"আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু"--সুকুমার রায়ের শেষ সময়ে রবীন্দ্রনাথ গানটি দুবার গেয়েছিলেন
'আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু' গানটি সুকুমার রায়ের মৃত্যুশয্যার পাশে গাইছেন রবীন্দ্রনাথ,তন্ময় হয়ে সেই গান তিনি শুনেছেন একবার নয় দু'বার৷
ওষুধ তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। দুরারোগ্য মারণ ব্যাধি কালাজ্বর বাসা বেঁধেছে সুকুমারের শরীরে,খুবই অসুস্থ,গান শুনতে ভালবাসতেন ৷ সহধর্মিণী সুপ্রভা দেবীর কাছে রবীন্দ্রনাথকে শেষবারের মত দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন৷ সেই খবর রবীন্দ্রনাথের কাছে পৌঁছে যেতে সব কাজকর্ম ফেলে তিনি উদ্বেগাকুল হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুকুমারের মৃত্যুশয্যার পাশে,মাত্র কয়েক বছর আগে যাঁর বিবাহ সভায় তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন৷
রবীন্দ্রনাথ কে ঘরে ঢুকতে দেখে সুকুমারের চোখে-মুখে অসীম আনন্দের ছাপ,তিনি রবীন্দ্রনাথ কে বললেন 'আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু' গানটি গাইতে৷ রবীন্দ্রনাথ সেই গান গেয়েছিলেন একবার নয় দু'বার৷ আরও একটি গান রবীন্দ্রনাথ ধরলেন 'এত কালের ভয়-ভাবনা কোথায় যে যায় সরে,ভালোমন্দে ভাঙাচোরা আলোয় ওঠে ভরে'৷ সকুমার তবু অতৃপ্ত আবার ফরমাশ করলেন 'দুঃখ এ নয়,সুখ নয় গো,গভীর শান্তি এ যে' গানটি গাইতে হবে,এই গানও রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন দু'বার৷ আনন্দিত সুকুমার প্রণাম জানিয়ে কবিগুরু কে বিদায় দিলেন৷
সেদিন তাঁর সব আকাঙ্খার অবসান হওয়ার কিছুদিন পরে অকাল জীবনাবসান হল সুকুমার রায়ের৷বড় ট্র্যাজেডি হল তিনি নিজের চোখে দেখে যেতে পারেন নি তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি 'আবোলতাবোল'৷
ইউ রায় এন্ড সন্স থেকে ১৯২৩সালে প্রকাশিত হয়েছিল 'আবোলতাবোল',দিনটি ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর৷
অথচ তার মাত্র কয়েকটি দিন আগে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তিনি আকাশের তারা হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে দিনটি ছিল ১০সেপ্টেম্বর৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ৷
সুকুমার রায়ের অকাল প্রয়াণে ব্যথিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, লিখেছিলেন 'আমি অনেক মৃত্যু দেখেছি,কিন্তু এই অল্পবয়স্ক যুবকটির মতো অল্পকালের আয়ুটিকে নিয়ে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে এমন নিষ্ঠার সঙ্গে অমৃতময় পুরুষ কে অর্ঘ্য দান করতে প্রায় আর কাউকে দেখিনি৷ মৃত্যুর দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে অসীম জীবনের জয়গান তিনি গাইলেন'৷ আজ তার মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি 🙏(সংগ্ৰহ করা)
কোন মন্তব্য নেই