বাংলাভাষী হিন্দু মুসলিম দের কোণঠাসা করার বিচার শুরু হল উচ্চ আদালতে
চিত্ত পাল ,রাজনৈতিক বিশ্লেষক: ১৯৫০ সাল পর্যন্ত অসমের অফিস আদালতে অসমিয়া ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষারও প্রচলন ছিলো । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গোপীনাথ বরদলৈর নেতৃত্বে ১৯৫০ সালে রাজ্য পুনর্গঠন হয়েছিলো। তখন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা রাতারাতি নিজেদের অসমিয়া ভাষী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। যার দরুন ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা এক লাফে ৫৬.৭ হয়েছিলো। পর্যবেক্ষকদের মতে তখন বোড়ো, ডিমাসা, কার্বি ও মিরি মিসিং উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও নিজেদের অসমিয়া ভাষী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৮৫ সালে প্রফুল্ল কুমার মহন্ত সরকারের কার্যকালে বোড়ো সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ নেতা প্রয়াত উপেন্দ্ৰনাথ ব্ৰহ্ম কে যথোচিত মর্যদা না দেওয়ার দরুণ এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। একই সঙ্গে তাঁদের মনে বদ্ধমূল ধারণা বাসা বেধেছিলো যে অগপ সরকার এই জনগোষ্ঠীর প্রতি চূড়ান্ত বৈষম্য করছে। ফলস্বরূপে, ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাজার হাজার বোড়ো জনগোষ্ঠীর মানুষ গুয়াহাটির রাজপথে "ডিভাইড আসাম ফিফটি ফিফটি" শ্লোগান তুলে মিছিল করেছিলো। এই সংঘাতে পরিণাম ১৯৯১ সালের আদমসুমাড়িতে প্রভাব পড়েছিলো বলে অনেকের ধারণা। ওদিকে, অসমিয়া ভাষা সংস্কৃতি গ্রহণের পাশাপাশি "ন-অসমীয়া" সেজেও মুসলিমেরা ১৯৮৩ সালে রেহাই পান নি। অবিভক্ত নগাঁও জেলার নেলী-তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গনহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো। অথচ একজন অপরাধীকেও শাস্তি দেওয়া হয় নি। কারণ অসম চুক্তি মতে সমস্ত অপরাধ জনিত মামলা গুলি রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করেছে।
বলাবাহুল্য, অবিভক্ত গোয়ালপাড়া ও সিলেট সহ বৃহত্তর অসমে কোনদিনও অসমিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো না। ১৯০১ সালের আদমশুমারিতে অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ২২.০ শতাংশ, ১৯১১ সালে ২১.৭ শতাংশ, ১৯২১ সালে ২১.৬ শতাংশ ও ১৯৩১ সালে অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ছিলো ২১.৬ শতাংশ। এ ছাড়াও বৃহত্তর অসমের মোট জনসংখ্যার সুরমা উপত্যকা ডিভিজনে (সিলেট ও কাছাড়) বাংলাভাষীর সংখ্যা ২৮,৪৮,৪৫৪ জন। অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ৩,৬৯২ জন। বিপরীতে অসম উপত্যকা বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ( গারো হিল ও ফ্রন্টিয়ার ট্র্যাক সহ) অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ১৯,৭৮,৮২৩ জন ও বাংলা ভাষীর সংখ্যা ১১,০৫,৫৮১ জন। অর্থাৎ ৩৯ লক্ষ বাংলাভাষীর বিপরীতে অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা মাত্র প্রায় ২০ লক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা যতোই লম্ফজম্ফ করুন না কেন, তিনি ইতিহাস বদলাতে পারবেন না। কিছুদিন আগে ডঃ শর্মা বলেছেন যে ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ই নাকি ১৯৩৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া ভাষার বিভাগ খুলে অসমিয়াদের শৈক্ষিক উত্তর ঘটিয়েছিলেন। এসব পালের প্রলাপ মাত্র।
জানা মতে, ১৯১৬ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ভাষাভিত্তিক রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯১৭ সালে তিনি রসরাজ লক্ষীনাথ বেজবরুয়া কে অসমিয়া ভাষী রাজ্য গড়তে আবেদন দিতে বলেছেন। লক্ষীনাথ বেজবরুয়া অসমে এসে অন্যান্য বুদ্ধিজীবি দের সঙ্গে আলোচনা করে অসম কে অসমিয়া ভাষী রাজ্য বানাতে দাবি জানানোর পর সে বছরই স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় অসমিয়া ভাষী রাজ্য গঠন করেন এবং শোনামতে, তাঁর নির্দেশেই ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া ভাষার বিভাগ খোলা হয়েছিলো।
মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার আগে অর্থাৎ তিনি যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন, তখন এক অনুষ্ঠানে লাইভ চ্যানেলে বলেছিলেন যে বরপেটা জেলায় সত্তর শতাংশ মুসলিম মানুষ। বিপরীতে, ত্রিশ শতাংশ হিন্দু। যদিও তার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ বাঙালি হিন্দু। অথচ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে ৪৫ শতাংশ বাংলাভাষীর সংখ্যা পাওয়া গেছে। তার মানে, মুসলিমেরা সেনসাস বাংলাভাষীর পরিচয় দিয়েছেন। উল্লেখনীয়, ২০১১ সালে লোকগনণা মতে দেড় কোটি অসমিয়া ভাষী ও নব্বৈ লক্ষ বাংলাভাষীর সংখ্যা। অর্থাৎ ৪৮.৩৮ শতাং অসমিয়া এবং ২৮.৯২ শতাংশ বাংলা ভাষীর সংখ্যা। এক যুবকেরা প্রশ্নের উত্তর ডঃ হিমন্তবিশ্ব একথা বলতেও শোনা গেছে যে আমরা মুসলিমদের অসমিয়া ভাষীর পরিচয় দিতে বলবো না। কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবো, ওরা বাধ্য হয়ে অসমিয়া ভাষীর দেন। তাই এখন অনেকে বলাবলি করছেন যে জেহাদীর অজুহাতে একের পর এক মাদ্রাসা বুলডোজার দিয়ে যেভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে, আসলে কী এটা এক ধরণের ভীতি প্রদর্শন? উল্টো দিকে, হিন্দু বাঙালিদের নামে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিশ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে ডঃ শর্মার বিজেপি সরকার। বড় সখ ও আহ্লাদ করে হিন্দু বাঙালিরা বিজেপি কে ভোট দিয়ে মসনদে বসিয়েছিলেন । এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে ভিক্ষা পরে, আগে কুত্তা সামলাই। কারণ আজ ২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সুপ্রীম কোর্ট ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ সাল হবে কী না, তা নিয়ে শুনানি শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পুরো বিষয় টিতে
মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মার মস্তিষ্ক কাজ করে চলেছে। নন
কোন মন্তব্য নেই