Header Ads

অধিকাংশ ডাক্তার অসৎ মুনাফার লোভে সাধারণ মানুষকে রুগী সাজিয়ে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, ঔষধ কোম্পানিগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে










*!!!!! অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা !!!!!*

**ডাঃ অনন্যা সরকার*

*দুই তিন দিন জ্বর হয়েছে, ঔষধ না খেলেও চলতো , এমনিতেই আপনি কয়েক দিনের মধ্যেই  সুস্থ হতে পারতেন, কিন্তু আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেন।  ডাক্তার সাহেব আপনাকে শুরুতেই একগাদা  পরীক্ষা বা টেস্ট  দিলেন।   টেস্ট রিপোর্টে  জ্বরের কোন কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও কোলেস্টেরল আর ব্লাড সুগার লেভেল সামান্য একটু বেশি পাওয়া গেল, যা একটু স্বাভাবিক মানুষের এদিক ওদিক হতেই পারে।*

 *জ্বর চলে গেল বটে, কিন্তু এখন আপনি আর জ্বরের রোগী নন,  ডাক্তারবাবু বুঝালেন--আপনার কোলেস্টেরল বেশি আর সুগার সামান্য বেশী, মানে আপনার  প্যারা-ডায়বেটিস হয়ে আছে। আপনাকে এখন থেকে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের একটা ঔষধ খেতে হবে, আর কম ডোজের ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করার একটা ঔষধ খেতে হবে। তার সাথে  অনেকগুলি খাবারে নিষেধাজ্ঞা জারী হলো।  আপনি খাবারের নিষেধাজ্ঞা ঠিকঠাক না মানলেও ঔষধ খেতে ভুল করলেন না।*

 *এইভাবে তিন মাস যাওয়ার পর আবার টেস্ট । এবারে দেখা গেল  কোলেস্টেরলের মাত্রা কিছুটা কমেছে, কিন্তু রক্তচাপ সামান্য  বেড়ে গেছে,  যেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি আবার আরেকটি ঔষধ  দিলেন। এখন আপনার ঔষধের সংখ্যা হলো ৩ টি।*

 *এতসব শোনার পরে আপনার দুশ্চিন্তা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে,   কখন কি হয়ে যায়,  এখনও তো  কিছুই গোছানো হয়নি,  -----এমন দুশ্চিন্তায় আপনার রাতের ঘুম কমে যাচ্ছে ,  ফলে ডাক্তারবাবু পরামর্শে আপনি আবার একটা ঘুমের ঔষধ খাওয়া শুরু করলেন।  এখন আপনার ঔষধের সংখ্যা হলো ৪ টি।*

*একসঙ্গে এতগুলি ওষুধ খাওয়ামাত্রই আপনার  বুক জ্বালাপোড়া আরম্ভ হলো,  ডাক্তারবাবু  বিধান দিলেন --- প্রতিবেলা খাওয়ার আগে খালিপেটে একটি করে গ্যাসের ট্যাবলেট খেতে হবে।  ঔষধের সংখ্যা বেড়ে হলো ৫  টি।*

*এইভাবে ৬ মাস যাওয়ার পর আপনি একদিন বুকে ব্যথা অনুভব করায় হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে ছুটলেন,  ডাক্তার সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন -- সময়মতো আসায় এই যাত্রায় বেঁচে গেলেন, আরেকটু দেরি করলেই সর্বনাশ হয়ে যেতো ,  তারপর আরও  কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষা করতে বললেন।*

*অনেক টাকার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তারবাবু বললেন ----আপনি যে ওষুধগুলো খাচ্ছেন সেগুলি ঐভাবেই চলবে, তবে তার সাথে  হার্টের জন্য আরও দুটি ঔষধ খেতে হবে , আর অবিলম্বে একজন এণ্ডোক্রিনোলজিস্ট বা  হরমোন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন, ঔষধের সংখ্যা বেড়ে হলো ৭  টি!*

