বাঙালী দের নিয়ে খেলা চলছেই তাদের স্বার্থে সরকার নেই
৩য় পর্ব
চিত্ত পাল
অসমে বসবাসকারী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সংখ্যার হিসেবে সকলেই সংখ্যালঘু। বহু ভাষাভাষী, নানা জনগোষ্ঠী, নানা বৈচিত্রের মাঝে যেন ছোট্ট এক ভারত। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধী ১৯৮৫ সালের ১৪ই আগষ্ট মধ্য রাতে ছাত্র নেতা প্রফুল্ল কুমার মহন্ত ও ভৃগু কুমার ফুকন সহ আন্দোলনকারী দের সাথে "অসম চুক্তি" স্বাক্ষর করেছেন, তখন প্রয়াত গান্ধী এটা মাথায় রেখেছিলেন যে অসমে ভাষিক সংখ্যালঘু বাঙালি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় সহ অন্যান্য ক্ষুদ্ৰ ক্ষুদ্ৰ নৃগোষ্ঠীয় মানুষের রাজনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আই এম ডি টি (১৯৮৩) আইন টি চুক্তির আওতায় রাখতে হবে। তাই আইএমডিটি আইন বাহাল রেখেই তিনি অসম চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরাও সম্পূর্ণ নিরাপদে এবং স্বস্তিত ছিলেন। কিন্তু বাদ সাধলেন তদানীন্তন অগপ দলের সাংসদ সর্বানন্দ সোনোয়াল। তিনি ২০০২ সালে আইএমডিটি আইনটি বাতিলের জন্য সুপ্রীম কোর্টে মামলা করেন। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্ৰী প্রয়াত তরুণ গগৈ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রীম কোর্টে যে অ্যাফিডেভিট দাখিল করেছিলেন, সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্ৰদায়ের স্বার্থ রক্ষার বিষয় টি গূরুত্ব দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার সে বিষয় গুলি মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দেওয়ার দরুণই ২০০৫ সালের জুলাই মাসে আইএমডিটি আইনটি সুপ্রীম কোর্টের এক রায়ে বাতিল হয়ে যায়। অথচ ক্রনোলোজি দেখে বোঝা যায় যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গুলির বিরুদ্ধে কতো বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে। "অসম সন্মিলিত মহাসভা" নামের এক সংগঠন অসম চুক্তির ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১ সালের পরিবর্তে ১৯৫১ সাল করার দাবি জানিয়ে সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলো। মুখ্য বিচার পতি বিষয় টি সাংবিধানিক বিচারপীঠে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গত ২৯ শে আগষ্ট এই মামলা টি সাংবিধানিক বিচারপীঠে সম্ভবত উঠেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১ সালের পরিবর্তে ১৯৫১ সাল করা হয়, তাহলে হিন্দু মুসলিম মিলিয়ে অসমে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নাগরিকত্ব হারাবেন। প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের আগে ভারতে আসা হিন্দু বাঙালি প্রায় ১১৯২৮ টি পরিবার প্রায় ৯০০০০ মানুষকে পুনর্বাসন দিয়েছিলেন, তাদের কী হবে? পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ সমর গুহ লোকসভায় ১৯৭৫ সালের ২০শে মার্চ লোকসভায় প্রশ্ন করেছিলেন যে ভারতের কোন কোন রাজ্যে কতো ঊদ্বাস্তুকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিলো? উত্তরে কেন্দ্ৰীয় পুনর্বাসন উপমন্ত্রী জি ভেঙ্কটস্বামী জানান, ১৯৭১ সালের আগে ভারতে আসা হিন্দু বাঙালির এগার হাজার নয় শো আটাশ টি পরিবারকে ১৯৭৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত অসমে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। এদের কথা বাদ দিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে, ১৯৫১ সালের পরে অসমে আসা মানুষের নাগরিকত্ব হারানোর সম্ভাবনাই বেশি বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। একজন মানুষের শরীরে যেমন হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি ইত্যাদি থাকে, তবে তাকে সুস্থ বলে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি কিডনি ও হৃদপিণ্ড কেটে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ওই মানুষ টি আর বেঁচে থাকতে পারবে না। ঠিক তেমনি আইএমডিটি আইন বাতিলের পর এবার ভিত্তিবর্ষ পরিবর্তন এর জন্য সুপ্রীম কোর্টে মামলা টি এডমিট হয়েছে। অসম চুক্তির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে আসছে। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন সংগঠন যদি অসম চুক্তি টাকেই বাতিল করার জন্য আবেদন করে, তাহলে সুপ্রীম কোর্ট এই আবেদন গ্রহণ করবে কী না সেটাই এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে উঠবে।
কোন মন্তব্য নেই