Header Ads

পৃথক বরাক এ আপত্তি নেই সরকারের একথা মুখ্যমন্ত্রীর .মুখে অন্য.কোনও. কৌশল নেই তো

বরাক পৃথকে আপত্তি নেই সরকারের! অসমের  স্বাভিমান রক্ষার কৌশল মুখ্যমন্ত্ৰীর
বীরেশ্বর দাস
গুয়াহাটি৷ ৮ সেম্বের
পৃথক বরাক গণদাবি কিনা, সেটা স্পষ্ট নয় আজও৷ কারণ, দীৰ্ঘদিন ধরে বিক্ষিপ্তভাবে এই দাবি উঠেছে৷ সংঘবদ্ধভাবে আজও তেমন কোনও আন্দোলন গড়ে ওঠেনি  অসম থেকে বরাক উপত্যকাকে পৃথক করার দাবিতে৷ কিন্তু সদ্য বরাক সফরে গিয়ে সম্ভবত আগ বাড়িয়েই মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা পৃথক বরাকে সরকারের ‘গ্ৰিন সিগন্যাল’ দিয়ে এসেছেন৷ কারণ, ‘ডিভাইড অসম ৫০৫০ বড়ো জনগণের এই দাবিতে কোনও দিনই সায় দেয়নি সরকার৷ অথচ না চাইতে মেঘের মতোই পৃথক বরাকে সরকারি সমৰ্থনের কথা জানিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী৷ 
দেশভাগের আগে থেকেই বাংলাভাষী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অসমিয়া জনমনে৷ কারণ, বাঙালিরা অসমে রইলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে অসমিয়া ভাষাকে রাজ্য ভাষা করার পথে বাধা থাকে৷ কিন্তু দেশ ভাগের পর কাছাড় এবং সিলেট জেলার একাংশ অসমের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় বরাকের বাঙালিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বাড়ে৷ অসমিয়া বুদ্ধিজীবীরা, কাছাড়কে অসমের ‘ক্যান্সার’ বলে অভিহিত করেন৷ অসম থেকে কাছাড় বিছিন্ন করে দেওয়ার দাবিও ওঠে অসমিয়া জাতীয়তাবাদী মহলে৷ 
তখন থেকেই বিভিন্ন ঘটনাক্রমে বিধানসভায়ও মাঝেমধ্যেই ধ্বনিত হয়, কাছাড় হচ্ছে অসমের ‘ক্যান্সার’৷ বাঙালিদের জন্য অসমিয়া ভাষাকে অসমের রাজ্য ভাষা করা সম্ভব নয়, এই আশঙ্কায় গোড়া থেকে বরাক-বিরোধী এক ছবি রয়েছে অসমিয়া জনমনে৷ বরাকে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্ৰয়াসও কাৰ্যত ব্যৰ্থ হয়েছে বারবার৷ ফলে বরাকের প্ৰতি ক্ষোভ, বিদ্বেষ দুটোই বেড়েছে৷ কিন্তু অসম থেকে বরাক উপত্যকাকে বিছিন্ন করা সম্ভব হয়নি মূলত বরাকের দিক থেকে তেমন কোনও দাবি না থাকায়৷ দীৰ্ঘদিনের সরকারি বঞ্চনা সত্ত্বেও বরাকের জনগণ সংঘবদ্ধভাবে কোনও দিনই পৃথকীকরণের পক্ষে আওয়াজ তুলেননি৷ 
উোদিকে, অসম থেকে বিছিন্ন করে পৃথক বড়োল্যান্ড গঠনের দাবিতে একপ্ৰকার জঙ্গি আন্দোলন করেন বড়ো জনগণ৷ দীৰ্ঘদিন হিংসা, রক্তপাতের পরও অবশ্য স্বাধীন রাজ্য দেওয়া হয়নি৷ তার বদলে, সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অধীনে স্বশাসনের অধিকার দেওয়া হয়েছে বড়োদের৷ কিন্তু গণদাবি না থাকায় বরাকের ভাগ্যে সেটাও জুটেনি৷ তবে শোচনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শু করে উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার ক্ষোভ থেকে মাঝেমধ্যে অবশ্য বিক্ষিপ্তভাবে অবশ্য পৃথক বরাকের দাবি ওঠে বরাকের পারেও৷ কিন্তু আজ অবধি খুব একটা সংঘবদ্ধ রূপ নেয়নি সেই দাবি৷ 
এর কারণও অবশ্য রয়েছে৷ বরাকে বরাবর শাসক দলের মজবুত অবস্থান থাকে৷ কংগ্ৰেসের শাসনে কংগ্ৰেস, এখন বিজেপি৷ ফলে শাসক দলের নেতা-কৰ্মীরা পৃথক বরাকের আওয়াজে কখনই সামিল হন না৷ তার ওপর বরাকের দুই প্ৰধান জনগোষ্ঠী হিন্দু, মুসলমানের মধ্যেও পারস্পরিক সদ্ভাব না থাকাও এর অন্যতম অন্তরায়৷ হিন্দুদের ধারণা, বরাক উপত্যকা পৃথক হলে সেটা বাংলাদেশের এক টুকরো হয়ে যাবে৷ আবার কাশ্মীরের মতো সমস্যা সৃষ্টি আশঙ্কাও শোনা যায় হিন্দুদের মধ্যে৷ মুসলমানদের মধ্যে একাংশ এবার নিজেদের ‘খিলঞ্জিয়া’ দাবি করে অসমিয়া জনগণের সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করেন৷ তখন আবার মাতৃভাষা বাংলার মৰ্যাদার বিষয়টিও পেছনে পড়ে থাকে৷ 
