বরাক এর এ বি সি না জানা তথাকথিত এক বিজেপি নেতা বাঙালি দের অপমান করেছেন
নয়া ঠাহর শিলচর
শিলাদিত্য দেব ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসই জানেননা, বরাকের বহুভাষিক ঐক্যকে বিনষ্ট করার লক্ষ্যেই তাঁকে বরাকে পাঠানো হয়েছে - প্রদীপ দত্তরায়।
প্রাক্তন বিধায়ক শিলাদিত্য দেব সাম্প্রতিক একটি ভিডিও বার্তায় শিলচর স্টেশনের ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণের ব্যাপারে আবার কিছু অসংগত মন্তব্য করেছেন। এনিয়ে এবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
এদিন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে শিলাদিত্য দেব ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই জানেননা। তাই তিনি যে এসব অসংলগ্ন কথাবার্তা বলবেন এটা স্বাভাবিক। তিনি বলেন তিনি যদি ইতিহাস পড়তেন তাহলে বুঝতেন যে এই আন্দোলন অসমিয়া বাঙালির সংঘাতের জন্য ছিলনা এটি ছিল সরকারি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমস্ত মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলন সেই মাতৃভাষা অসমিয়া,বাঙালি,মনিপুরি,ডিমাসা যাই হোক না কেন। তিনি বলেন সেজন্যই এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে কারণ এটি সব জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার আন্দোলন ছিল। তিনি বলেন যে সেজন্যই শিলচর স্টেশনের নাম ' ভাষা শহিদ স্টেশন ' করার দাবি রয়েছে, কখনো এটিকে 'বাংলা ভাষা শহিদ স্টেশন ' করার দাবি উঠেনি। তিনি বলেন তাই যেমন এখানে ভাগ বাটোয়ারার কোন প্রশ্নই নেই তেমনি এর মাধ্যমে অসমিয়া বাঙালি সংঘাতকে জিইয়ে রাখার প্রসঙ্গ সম্পুর্ন অবান্তর। প্রদীপ বাবু আরো বলেন যে শিলাদিত্যের রাজনৈতিক গুরু মাননীয় প্রাক্তন সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থ কয়েকবার এই দাবি নিয়ে সংসদে সরব হয়েছেন, এবং সবার সম্মিলিত চেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা রেলমন্ত্রক এই দাবিকে মেনে নিয়ে এই ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তিনি বলেন আসলে শিলাদিত্যের সরকারের কাছে এই দাবি উত্থাপন করার সাহসই নেই,তাই এসব উল্টোপাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করছেন। প্রদীপ বাবু বলেন যে তাঁরা যখন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন তখন আসু এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আজ ৩০০ অসমিয়া ছাত্র ছাত্রীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানের সাথে পড়াশোনা করছে। এনিয়ে কখনো এই উপত্যাকার মানুষ কোন আপত্তি জানাননি। তাই বরাকের মানুষ সংঘাত নয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্যে বিশ্বাসী।
প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন যে তিনি যখন স্কুলে পড়তেন তখন মালিগাও স্কুলের শিক্ষক তাঁর পিতা ঈদের দিনে তাঁকে হাত ধরে তার মুসলমান ছাত্রের বাড়িতে শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য নিয়ে যেতেন। তিনি বলেন তিনি এভাবেই শিক্ষা পেয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে কোন ধর্ম বিভেদ বিভাজনের শিক্ষা দেয়না। তাই আদ্যন্ত নিজ ধর্মের প্রতি আস্থাবান থেকেও তিনি অন্য ধর্মের মানুষকে আপন করে নিতে জানেন। তারজন্য শিলাদিত্য তাঁকে মুসলিমদের পক্ষে থাকেন বলে মন্তব্য করলে তার কিছু এসে যায় না।
প্রদীপ বাবু বলেন যে স্মার্ট মিটার,ডিলিমিটেশন ইত্যাদি ইস্যুতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বরাকের মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করছেন তাঁতে দিশপুরের সরকার অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছেন। সেজন্যই বাংলাদেশী মুসলমানদের নামে বিষোদগার করে এই ঐক্যকে বিনষ্ট করার লক্ষ্যেই শিলাদিত্য দেবকে এই সময়ে বরাকে পাঠানো হয়েছে।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরো বলেন যে শিলাদিত্য দেব ভিডিও বার্তায় করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন বিধায়ক হিসেবে গত কয়েক বছরের কার্যকালে কমলাক্ষ যেভাবে বারবার বিধানসভায় বাঙালিদের স্বার্থে সরব হয়েছেন, সেই তুলনায় শিলাদিত্য দেব বিধায়ক থাকাকালীন বাঙালি হিন্দুদের দের স্বার্থে কবার মুখ খুলেছেন ? তিনি বলেন বার লক্ষ বাঙালি হিন্দু কে এনার্সি তালিকার বাইরে রেখে আধার কার্ড অকেজো করে দেওয়ার বিরুদ্ধে শিলাদিত্য কেন বিধানসভায় নীরব ছিলেন ? তিনি বলেন মাটিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে যেসব বাঙালি হিন্দু দের আটকে রাখা হয়েছে তাদের নিয়ে শিলাদিত্য একটি কথাও বলেন না কেন ?ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাঙালি হিন্দুদের বারবার ডি নোটিশ দিলে, বাঙালি হিন্দু প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করলে শিলাদিত্যের মুখ থেকে একটিও প্রতিবাদ শোনা যায়না কেন ? নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আসামে বাস্তবায়ন না হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন কেন ? প্রদীপ বাবু বলেন এই প্রশ্নগুলো আগেও তোলা হয়েছিল। এগুলোর উত্তর দেবার সাহস শিলাদিত্য দেবের নেই। তাই এমন অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য ও যথারীতি মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক মন্তব্য করে তিনি দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন।
প্রদীপ বাবু বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে দীর্ঘ দশবছর আন্দোলন করে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন,কোন নেতার আনুগত্য ও চাটুকারিতা করে নয়।
তাই বরাক উপত্যকার রাজনীতিকে কলুষিত করার প্রয়াস না নিতে শিলাদিত্য দেবকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে।
কোন মন্তব্য নেই