Header Ads

অসমের বাঙালি রা নেতাজি -রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করে ধুমধাম করে কিন্তু জীবন দর্শন অনুসরণ করে না

চিত্ত পাল

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন হিন্দু বাঙালিরা অত্যন্ত ধূমধাম ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা পরিলক্ষিত হয়। যদিও অসমের  নব্বৈ শতাংশ হিন্দু বাঙালি এই দুই মনীষির প্রদর্শিত পথে হাঁটতে ইচ্ছুক নন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাগ কখনও মেনে নেন নি। তিনি বেঁচে থাকলে বৃটিশের সাধ্য ছিলো না বাংলা ভাগ করে দেশের স্বাধীনতা দেওয়ার। লর্ড কার্জন ১৯০৩ সালে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পাশাপাশি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকরী করেন। সমগ্র বাংলার আপামর জনগন হিন্দু মুসলিম সন্মিলীত ভাবেই এই বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী কমিটির সভাপতি ছিলেন। বৃটিশ ইণ্ডিয়া সরকার বাধ্য হয়ে তখন বঙ্গভঙ্গ রদ করেছিলো।  নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রমুখেরা কখনও হিন্দু মুসলিম ভাগাভাগি করে দেখতে চান নি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস মুসলিমের ভোট পেয়েই কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। বস্তুত, ১৯৩৯ সালে বাংলা ভাগ হয়েছিলো পূর্ব ভঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নামে। অথচ সম্ভবত ১৯৪১ সালে প্রয়াত ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের লীগ মন্ত্রী সভায় অর্থমন্ত্ৰী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চ্যবন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু কে বাংলাদেশ থেকে আগত অনুপ্ৰবেশ রুখতে আলাপচারিতায়  বলেছিলেন। জ্যোতি বসু উত্তরে বলেছিলেন, "কী ভাবে আটকাবো? একই ভাষা, একই পোষাক-পরিচ্ছদ ও একই সংস্কৃতি। কে ভারতীয় বা কে বাংলাদেশি তা চেনা যায় না"। 
এপার বাংলা ওপার বাংলা দু পারের মানুষের মুখের ভাষাই হচ্ছে বাংলা। রক্তের সম্পর্ক রয়েছে বাংলার মানুষের। অথচ পাঞ্জাব ভাগ হওয়ার পর পাঞ্জাবিদের ততোটা আহত হওয়ার আঘাত সইতে হয় নি। কারণ অমৃতসর থেকে লাহোর মাত্র দু ঘন্টার পথ। অথচ ভাষা আলাদা আলাদা। সিন্ধু প্রদেশের ভাষা উর্দূ ও পাঞ্জাবের ভাষা পাঞ্জাবি। ভাষাগত আত্মিক সম্পর্ক নেই তাঁদের। মুসলিম লীগের মঃ আলী জিন্না, আর এস এসের সাভারকার ও হিন্দু মহাসভার ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সবাই মিলে দেশভাগ করেছিলেন। ওদিকে, বাংলা ভাগের পুরো কৃতিত্ব টাই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কে দেওয়া যায়। কারণ, কলকাতা পোর্ট পাওয়া না গেলে বাংলা ভাগের কোনও লাভ যে হবে না, সেটা মঃ আলী জিন্না উপলব্ধি করেছিলেন। সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি কলকাতায় রয়েছে। তাই তিনি  এ ব্যাপার  নিরুৎসাহী ছিলেন। দেশভাগের আসল খেলাটা হচ্ছে, অবিভক্ত বাংলায় আজ ১২৬ জন সাংসদ নির্বাচিত হতে পারতো। বিপরীতে, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড মিলে মোট বর্তমান সাংসদ ৮৫ জন। সুতরাং হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি  বৃটিশকে কাজে লাগিয়ে পূর্ব বঙ্গকে পাকিস্তানের যুক্ত করে দিয়েছিলো। ফলস্বরূপে বাংলা থেকে আর কোনদিনও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। একই খেলা অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা ব্যাটিং করে যাচ্ছেন অসমে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবায়নের ক্ষেত্রে যে ভাবে ২০১৭ সাল থেকে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালিদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে, তা প্রত্যক্ষ করে তিনটি বাঙালি সংগঠন মিলে নগাঁও শহরে এক সভা অনুষ্ঠিত করেছিলো। সে বছর অনুষ্ঠিত ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবায়নে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য সারা অসম সংখ্যালঘু ছাত্র সংস্থা (আমসু) ও জমিয়ত এর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে হিন্দু বাঙালিরা আইনী লড়াই করবে। সংবাদ পত্রে এই সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পরদিন থেকেই বিজেপি সরকার প্রাক্তন বিধায়ক শিলাদিত্য দেব কে মাঠে ছেড়ে দিয়েছে। তথ্যবিজ্ঞ মহলের ধারণা যে  তখন থেকেই শিলাদিত্য দেব মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধারের কাজ শুরু করলেন। আজও এই জনগোষ্ঠী কে অর্থহীন ভাবে "বাংলাদেশি মুসলিম" বলে নিরন্তর গালাগাল দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকের মতে, প্রাক্তন বিধায়ক দেবকে বিভাজন রাজনীতি তে ব্যস্ত রেখে বারো লক্ষ হিন্দু বাঙালির নাম এন আর সি থেকে বাদ দিতে পেরেছে উগ্র জাতীয়তাবাদী তথা নব্য বিজেপি নেতা ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা। যে কাজটা যোগেন্দ্ৰ নারায়ণ মন্ডল ও ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় করেছেন, একই কাজ শিলাদিত্যও নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার পরিণাম হয়তো অচিরেই পাওয়া যাবে। তিনি সুপ্রীম কোর্টে ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ সাল করার জন্য অসম সন্মিলিত মহাসংঘ যে মামলা করেছে, তার বিরুদ্ধে ইন্টারফেয়ার মামলা করতে শিলাদিত্য যান নি। আমসু এই মামলার পার্টি হয়েছে। কেস নং ডব্লিউ পি (সি) ৫৬২/২০১২। অসমে বসবাসকারী প্রায় দু কোটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মরণ বাঁচার লড়াই হিন্দু মুসলিম বাঙালিরা একসঙ্গে মিলেই করতে হবে। এ কাজে যাতে সফল না হয়, তার জন্য হিন্দু মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি তে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.