কিন্তুকংগ্ৰেস সরকারের আমলে তরুণ গগৈ কিংবা বিজেপি ১.০ সরকারের মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সোনোয়াল কোনও দিনই পৃথক বরাকে সমৰ্থন থাকার কথা বলেননি৷ সৰ্বানন্দ বরং ‘বরাক, ব্ৰহ্মপুত্ৰ, পাহাড়, ভৈয়াম’ শব্দবন্ধ সমস্বরে ব্যবহার করতেন৷ কিন্তু সদ্য বরাকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী পৃথক বরাকের দাবিতে সরকারের সমৰ্থন থাকার কথা পরোক্ষে ঘোষণা করে বিছিন্নতা আন্দোলনের এক ক্ষেত্ৰ তৈরি করে দিয়ে এসেছেন বলে মনেই হচ্ছে৷ কারণ, ডিলিমিটেশন বা বিধানসভা-লোকসভা কেন্দ্ৰের পুনৰ্বিন্যাসকে কেন্দ্ৰ করে বরাকের তিন জেলায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে৷ ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে বিধানসভায় বরাকের প্ৰতিনিধিত্ব যে অনেকটা দুৰ্বল করা হয়েছে, সেটা বুঝতে বাকি নেই কারও৷ 
এই কারণে মাত্ৰ ১৪ লক্ষ বড়ো জনগণের বসবাস বড়োল্যান্ডে বিধানসভা কেন্দ্ৰের সংখ্যা ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৫ করা হয়েছে৷ অথচ হিন্দু, মুসলমান মিলে ৪০ লক্ষের বেশি বাঙালির বসবাস বরাকে বিধানসভা কেন্দ্ৰের সংখ্যা  ১৫ থেকে কমিয়ে ১৩ করা হয়েছে৷ শাসক দলের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে এনিয়ে৷ কিন্তু মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে পারছেন না৷ ডিলিমিটেশনের বৈষম্যের প্ৰতিবাদ করতে গিয়ে কিছু দিন আগে গুয়াহাটিতে নিৰ্বাচন কমিশনের সামনেই পৃথক বরাকের দাবি তুলেছেন প্ৰাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব৷ বরাকের সঙ্গে গুয়াহাটির বিশাল দূরত্ব, অন্য রাজ্যের ওপর দিয়ে যাতায়াত, শোচনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, বরাকের তিন জেলায় নিজেদের রাজস্ব আমদানির ব্যবস্থা থাকা এবং পৃথক রাজ্য গঠনের মতো জনসংখ্যা থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বরাককে পৃথক করা ছাড়া সমস্যা সমাধানের আর কোনও উপায় নেই বলে দাবি করেন তিনি৷
ফলে ডিলিমিটেশনকে কেন্দ্ৰ করে পৃথক বরাকের পক্ষে এক ক্ষেত্ৰ যে তৈরি হয়ে রয়েছে, সেটা জেনেই সম্ভবত মুখ্যমন্ত্ৰী সেই সম্ভাবনা উসকে দিয়ে এসেছেন৷ সংঘবদ্ধ দাবি উঠলে সরকার আপত্তি করবে না বলেও জানিয়ে এসেছেন তিনি৷ অবশ্য হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা নেতৃত্বাধীন সরকার অনেক দিন ধরে সেই সম্ভাবনার ওপর কাজ করছে৷ অসমিয়া জাতীয়তাবাদী ভাবনার ভিত্তিতে অসমিয়া ভাষাকেই অগ্ৰাধিকার দিয়ে আসছে সরকার৷ অসমিয়া ভাষার অস্তিত্ব বজায় রাখা এবং অসমিয়াভাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার বাঙালি হিন্দুদের ওপর ভাষা ত্যাগের চাপ দেওয়া হচ্ছে নানা ভাবে৷ বাঙালি মুসলমানরা অনেক আগেই মাতৃভাষা বিসৰ্জন দিয়েছেন, কিন্তু বাঙালি হিন্দুরা এখনও আঁকড়ে  আছেন নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি৷ তাই ক’দিন  আগে শিলাপথারে মুখ্যমন্ত্ৰী নিজেই বলেছেন, বাঙালিদের অসমিয়া ভাষাকে আপন করে নিতে হবে৷ উোদিকে, বরাক নিয়ে সেই ভাবনা নেই তাঁদের৷ বরং বাংলাভাষী অধ্যুষিত বরাককে নিজের মতো ছেড়ে দেওয়ার পক্ষেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী৷ সেই ভাবনা থেকেই সম্ভবত বরাক পৃথক করে অসমের সমস্যা সমাধানের পথ দেখছেন তিনি৷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.