দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যালয়ে বাংলা সহ 22 টি জাতীয় ভাষাতে শিক্ষা দান?
*কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত বিদ্যালয়ে ২২টি জাতীয় ভাষা মাধ্যমেই শিক্ষা দেবে ?--আসুন আমরা স্ব স্ব রাজ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষা শিক্ষার দুয়ার খুলতে এই সুযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ি।"* নীতীশ বিশ্বাস, সম্পাদক, সর্বভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চ। ----------------------------------
গত ২১শে জুলাই ২০২৩ ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটলো। নয়া শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে এখন থেকে ভারতের ২২টি জাতীয় ভাষায় তারা স্কুল শিক্ষা দেবেন।একটা পেপার মাত্র নয় ; কেন্দ্রীয় ভাবে সিবিএসসি-র সমস্ত স্কুলে পুরো শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলা, অসমিয়া, ওড়িয়া সহ ২২টি জাতীয় ভাষা। লটারি তে ২২কোটি টাকা পাওয়ার মতো দিবা স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। কিন্তু না কেন্দ্রীয় শিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা *সেন্ট্রাল বোর্ড ওব সেকেন্ডারি এডুকেশন ( CBSE)* এ বিষয়ে যে সার্কুলার দিয়েছে তার নং হল : CBSE/DIR(ACAD)/2023 July 21, 2023Circular No: Acad-84/2023 ।তাতে সি-বি-এস-ই-,র ডাইরেকটর ড.যোশেফ ইমানুয়েল জানিয়েছেন যে তাদের অনুমোদিত সমস্ত স্কুলে শিক্ষাদান করা হবে ভারতের প্রধান ২২টি ভাষা মাধ্যমে। যেখানে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ,নবোদয় বিদ্যালয় সহ সব রাজ্যে তাদের যে সব বিদ্যালয় আছে তার সর্ব ক্ষেত্রে ।
যারা *আমরা ভারতে মাতৃভাষা তথা ভাষা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করি* তারা একক ভাষা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সব জাতীয় ভাষা তথা সংবিধানের অষ্টম শিডিউলের ২২টি ভাষা ও সেই ভাষা মাধ্যমে যথাস্থানে শিক্ষাদানের দাবি করে আসছিলাম দীর্ঘ দিন ধরে। নানা অজুহাতে কর্তৃপক্ষ তা অমান্য করে আসছিল। এমন কি আন্দামান ও ঝাড়খন্ডের মতো যেসব রাজ্যের বিদ্যালয়ে এন সি ই আর টি-র বাংলা বই নেই বলে তাদের হিন্দি বই প’ড়ে বাংলায় উত্তর দিতে হোত। সেই অভাগা ছাত্র ছাত্রীরা তাদের অপুষ্ট শিক্ষা জীবন শেষ করতে বাধ্য হচ্ছিল ।জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতে ২য় প্রধান মাতৃভাষা বাংলা (পৃথিবীর ৪র্থ ভাষা) ভাষার বইও এন সি ই আর টি ( NCERT) ছাপেনি। আর নানা সময়ে এক একটি আইনী অজুহাতে বহু বছরের আইনের নামে বে-আইনী কাজ কেন্দ্রীয় সরকার করে গেছে। কারণ আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ছেলেমেয়েরা তো প্রধানত ইংরেজি মাধ্যমেই পড়াশুনা করে আর নেতারা তাদের ভাষণে মাতৃভাষা প্রেম দেখিয়ে ভোটের বাক্সো ভরে।
ফলে *ভারতের মতো নানা ভাষা নানা জাতির সম্মেলনে গঠিত এই মহাজাতীয় জীবনে সত্যিকার “ভাষাগণতন্ত্রে*”র টুটি চেপে চেপে এখন তার মৃত্যুর দশা । এই অভিশাপের মোচন যে এই আদেশ নামায় হওয়া উচিত, তা অবশ্য আপাত ভাবে স্বীকার্য। তবে বামুন বাড়ির খাওয়া না আঁচালে বিশ্বাস নেই। তাই মহান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নিবেদন আপনারা জাতীয় ভাষাগুলির শুকনো নদীতে যদি সত্যি জোয়ার আনতে চান তাহলে আপনাদের আয়ত্তাধীন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ও নবোদয় বিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম ভাষাশিক্ষার পরিকাঠামোর উন্নয়নের বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ দিন। যে স্কুলে ১০% কোনো ভাষার ছাত্র আছে সেখানে সেই ভাষাকে প্রথমে একটি মেজর ভাষা হিসেবে পড়ানোর জন্য উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, ক্লাশ ঘর সহ সার্বিক পরিকাঠাম প্রস্তুত করুন। তার সিলেবাস ও সেই অনুসারে উপযুক্ত পাঠ্যগ্রন্থাদির ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করুন। তার পর আকাশ থেকে লাফ দিলে আমদের শিক্ষামা সরস্বতী দেবীর কোমল হাত পা অন্তত রক্ষা পাবে ।
*বাংলা শিক্ষার নিজের কথা*:
বাংলা শিক্ষার কথা বিষয়ে বলতে পারি আন্দামানে ও ঝাড়খণ্ডে বাস্তবত অর্ধেকের বেশি বাংলাভাষী,যারা জীবন যাপনের জন্য,চাকুরীর জন্য বাংলাকে তো ব্যবহার করতে পারেন না, যা পশ্চিমবঙ্গে এখনও কিছুটা হলেও করা যায় – তাই ঘোষিত অবাঙালি রাজ্যের চাকুরী ও জীবিকার ক্ষেত্রে। পশ্চিম বঙ্গের আংশিক সুযোগও যদি কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা না করেন তথা *রেল,ব্যাংক সহ বেসরকারী ক্ষেত্রে ইংরেজির সঙ্গে যেখানে হিন্দি ব্যবহার করা যায় সেখানে বাংলা সহ আঞ্চলিক ভাষাগুলো ব্যবহারের আইনী স্বীকৃতি না থাকলে আঞ্চলিক ভাষা শিখে মানুষ খাবে কি? যাবেন কোথায় ? আমরা তাই দৃঢ়তার সঙ্গে ( ক) *পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে দাবি করি*: ১। হিন্দি/ইংরেজি/উর্দু মাধ্যমসহ এ রাজ্যের সমস্ত স্কুলে একটি ভাষা হিসেবে আবশ্যিক ভাবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা পড়াতেই হবে। ২। রাজ্যের প্রশাসনিক সব কাজ মুখ্যত বাংলায় করতে হবে।
৩। বহির্বঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষীদের শিক্ষা সহ নাগরিক অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রকে সুনিশ্চিত করতে রাজ্যে একজন কেবিনেট সতরের বাংলা ভাষা উন্নয়ন ও ভারতে বাংলা ভাষী কল্যাণ মন্ত্রী রাখতে হবে।
*কেন্দ্রের কাছে দাবি*। ১।কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সহ নানা রাজ্যের কেন্দ্র-অনুমোদিত সমস্ত স্কুলে ভারতের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা বাংলা সহ ২২টি ভাষায় পড়ানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার প্রথমে আমাদের দাবি দ্বিতীয় প্রধান মাতৃভাষা বাংলা পড়ার উপযুক্ত সুযোগ, যথার্থ পরিকাঠামো প্রথমেই গড়ে তুলতে হবে।
২। নানা রাজ্যে র জেলাস্তরে ১০-২০%বালা মাতৃভাষী মানুষের বাস হলে সে জেলার চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পশ্চিম বঙ্গের মতো কেন্দ্রীয় সরকারী অফিস, ব্যাংক, রেলসহ সমস্ত সর কারী ও বেসরকারী দপ্তরের নিয়োগে প্রার্থীকে
বাংলা ভাষা জানাপ্ররথীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সবভারতীয় *কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত পরীক্ষা বাংলায় দেবার ব্যবস্থা করতে হবে*। ২। *ভারতের রাষ্ট্র ভাষা হিন্দি নয়* ; তা হলে কেনো কেবল সেই ভাষায় সমস্ত চাকুরির পরীক্ষা নেওয়া হবে ? ভারতে *ভাষা গণতন্ত্র** রক্ষা ও তার প্রসার ঘটাতে হবে। ৪। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে ভাষিক সংখ্যালঘুদের জন্য সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার সঠিক ভাবে মান্য করতে হবে । বই নেই বলে রাজ্যে রাজ্যে বাংলা স্কুল গুলিকে জোর করে বন্ধ করার চক্রান্ত এখন ই অবসান ঘটাতে হবে।
৫। জন সংখ্যার-১০% বাংলা বা কোন ভাষাভাষী যে রাজ্যে আছেন ,সেখানে ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে ভারতের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা বাংলার যথার্থ মর্যাদা দিতে হবে । *৬। সংসদে বাংলায় ভাষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো উন্নত করে জীবন্ত রাখতে হবে*। ৭।নতুন শিক্ষা নীতিতে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বাংলা ভাষার অধিকার সুরক্ষিত করতে একক ভাষা আগ্রাসন রোধ করতে হবে এবং জীবি কা সুনিশ্চিত করতে হবে । ৮। ক) *কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক* সংবিধানে আমাদের রাষ্ট্রকে *কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন* বলা হলেও আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি দিনে দিনে সর্ব ক্ষেত্রে *ভাষা গণতন্ত্র* নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে । কেবল মাত্র তামিল ভাষার কিছুটা অধিকার থাকলেও আর ২০টি ভারতীয় প্রধান ভাষাকে হিন্দির আগ্রাসনে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খ) আমরা চাই *ভারতীয় রাষ্ট্রের প্রকৃত ফেডারেল চরিত্র বজায়ে থাক* ।তাই চাই কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষমতার পুনর্বণ্টন। *চাই সমস্ত ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা । ৮। গ। কেনো হিন্দির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হবে আর দ্বিতীয় প্রধান ভাষা বাংলাকে দিনে দিনে শুকিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে? ৯।) ভারতের ২২টি জাতীয় ভাষারই সমানাধিকার। তা প্রতিষ্ঠায় সমস্ত ভাষার মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই চাই। কেন্দ্র, চক্রান্ত করে অসমিয়া বনাম বাংলা, উর্দু বনাম হিন্দি ,পাঞ্জাবি বনাম হিন্দি, ইংরেজি বনাম হিন্দি যুদ্ধ লাগিয়ে এই ভাষা গণতন্ত্রকে চুরমার করে দেবার দীর্ঘ-পরিকল্পনা জারী রেখেছে । এর প্রতিবাদে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এখানে *গুজরাট থেকে কাশ্মীরের নেতাজি বিরোধী শাসক শ্রেণী সমান অপরাধী*। তাই জন সাধারণকে অরাজ নৈতিক ভাবে এক হতে হবে । প্রতিরোধ করতে হবে। শুরু করতে হবে মাতৃভাষা মুক্তির দ্বিতীয়ত স্বাধীনতা সংগ্রাম। ৮৭২ শব্দ
কোন মন্তব্য নেই