Header Ads

রাজ্যের সব জনগোষ্ঠির মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের আলফা র হুমকির কোনো মুল্য নেই

আসামের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের, রাস্ট্র বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার হুমকি অন্তঃসারশূন্য - বিডিএফ।

গতকাল বরাক পৃথকীকরনের দাবি নিয়ে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এনিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

 আলফা স্বাধীন নামক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন থেকে বলা হয়েছে যে বরাকভূমি যেহেতু প্রথম থেকেই কাছাড়ি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং যেহেতু এই ভূমির উন্নয়নে বাঙালিদের কোন অবদান 
  নেই,তাই এখানে বাঙালিদের  রাজ্যের  দাবি জানানোর কোন অধিকার নেই, এবং এটি বরাকের ভূমিপুত্রদের নায্য অধিকার কেড়ে নেবার ষড়যন্ত্র।  তাঁরা আসামের বাঙালিদের হুমকি দিয়ে এও বলেছেন যে এই দাবি তাঁরা সমর্থন করেন কিনা, আগামী দুমাসের মধ্যে তাঁদের স্পষ্ট করতে হবে। অন্যথা কোন অপ্রিয় ঘটনা ঘটলে তাঁরাই তাঁর জন্য দায়ী থাকবেন।

এই ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে রাজ্যের বাঙালিদের জবাব চাওয়ার অধিকার আলফাকে কে দিল? যে সংগঠন যোরহাটে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশকে মাটি, বাংলাদেশের জল , খাবার খেয়ে পুষ্ট হল,সেখানকার বাঙালি নেতৃত্বের মদতে স্বাধীন রাষ্ট্রের আওয়াজ তুলল তাদের বাঙালিদের প্রতি এত ঘৃনা কেন? তিনি বলেন এভাবে হুমকি দিয়ে গনতান্ত্রিক, নায্য আওয়াজকে রুখে দেওয়া যে সম্ভব নয় সেটা আলফা সহ  আসামের সব সংগঠন,দলকে বুঝতে হবে। তিনি বলেন যে বরাক পৃথকীকরণের দাবি বরাকের সমস্ত বঞ্চিত জনগনের দাবি, এটা বাঙালিদের বা বাঙালি রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি নয়। হয়তো এই উপত্যাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলাভাষী বলেই এই ধরনের বিভ্রান্তি হচ্ছে। এই উপত্যাকার চা জনজাতি, ডিমাসা, মনিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া, হমার,কুকি,কোচ রাজবংশী সহ সবার মাতৃভাষা,কৃষ্টি সংস্কৃতি তথা সমোন্নয়নই বরাক পৃথকীকরণের দাবির মূল অভীষ্ট। তিনি আরো বলেন যে ঐতিহাসিক এবং ভৌগলিক ভাবে বরাক উপত্যকা অতীতে বাংলা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল,  আসামের সাথে কোনদিনই যুক্ত ছিলনা। ১৮৭৪ সালে প্রশাসনিক স্বার্থে এই অঞ্চলকে আসামের সাথে জুড়ে দিয়েছিল বৃটিশরা।বাঙালিরা স্মরণাতীত কাল ধরে এই অঞ্চল তথা মূল ভারতের বাসিন্দা, অন্যান্য অনেক জনগোষ্ঠীর মতো এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি।এই অঞ্চল যখন ত্রিপুরা এবং কাছাড়ি রাজ্যের অধীনে ছিল তখনো   রাজভাষা হিসেবে বাংলাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।  তিনি  আলফার সদস্যদের বরাক নিয়ে মন্তব্য করার আগে এই অঞ্চলের ইতিহাস পড়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।

 বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন যে এসব করে এখনকার নায্য অধিকার ও দাবিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি এও বলেন  আলফা আন্দোলনের  মূলেও  ছিল কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকার কতৃক এই রাজ্যের বঞ্চনা, বৈষম্যের প্রতিবাদ। আসামের তেল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার লব্ধ রাজস্বের প্রায় কিছুই  কেন আসাম পায়না, কেন আসামের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে বৃহত্তর ভারতে মূল্যহীন করে রাখা হয়েছে, কেন বহির্ভারতে অসমিয়াদের চীনের অধিবাসী বলে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হয়,এইসব  ছিল আলফার আন্দোলনের মূল ইস্যু। তাঁরা চেয়েছিলেন বা এখনো চান ভারত রাস্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি পৃথক দেশ গড়তে, যাতে মূল ভারত ভূখন্ড তাঁদের স্বাভিমান ও স্বতন্ত্র পরিচিতিকে মান্যতা দিতে বাধ্য হয়।  এজন্য তাঁরা অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন , তাঁদের হিংসার বলি হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

প্রদীপ বাবু বলেন যে একই ধরনের বঞ্চনা বৈষম্যের শিকার বরাক উপত্যাকা। এখানের বনজ, খনিজ সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডারকে ব্যাবহার করে রাজস্ব আদায় করছে রাজ্য সরকার, অথচ এসবের বিকাশ,তথা এই উপত্যাকার  উন্নয়ন নিয়ে দশকের পর দশক ধরে  তাঁদের কোন‌ মাথাব্যথা নেই। আসাম তথা বরাকের বাঙালিরা মাত্রেই এই রাজ্যে ' কেলা বঙাল' অথবা ' বাংলাদেশী' । বরাকের সবাই সন্দেহজনক বাঙলাদেশী, তাঁরা ডি ভোটার, তাঁদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প, তাঁদের সরকারি চাকরিতে চূড়ান্ত বঞ্চনা । তাদের নাগরিক পরিষেবা তলানিতে - এসব নিয়ে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের কোন হেলদোল নেই। তাই একই কারণে তাঁরা পৃথকীকরণের ডাক দিতে  বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা  আলফার মতো ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাস্ট্রের দাবি জানাননি, তাঁরা ভারতীয় সংবিধান মেনে ভারতেরই সীমার মধ্যে একটি অঙ্গরাজ্য থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন আলফা স্বাধীন যদি দায়িত্ব নিয়ে বরাকবাসীর সমস্যা সমাধানে ব্রতী হয়,যদি বিডিএফ এর সতেরো দফা দাবি মেনে নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সরকারকে বাধ্য করায়  তবে তাঁরাও এই দাবি থেকে অবিলম্বে সরে আসবেন। 

তবে এই ধরনের হুমকি নিয়ে তাঁরা আদৌ চিন্তিত নন কারণ একটি গনতান্ত্রিক রাস্ট্রের শাসনব্যবস্থা এই ধরণের হুমকিতে চলেনা। প্রদীপ দত্তরায় আলফা স্বাধীনের এই চিঠির ব্যাপারে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্যের বাঙালিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উপর বর্তায়। তাই রাজ্যের বাঙালিরা নয়, আগামীতে কোন অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে তারজন্য সম্পুর্ন দায়ী থাকবেন সরকারই। তবে তিনি এও বলেন যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার যেসব নাগরিক শিক্ষা ও জীবিকা সূত্রে বরাকে থাকেন, যেসব অসমিয়ারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন তাঁদের নিরাপত্তার সম্পুর্ন গ্যারান্টি দিচ্ছে বিডিএফ কারণ তারা কখনোই হিংসায় বিশ্বাসী নন, এবং এটাই বরাকের ঐতিহ্য।

প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে পৃথক বোড়োল্যান্ড নিয়ে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছে,পৃথক কামতাপুর রাজ্যের ডাক দিয়েছেন কোচ রাজবংশীরা। কোথায়,এসব নিয়ে তো আলফাকে কোন বিবৃতি দিতে দেখা যায়না। শুধু পৃথক বরাক পৃথকীকরণ নিয়েই তাদের মাথাব্যথা কেন সে উত্তর তাঁদের দেওয়া উচিত।

বিডিএফ সদস্যরা এদিন বলেন তাঁরা তাঁদের নায্য দাবি নিয়ে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বরাকের সমস্ত জাতি জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.