অসমিয়া জাতির সঙ্গে বি ডি এফ এর কোনো বিরোধ নেই কেবল বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ :: প্রদীপ দত্ত রায়
নয়া ঠাহর গুয়াহাটি ,কলকাতা
অসমিয়া জাতির সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই,দল নির্বিশেষে বরাকের প্রতি দিশপুরের সরকারের ধারাবাহিক বঞ্চনা, বৈষম্যের জন্যই আমরা বরাক পৃথকীকরণের ডাক দিয়েছি - প্রদীপ দত্তরায়।
বরাক পৃথকীকরণের দাবি এবং তার কারণসমূহ সারা ভারতবাসীর কাছে তুলে ধরতে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর দশ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল। কিন্তু উক্ত সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গৌহাটির বৈদ্যতিন চ্যানেল সমুহতে বিডিএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে অহেতুক কুৎসা রটানো হচ্ছে। এই নিয়ে আজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
এদিন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে দত্তরায় বলেন যে অসমিয়া চ্যানেলে তাঁকে অসমিয়া বিদ্বেষী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে বরাক ডেমোক্রটিক ফ্রন্ট কখনই অসমিয়া জাতির বিরোধী নয়। তিনি বলেন যে বাঙালি ও অসমিয়া উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐতিহাসিক মেলবন্ধনের প্রেক্ষাপট রয়েছে। উভয় সম্প্রদায়ের উদারমনা মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক রয়েছে। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচুর বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। বিডিএফ সর্বদাই পারস্পরিক সম্প্রীতিতে আস্থাবান। কিন্তু এও সত্যি যে স্বাধীনতার পর থেকেই দিশপুরে যেদলই ক্ষমতায় আসুক না কেন বরাক উপত্যকা সর্বদাই তাঁদের বৈমাত্রেয় সুলভ মনোভাবের শিকার হয়েছে যাতে সর্বশেষ সংযোজন সাম্প্রতিক ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া ।এর মাধ্যমে বরাক উপত্যকার সীমিত রাজনৈতিক কন্ঠকে সঙ্কুচিত করতে বিধানসভার দুটি আসন বরাক থেকে কর্তন করা হয়েছে। এই বঞ্চনা, বৈষম্যের জন্যই বরাক পৃথকীকরণের ডাক দিয়েছে বিডিএফ। তিনি বলেন যে আসাম থেকে বহু আগে বিচ্ছিন্ন হয়েছে মেঘালয়, মিজোরাম, অরুনাচল প্রদেশ। এখনও পৃথক বোড়োল্যান্ড,কোচ রাজবংশী দের রাজ্য ,
অহোমল্যান্ড ইত্যাদির দাবি উঠছে। যদি তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে থাকেন তাহলে যারা এইসব দাবি তুলেছিলেন বা এখনও তুলছেন সবাইকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা উচিত। তিনি বলেন যদি দীর্ঘদিন ধরে ভাইয়ে ভাইয়ে মনোমালিন্য চলে তবে আলাদা সংসার করে নেওয়াই দস্তুর। এতে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক চিরকাল ভালো থাকে। তিনি বলেন যে একই ভাবে বরাক আলাদা হলে উভয় উপত্যাকার মধ্যে চিরকাল সুসম্পর্ক বজায় থাকবে বলে তিনি নিশ্চিত। তিনি এও বলেন যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অনেক বিশিষ্ট অসমিয়া বুদ্ধিজীবীও তাই মনে করেন এবং তারা তাই বরাক পৃথকীকরণকে সমর্থনও করেন।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন যে কলকাতায় কেন সাংবাদিক সম্মেলন করা হল এনিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তিনি বলেন এর আগে আকসার সভাপতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনের সময় তাঁরা আগরতলা,কলকাতা,দিল্লি, মুম্বাই সহ বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তাঁদের দাবির সপক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য। এবারেও একই উদ্দেশ্যে কলকাতায় এই সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। আগামীতে দিল্লিতেও সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। এছাড়া জেলা ভিত্তিক গনকনভেনশন সহ আরো প্রচুর কর্মসূচি নেওয়া হবে আগামীতে।
