Header Ads

শ্রী লঙ্কা কে একা হাতে শেষ করেন মহম্মদ সিরাজ

মোহাম্মদ সিরাজকে ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা সবাই চেনেন। আজকের পরে হয়ত গোটা দেশ কম বেশি চিনবে। এশিয়া কাপের মত টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে একা হাতে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কারিগর এই মোহাম্মদ সিরাজ। 

খুব বেশিদিন হয়নি সিরাজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের। কিন্তু এর মধ্যেই ওর কিছু কিছু কীর্তিকলাপ ভারতীয় ক্রিকেটের প্রবাদে স্থান পেয়ে গিয়েছে। আজ সেই তালিকায় সিরাজের আরেক কীর্তি যোগ পেল। সেকথায় পরে আসছি।

তার আগে বলুন, কোনদিনও দেখেছেন কোন ভারতীয় ক্রিকেটারকে মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে কেঁদে ফেলতে? হ্যাঁ, কেঁদে ফেলেছিল সিরাজ। সেই ভিডিও প্রভূত ভাইরাল হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু তার পিছনের রক্ত ঘামের ইতিহাস অনেকের অজানা।

হায়দ্রাবাদ শহরের ভূমিপুত্র সিরাজ। সিরাজের বাবা মোহাম্মেদ ঘাউস এই নিজামের শহরের এক সাধারণ অটো চালক ছিলেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের স্বপ্নগুলি যেমন চোখের কোণের জলের মত শুকিয়ে মরে যায়, সিরাজেরও তাই যেত, যদি না ওর বাবা জেদ ধরতেন যে ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়েই ছাড়বেন।

প্রতিভাবান সিরাজ যখন প্রথম টিম ট্রায়ালে ডাক পেল, তখন ওর একজোড়া স্পোর্টস শু দরকার, দাম চার হাজার টাকা। সিরাজের বাবা সারা রাত অটো চালিয়ে ভোরবেলা ছেলের জুতো হাতে বাড়ি ফিরলেন।

এরপর রঞ্জি ট্রফি, আইপিএল, ভারতীয় এ দল হয়ে, ২০১৯ সালে ভারতীয় সিনিয়র দলে ডাক। অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ। বলাই বাহুল্য ছেলের সাফল্যের গর্বে সিরাজের বাবা তখন আহ্লাদিত। কিন্তু শরীরটা সম্প্রতি ভালো যাচ্ছে না যে।
 
সেই অস্ট্রেলিয়া সফর চলাকালীনই অকস্মাৎ একদিন চলে গেলেন সিরাজের বাবা। সিরাজের পুরো পৃথিবীটা ভেঙে পড়েছিল তখন। কান্না বাঁধ মানছিল না যেন। রবি শাস্ত্রী আর বিরাট কোহলি মিলে সিরাজকে সামলে ছিলেন তখন। 

দলের স্বার্থে দেশেও ফেরেনি সিরাজ, শেষবারের মত দেখেনি আর নিজের বাবাকে। বরং বাবার স্বপ্ন সফল করায় মন দিয়েছিল। এর কিছুদিনের মধ্যেই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয় সিরাজের। আর এরপর সিডনি ক্রিকেট মাঠে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সিরাজ। পরে ইন্টারভিউয়ে জানিয়েছিল যে সেই মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ছিল ওর।

সিরাজের আরেকটা ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। ওই অস্ট্রেলিয়া সফরেই ভারতীয় দল আর অস্ট্রেলিয়া এ দলের অনুশীলন ম্যাচ চলাকালীন একটি ঘটনার জন্য। 

সেই ম্যাচে একসময় ব্যাট করছিল যশপ্রীত বুমরা, আর বল হাতে ছিল ক্যামেরন গ্রিন। নন স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়িয়ে ছিল সিরাজ। হঠাৎ বুমরার মারা একটি শট সোজা গিয়ে লাগে গ্রিনের মুখে। সিরাজ তৎক্ষণাৎ হাত থেকে ব্যাট ফেলে দৌড়ে যায় বোলার গ্রিনের কাছে। পিঠে হাত রেখে খোঁজ নেয় সে ঠিক আছে কিনা। অন্য অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরা নয়, বিপক্ষের আহত খেলোয়াড়ের কাছে সবার আগে ছুটে গিয়েছিল সিরাজ নিজেই। সারা পৃথিবীর কাছেই এ ছিল স্পোর্টসম্যানশিপের এক অনন্য নিদর্শন।

আর আজকে, সিরাজ খেলার মাঠে রেখে গেল ওর সিংহ হৃদয়ের আরেক নজির। না, ছয় উইকেট নেওয়া নয়, অথবা এক ওভারে চার উইকেট নেওয়াও নয়, সিরাজ মন জিতে নিল খেলার শেষে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলাকালীন। ম্যাচ সেরা হওয়ার পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার অর্থমূল্যের পুরস্কার সিরাজ পুরোটাই দান করে দিল শ্রীলঙ্কার গ্রাউন্ড স্টাফদের। সেইসব গ্রাউন্ড স্টাফ যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও অধিকাংশ ম্যাচ সম্পূর্ণ করা গিয়েছে।

আসলে সিরাজের পক্ষেই এটা করা সম্ভব। ওর চোখ ঠিক চিনে নিয়েছে সেইসব মাঠ কর্মীদের মধ্যে থাকা পিতাদের, যারাও হয়তো চোয়ালে চোয়াল চেপে স্বপ্ন দেখে যে তার ছেলে একদিন ক্রিকেটার হবে। জাতীয় দলের হয়ে খেলবে এই প্রেমদাসা স্টেডিয়ামেই। যেখানে একদিন প্লাস্টিকের শীট টেনে নিয়ে গিয়ে পিচ ঢাকা দিত তার বাবা। হবে, ঠিক হবে একদিন। সিরাজ তো সেই স্বপ্নই দেখাল।

এই উপমহাদেশের প্রতিটি সাধারণ নিম্নবিত্ত পিতা, সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ঘুমন্ত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে যে অসম্ভবের স্বপ্ন দেখে, তারই আরেক নাম মোহাম্মদ সিরাজ।

 #mohammadsiraj #asiacup #ICC #AsiaCupFinal #INDvSL #asiacup2023

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.