১৯ মে শিলচরে ভাষা শহীদ দিবস কেন ? কেনই বা ১১জন যুবকের রক্ত ঝরলো ?
নয়া ঠাহর শিলচর :১৯শে_মে আমরা ভাষা শহীদ দিবস কেন পালন করি??
আসুন একটু জানার চেষ্টা করি --
১০ অক্টোবর ১৯৬০ সালে সেই সময়কার মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় বিমলা প্রসাদ চলিহা মহাশয় অসমীয়া ভাষাকে আসামের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক মাননীয় রণেন্দ্রমোহন দাস ।কিন্তু ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয়।
বরাক উপত্যকার বাঙ্গালীদের উপর অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ সালে কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ নামক সংগঠন তৈরি করা হয়। অসম সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দির মানুষরা সংকল্প দিবস পালন করেন। বরাক উপত্যকার মানুষদের সজাগ করার উদ্দেশে ২৪ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত বরাকের বিভিন্ন জায়গায় একটি দীর্ঘ পদযাত্রা করে এই সংগঠন ।এই সংগঠনের মুখ্যাধিকারি রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেছিলেন যদি ১৩ মে-এর মধ্যে অসম সরকার বাংলাভাষাকে সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা না করে তাহলে তারা ১৯শে মে বরাক উপত্যকা জুড়ে তীব্র আন্দোলন করবেন। ১৮মে অসম পুলিশ এই আন্দোলনের তিন নেতা নলিনীকান্ত দাস, রথীন্দ্রনাথ সেন, বিধুভূষণ চৌধুরী কে গ্রেফতার করে।
১৯মে-এর ঘটনা --
১৯শে মে কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি জুড়ে সকাল থেকে হরতাল, পিকেটিং শুরু হয়।করিমগঞ্জে সরকারী কার্যলয় ,কোর্ট সহ বিভিন্ন জায়গায় হরতাল করে আন্দোলনকারীরা এবং শিলচর রেল স্টেশনে আন্দোলনকারীরা সত্যাগ্রহ করেছিলেন। সকাল দিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ শেষ হলেও কিন্তু বিকেল প্রায় ২-৩০ টার সময় কাটিগড়া থেকে নয় জন সত্যাগ্রহীকে পুলিশ গ্রেফতার করে তারাপুর রেল স্টেশনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।এদিকে স্টেশনের পিকেটিংকারীরা ওদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া দেখে তীব্র প্রতিবাদ করছিল। পিকেটিংকারীর ভয়ে ট্রাক চালক সহ পুলিশরা বন্দিদের নিয়ে ট্রাক ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ২-৩৫ মিনিটে স্টেশনের সুরক্ষায় থাকা প্যারামিলিটারী বাহিনী আন্দোলনকারীদের বন্ধুক ও লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। সাত মিনিটের ভিতরে প্যারামিলিটারী বাহিনী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ১৭ রাউন্ড গুলি চালায় ।এই গুলি বর্ষণে ১২ জন আন্দোলনকারীর গুলি লেগেছিল।ঐদিন নয় জন শহীদ হয়েছিলেন ।যে নয় জন শহীদ হয়েছিলেন উনারা হলেন --কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডীচরণ সুত্রধর,হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল,সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য। ঘটনার দুইদিন পর অর্থাৎ ২১ মে আরোও দুইজন শহীদ হয়েছিলেন উনারা হলেন - বীরেন্দ্র সুত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস নামের একজন আন্দোলনকারী দীর্ঘ ২৪ বছর শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগে ১৯৮৫ সালে মারা যান।
এই ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
বাংলাভাষার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে ১১ জন নিজের প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন । উনাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সন্মান জানিয়ে বরাক উপত্যকা সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রত্যেক বছর ১৯শে মে শহীদ হিসেবে পালন করা হয়।
গুগল থেকে সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই