শামিউল ইসলামের আলোচিত পুঁথি সাহিত্যের উল্লেখ করে বালকবেলায় তাঁর নানীজীর পুঁথি পাঠ এবং তা শোনার স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি বলেন পুঁথি সাহিত্য পাঠ এক ধরণের পল্লি সাহিত্য যা আজ দুষ্প্রাপ্য। তিনি বলেন আজও ফকির দরবেশদের মুখে মুখে গান আকারে সেসব সাহিত্য কিছু কিছু শোনা যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ওই সব পল্লি সাহিত্য সংরক্ষণ করবে কে? তিনি বলেন কলকাতায় ইসলামিয়া লাইব্রেরিতে সেসব সিরাত সাহিত্য এক সময় সংরক্ষিত ছিল। আজ তা প্রায় বিলুপ্ত। সম্প্রতি ফেসবুক পেজে ঔপন্যাসিক ইসমাইল দরবেশের পোস্ট করা বাংলা উল্লেখযোগ্য সিরাত সাহিত্য 'সালেহা' উপন্যাসের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম সঞ্চালক কথাশিল্পী তথা বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক সেখ আব্দুল মান্নান অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্দেশ্য ব্যখ্যার পাশাপাশি সিরাত সাহিত্যের তাৎপর্য ব্যখ্যা করেন। তিনি বলেন বাংলার জনরবের এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দুনিয়ার শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লামের প্রতি একাধারে যেমন আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করব অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যে সিরাতুন নবী বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করব। তিনি বলেন মিলাদুন্নবীর পাশাপাশি নবীজীর ভাবাদর্শ সম্পর্কিত আলাপ আলোচনার মাধ্যে দিয়ে সিরাতুন নবী পালন অবশ্য কর্তব্য। যেহেতু বিশিষ্ট আলোচক মুহাম্মদ সাদউদ্দিনের কথার সূত্র ধরে বলা যায় হযরত মুহাম্মদ প্রবর্তিত "Islam is a complete code of life".
এদিনের অনুষ্ঠানে এক অনন্য প্রতিভার নজির রেখেছে বাংলাদেশের নব প্রজন্মের প্রতিভাবান কিশোরী শিল্পী মাফরুহা বিনতে মামুন। বিশিষ্ট গীতিকার সাহিত্যিক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ লিখিত গান শিল্পী তার সুললিত কন্ঠে, স্পষ্ট উচ্চারণে পরিবেশন করে সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে নান্দনিকতায় ভরিয়ে দেয়।
কোন মন্তব্য নেই