একদিন বাড়ি বাড়ি মুড়ি বিক্রি করতেন আল মোহন দাস পরে বিখ্যাত। silpopiti হয়ে উঠেন ।দাস নগর প্রতিষ্ঠা করেন
কলকাতার রাস্তায়-রাস্তায়,অলিতে, গলিতে মায়ের হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতেন। সেই মুড়ি বিক্রি করতে গিয়ে লোকের বাড়ির বারান্দায় বসেছেন, গলাধাক্কাও খেয়েছেন। তারপর সেই মানুষ নিজের পরিশ্রম আর নিষ্ঠার জোরে একদিন হয়ে উঠলেন বিখ্যাত শিল্পপতি, তিনি আলামোহন দাশ একমাত্র বাঙালি শিল্পপতি যাঁর নামে একটা আস্ত শহর গড়ে উঠেছে,হাওড়ার দাশনগর।
নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন একের পর এক কারখানা। জুট মিল, চিনির কারখানা, ওষুধ কোম্পানি, কটন মিল, কী করলেন না?
ভারত জুট মিল,দাশ মেশিনারি, এশিয়া ড্রাগ কোম্পানি,গ্ৰেট ইন্ডিয়ান স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি,আরতি কটন মিল সহ অনেক নামী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার নাম আলামোহন দাশ।প্রায় একশ বছর আগে তিনি তৈরি করেছিলেন কর্মসংস্থানের সুযোগ। তিনিই তো প্রকৃত অর্থে শিল্পপতি, দাশনগরের প্রতিষ্ঠাতা।
আলামোহন কিন্তু প্রথম জীবনে ছিলেন সুরেন্দ্র মোহন
প্রশ্ন হল কিভাবে আলামোহন দাস তার এই নাম পেলেন!
আমতা থানার অন্তর্গত খিলা-বারুইপুর গ্রামে সুরেন্দ্র মোহন দাস এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন মাত্র দুই, তখন তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্থানীয় কবিরাজ তাঁকে সুস্থ করতে পারেননি। অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয় এবং একদিন আত্মীয়রা ছোট্ট শিশুটিকে মৃত ভেবে শ্মশানে নিয়ে যায় কিন্তু তাঁর ছোট মামা হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে সুরেন্দ্র মোহনের চোখের পাতা নড়ছে, জীবনের লক্ষণ দেখাচ্ছে এবং শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বৃদ্ধ দাদীসহ সবাই শিশুটিকে ‘এলা চেলে’ (প্রাণহীন ছেলে) বলে ডাকতে লাগলেন। নামটি পরে আলা হয় এবং সুরেন্দ্র মোহন হয় আলামোহন। এই ঘটনাকে মিরাকেল ছাড়া আর কি বলবেন!
মারণ রোগ কালাজ্বরের প্রতিষেধক ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার করে স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু শুধু ওষুধ আবিষ্কার করলেই সেটি রোগীর কাছে পৌঁছয়না। মেশিনে মাপ মত বড়ি কেটে প্যাকিং দরকার। সেই মেশিন বিদেশ থেকে আনতে হবে ততদিন বহু মানুষ মারা যাবেন। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী আলামোহন দাশের শরণাপন্ন হলেন, আলামোহন নিজের কারখানায় বাঙালি কারিগরদের দিয়ে ওষুধের বড়ি কাটা ও প্যাকিংয়ের মেশিন তৈরি করে দিলেন। ব্রহ্মচারী মহাশয় অবাক হয়ে গেলেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি এত কম সময়ে এদেশের একজন মানুষ এত কম সময়ে বিদেশের থেকেও ভাল মানের মেশিন তৈরি করতে পারে।
এরপর আসল বিষ্ময় অপেক্ষা করেছিল স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্য । এগিয়ে এসে উপেন্দ্রনাথ আলামোহন কে তাঁর কর্মক্ষমতার জন্য
ধন্যবাদ দিলেন। তখন আলামোহন বললেন তাঁর বাড়ির বারান্দায় তিনি মুড়ি বেচতেন, সামনের স্কুলের ছেলেরা সেই মুড়ি কিনত।ওই বাড়ির বারান্দায় বসার অপরাধে দারোয়ান তাঁকে গলাধাক্কাও দিয়ে বেরও করে দেয়।এসব শুনে স্যার উপেন্দ্রনাথের চোখে জল ওদিকে আলামোহনও স্যার উপেন্দ্রনাথের হাতে মেশিন তুলে দিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
পরাধীন ভারতবর্ষের বাঙালি বিজ্ঞান সাধক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় আলামোহন সম্পর্কে বলেছেন : “আমার বিশ্বাস আমার দেশবাসীগণ আলামোহন দাশের নাম শুনিয়াছেন। শুধু তাঁহার অসাধারণ কার্য্যকুশলতা দেখিবার সুযোগ পান নাই। যে লোকটি প্রথম জীবনে ৭-৮ বৎসর কলিকাতার রাস্তায় রাস্তায় খৈ-মুড়ি বিক্রয় করিয়া কর্মজীবন শুরু করিয়াছিল সেই আলামোহন ও এই আলামোহন দাশ যে একই লোক এ-কথা চোখে দেখিলেও বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না। কয়েকটি মাত্র অক্লান্ত কর্মী সহযোগীর সহিত দিবারাত্র পরিশ্রম করিয়া আলামোহন দাশ যে সব বিরাট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিয়াছেন তাহা দেখিয়া মনে হয় আমি এক স্বপ্নরাজ্যে আসিয়াছি। আলামোহন দাশের জুটমিল ও তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দেখিয়াছি। এগুলি শুধু কারখানা নহে, মরণোন্মুখ বাঙালীর তীর্থক্ষেত্র।”
সংকলনে ✍🏻 Arunava Sen
পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার, হাসিকান্না হীরাপান্না চণ্ডী লাহিড়ী ও আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে
কোন মন্তব্য নেই