Header Ads

স্বামী বিবেকানন্দ র শিকাগো ভাষণ স্মরণে

 জওহরলাল  সাহা। গুয়াহাটি
   স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিখ্যাত শিকাগো ভাষণটির আর একটি বার্ষিকী সমাসন্ন।সবাইকে অভিনন্দন জানাই।       বিশ্বব্যক্তিত্ব স্বামিজি। ব্যক্তি-অঞ্চল-প্রদেশে-দেশে যেমন, তেমনি জাতীয়-আন্তর্জাতিক - সকল স্তরে এবং সূত্রেই তিনি একটি ইতিবাচক আত্মিক বাণীকে রূপদান করতে চেয়েছেন। তা হলো সকলের ভেতরের পূর্ণ সৎ-এর অর্থাৎ পরিপূর্ণতার বিকাশ। এই জন্যেই তাঁকে ধরে থাকলেই উত্থান সম্ভব। যেখানে আমরা পড়ে গেছি, সেখানেই তাঁকে ধরেই উঠতে হবে, কাউকে আঘাত করে নয়, সকলকে সঙ্গে নিয়ে।আমাদের, বিশেষতঃ বাঙালির সংস্কৃতি, নানা ক্ষেত্রে এই ধারাকে অনেকটাই তার জাতীয় জীবনে বাস্তবায়িত  করার প্রয়াস করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তার বিস্ময়কর ফসল নেতাজি। তিনি নিজের জীবনে বিবেকানন্দের একক প্রভাবটিকে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, প্রকাশ করেছেন। বিবেকানন্দের নিজেরও বাঙলার এবং মাদ্রাজের যুবকদের উপর ভরসা ছিল সর্বাধিক। সেই বাঙালির দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হলে বিবেকানন্দের পথে তার নিজস্ব ঘুমন্ত শক্তির উদ্বোধন ঘটাতে হবে। যে সংগঠন বা যারা এটা করতে পারবে তাঁরাই  যথার্থত কাজ করবে আর সাফল্য তারাই পাবে। 
  এই মুহূর্তে স্বামিজির কার্য্যসাধনে পরবর্তী বিন্দুটি হল আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৩, তাঁর জগৎ আলোড়নকারী শিকাগো ভাষণের ১৩০তম বার্ষিকী। এই ঘটনাটি ভারতবর্ষের উত্থান বিন্দুর সুনির্দিষ্টতা নিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনকে গতি দান করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা ব্যক্তিগত, সামাজিক, শৈক্ষিক, প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো পর্যায়েই এই প্রসঙ্গে সচেতন নই। এইক্ষেত্রে বিবেকানন্দ কল্যাণ কেন্দ্র নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে গত চল্লিশ বছর ধরে কিছু নিরবচ্ছিন্ন কার্য্যধারা বহন করে চলার দাবি ন্যায়সঙ্গত ভাবে করতে পারে। প্রতিদিন কল্যাণ কেন্দ্রের বিদ্যায়তনিক অঙ্গনে শ্রেণীকক্ষে স্বামিজির বিশ্বাত্মিক তথা বিশ্বভ্রাতৃত্ব মুখী ভাবনার অনুশীলন  চলে। পৃথিবীতে তিনিই প্রথম বিশ্বাত্মিক ব্যক্তিত্ব (Universal Individual) তৈরির সুনির্দিষ্ট প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। ১৮৯৩ সালের ১১সেপ্টেম্বর শিকাগোর জগৎসভায় ঘটেছিল তারই প্রথম উচ্চারণ। আমরাও   তাই চাই - শ্রেণীকক্ষের নৈষ্ঠিক শিক্ষাতেই তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে ১১ সেপ্টেম্বরের দিনটি একটি প্রতীকী মাইলফলক। এটা বিধিনির্দিষ্ট। ঐ ভাষণটির শেষাংশে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রবল চেতাবনী দিয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ শুনেনি তাঁর সাবধানবাণী।আর তারই পরিণতিতে ১০৮ বছর পর ঠিক এই ১১সেপ্টেম্বরের দিনটিতে আমেরিকার ধনতান্ত্রিক গরিমার মুকুট ট্রেড সেন্টারে নেমে এলো ধর্মান্ধতার নারকীয় ধ্বংসের অভিশাপ।এটাই তো সন্দেহাতীত রূপে এই দিনটির প্রতীকীত্ব  ঘোষণা করছে। 
  অনেক আগে থেকেই কল্যাণ কেন্দ্রে এই বিশেষ দিনটি প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে স্বামিজির বিশ্বাত্মিক ভাবনার অনুধ্যানে। আমরা মনে করি রাষ্ট্রীয় শিক্ষার নীতিপ্রণয়নে বিবেকানন্দের  এই ভাবনাসমূহের  মধ্যে সর্ববিধ জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ আদির নেতিবাচক ভেদাভেদ নিবৃত্তির ইতিবাচক বীজ নিহিত আছে। এই বীজ হিংসার  রক্তবীজকে নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যাহ্বান নিয়ে বিধির নির্দেশেই বিবেকানন্দের মধ্যে আগ্নেয়গিরির উদগীরণ ঘটিয়েছে।
       এইসব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবারে ১১ সেপ্টেম্বর এই ধারাটিকে কেন্দ্রের সীমানার বাইরে এনে মহল্লা, শহর, জেলা, প্রদেশ ইত্যাদি নানা স্তরে অনূর্ধ্ব চার মিনিটের একটি ন্যূনতম সময়ের কার্য্যসূচী বাস্তবায়িত করে এই দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এটা অত্যন্ত সহজ ও অনায়াসসাধ্য। কিন্তু  মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম। বিভিন্ন স্থানে ১১ই সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে কেউ একক বা সমষ্টিবদ্ধ হয়ে ভারতকল্যাণমন্ত্রটি মুখস্থ অথবা পাঠের মাধ্যমে উপস্থাপিত করবে। এর দ্বারা একটি ইতিবাচক  প্রবাহ সৃষ্টি হবে।
আমাদের বিনীত অনুরোধ আপনারা নানা স্থানে নিজেদের পরিচিত মহলকে এই ব্যাপারে সক্রিয় করে তুলবেন । সঙ্গে "ভারতকল্যাণমন্ত্র"টি পাঠানো হল।

ধন্যবাদান্তে,
বিবেকানন্দ কল্যাণ কন্দ্রের পক্ষে,
শ্রী জহরলাল সাহা
সাধারণ সম্পাদক

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.