প্রদীপ বাবু বলেন যে বরাকের বঞ্চনার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। বাঙালিদের জন্য গোয়ালপাড়ায় তৈরি করা হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প যেখানে নির্দোষ বাঙালিদের বাংলাদেশী বলে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। এন আর সি প্রক্রিয়া করে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্বকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এদের আধার কার্ড বাতিল করে রাখা হয়েছে। কোন সরকারি অনুদান বা চাকরি পাওয়া তাদের পক্ষে দুস্কর।
রাজ্যের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ যে গোষ্ঠী তাঁদের মাতৃভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়না অথচ অবলীলাক্রমে মাত্র ২৪ লক্ষ জনসংখ্যার বোড়ো ভাষার সরকারি সহযোগী ভাষার স্বীকৃতি জুটে যায়। বরাকে সরকারি চাকরি নেই। ৮৬০০০ নিয়োগে বরাকের প্রার্থীদের সাফল্যের হার দেড় শতাংশ। এটা কিন্তু রাজ্যের বিধানসভায় সরকারের দেওয়া তথ্য। বরাকে রেজিস্ট্রীকৃত বেকারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। এসবের কারণ কি তা অনুসন্ধান করতে গৌহাটির বৈদ্যুতিন চ্যানেলে যারা এইসব অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, তাঁদের প্রতি অনূরোধ জানিয়েছেন তিনি।
প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে বরাকের প্রতি বঞ্চনা,বৈষম্য যে শুধু এই সরকারের আমলে হয়েছে তা মোটেই নয়। যে কংগ্রেস দল বরাক পৃথকীকরণের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের সরকারও বরাক বঞ্চনার জন্য একই ভাবে দায়ী। তিনি বলেন হারাঙ্গাজাও এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মিছে অজুহাত দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর স্বপ্ন শিলচর সৌরাস্ট্র মহাসড়কের কাজ দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। বরাকের উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকা ব্যায় করা হবে এই লোভ দেখিয়ে জনগনের সমর্থন আদায় করে,এক পয়সাও খরচা করেনি পূর্বতন কংগ্রেস সরকার। এছাড়া বিগত কংগ্রেস আমলে দুর্ণীতি ও স্বজনপোষনের আখড়া হয়ে উঠেছিল এই উপত্যাকা।
প্রদীপ বাবু বলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গত দু'বছর ধরে বরাক বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব রয়েছে। ডিলিমিটেশনের পরও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন যে যদি তিনি আলোচনায় বসেন এবং বরাকের নায্য দাবিসমূহ মেনে নিতে আন্তরিক হন তবে পৃথকীকরণের ব্যাপারে তাঁরা পুনর্বিবেচনা করবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নীরব থেকেছেন। তাই বাধ্য হয়ে তারা পৃথকীকরণের ডাক দিয়েছেন।
প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে বরাকের সংবাদ মাধ্যমের উপর অনেক বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই তাঁরা ইচ্ছে থাকলেও বিডিএফ এর বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন না। তিনি বলেন যে বলা হচ্ছে পৃথক বরাকের দাবিতে জনসমর্থন নেই। তিনি বলেন যে সেটা প্রমাণ হবে কি করে ? সরকার নিজেই তো ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে। মিটিং, মিছিল করার অনুমতি নেই। তিনি বলেন যে সরকার এটা তুলে দিলে তারা দশহাজার মানুষের মিছিল করে দেখিয়ে দেবেন এই দাবিতে জনসমর্থন আছে কি নেই। তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরে বরাকের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে বরাকের মানুষের মনোভাব কোন স্রোতে বইছে এটা বুঝতে তাঁর কখনই ভুল হয়না। তিনি বলেন বিজেপি, কংগ্রেস প্রভৃতি জাতীয় দলের প্রচুর নেতা কর্মীরা তাকে এই দাবির প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁরা এখন প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না। এবং পৃথকীকরণ যে বরাকের গনদাবি হয়ে উঠেছে সেটা আগামীতে অবশ্যই প্রমানিত হবে।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই