বৃহত্তর আন্দোলনের পথে দেশের রাজধানীর সাংবাদিকদের
বৃহত্তর আন্দোলনের পথে রাজধানীর সাংবাদিকেরা
পার্লামেন্টে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সোচ্চার
মানস বন্দ্যোপাধ্যায়
কয়েকটি যুগ ধরেই সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সাংবাদিকদের যেমন সংসদে প্রবেশের এবং বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে সংবাদ সংগ্রহের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল,তেমনি সংবাদ সংগ্রহের স্বার্থে তাদের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের জন্য রেল ভ্রমণে ভাড়ায় ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়াও হয়েছিল।
চার বছর আগে ভয়ঙ্কর কভিড ১৯ শুরু হবার পর থেকেই কেন্দ্র সরকার সংসদে প্রবেশাধিকার নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। উল্লেখযোগ্য,সেই সময় বেশ কিছু মন্ত্রী,নেতা করোনার আক্রমণের ফলে মারাও গেছেন। দিল্লীতে সাংবাদিকদের মধ্যেই প্রায় সাড়ে চারশ সাংবাদিক করোনায় মারা গেছেন এক বছরের মধ্যে।
পার্লামেন্টের পক্ষ থেকেও লোকসভার স্পিকার এবং রাজ্য সাভার চেয়ারম্যান পার্লামেন্টে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাংবাদিক, দর্শনার্থী ও অন্যান্যের জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরে সাংবাদিকদের শর্ত সাপেক্ষ প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে ২০ জন,তারপর ৪০ জন এবং পরে লটারির মাধ্যমে মুষ্টিমেয় সাংবাদিককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ঘরে বসে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পি আই বি স্বীকৃত সাংবাদিকদের সর্বশেষ খবর যেন তাদের মেইল এবং হোয়াটস অ্যাপ এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সহ সকল মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতেও অস্বীকার করেন। বলা হয়, সমস্ত খবর মেইলে দেওয়া হবে । অর্থাৎ পার্লামেন্টের অন্দরে গিয়ে খবর খুঁচিয়ে বের করার সব সুযোগকে বন্ধ করে দেওয়া হলো।বদলে সরকারের সংবাদের রন্ধন কক্ষে তৈরী করা খবরকে যেভাবে পরিবেশন করা হবে সেভাবেই ছাপতে হবে সাংবাদিকদের।
ফলে সাংবাদিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন। এই আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ও রাজ্য সভার চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া,এবং প্রেস এসোসিয়েশন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি কেও চিঠি পাঠায়।
তবু এখনোও কোন সঠিক জবাব আসেনি। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের ওপর এই ধরনের জঘণ্য আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।
এদিকে পার্লামেন্টে দীর্ঘ কালের সেন্ট্রাল হলটিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু প্রবীণ সাংবাদিকদের সেন্ট্রাল হলে প্রবেশের জন্য পাস দেওয়া হয়েছিল। সেন্ট্রাল হলে উপস্থিত মন্ত্রী, এম পি দের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতেন। এই ব্যবস্থা মোদি সরকার শুধু বন্ধই করেনি,সেন্ট্রাল হলকেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ডিসেম্বরে মধ্যে সাংবাদিকদের প্রতি সুবিচার না হোলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করার হুমকি দিয়েছে সাংবাদিক সংগঠনগুলি। দিল্লীতে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া, প্রেস এসোসিয়েশন, ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, রাজ্য সভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখর এবং লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে এনিয়ে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। ( গুয়াহাটি তে অবস্থান করা দিল্লী র বিশিষ্ট সাংবাদিক মানস বন্দ্যোপাধ্যায় কলম ধরেছেন)
কোন মন্তব্য নেই