*হার্টের ডাক্তারের পরামর্শ মতন   আপনি একজন এণ্ডোক্রেনোলজিস্ট বা  হরমোন বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করলেন।  সেখানে যাওয়ার পরে তিনি যোগ করলেন  ডায়বেটিসের অর্থাৎ সুগারের জন্য ১ টি ঔষধ, আর থাইরয়েড হরমোন সামান্য বেশী হওয়ায় জন্য ১ টি ঔষধ।*

*আপনার রোজ ঔষধ খাওয়ার সংখ্যা এখন দাঁড়ালো ৯ টি।* 

*আর এখন মনে মনে আপনি জানলেন ও ভেবে থাকলেন আপনি একজন বড় রোগী --- হার্টের রোগী, সুগারের রোগী, অনিদ্রার রোগী,  গ্যাসট্রিকের রোগী, থাইরয়েডের রোগী, কিডনির রোগী,  ইত্যাদি।*

*আপনাকে ইচ্ছাশক্তি বাড়িয়ে,  মনোবল বাড়িয়ে সুস্থ ভাবে বাঁচার রসদ বাড়িয়ে বেঁচে থাকার পরিবর্তে জানানো হলো, শেখানো হলো ---------- আপনি রোগী,  বড়  রোগী, আপনি বড় অসুস্থ ব্যক্তি,  আপনি একজন অসমর্থ, বিধ্বস্ত, ভঙ্গুর, নড়বড়ে ব্যক্তি  !!!!!!!!*

 *এভাবে আরও ছয় মাস চলার পর ঔষধগুলির সাইড এফেক্টস হিসাবে একটু প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেবে -------- ডাক্তারবাবু সবরকম রুটিন চেকআপ করতে দিলেন*

 *রুটিন চেক-আপ করানোয়  জানতে পারলেন------- আপনার কিডনিতে সামান্য সমস্যা আছে,  ডাক্তারবাবু আবার নানারকম কিডনি ফাংশনের পরীক্ষা দিলেন,  রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন -----ক্রিটিনিন একটু বেশি,  তবে নিয়মিত ওষুধ খেলে আর কোনো চিন্তা  থাকবে না,  আরও ২ টি ঔষধ তিনি যোগ করলেন:-*

 *ফলে বর্তমানে আপনার মোট ওষুধের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১  টি।*

*আপনি এখন খাবারের চেয়ে ওষুধ বেশি খাচ্ছেন,  আর সব রকম ঔষধের নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন  !!!!!!!*

 *অথচ যে জ্বরের জন্য আপনি সর্বপ্রথম ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, তিনি যদি বলতেন;- ---*

*"চিন্তার কোন কারণ নেই, এই সামান্য জ্বরে কোন ওষুধ খেতে হবে না,     কয়েকদিন একটু বিশ্রামে থাকেন , পর্যাপ্ত জল পান করুন,       টাটকা শাকসবজি ও ফল বেশি করে খান ,   শরীর ভালো রাখার জন্য ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটাহাটি করুন ,      ব্যস্ , তাহলেই আপনার শরীর ফিট থাকবে।  যান, বাড়ী যান--- কোন ঔষধের প্রয়োজন নেই।*

 *কিন্তু সেটা করলে ডাক্তার সাহেব আর ঔষধ কোম্পানিগুলোর পেট ভরবে কিভাবে ❓*  

*তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো :- কিসের ভিত্তিতে ডাক্তারগণ রোগীদেরকে কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি বিকল বা  হৃদরোগী ঘোষণা করছেন ❓❓❓*

*কি সেই মানদণ্ড ❓*

*এসব নির্ধারণ করলেন কে বা কারা ❓*

*একটু বিশদে জানা যাক----*

★  *১৯৭৯ সালে রক্তে শর্করার মাত্রা 200 mg / dl পেলে ডায়বেটিক রোগী  হিসেবে গণ্য করা হতো।  সেই হিসেবে তখন সমগ্র পৃথিবীর মাত্র ৩.৫ % মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগী হিসাবে চিহ্নিত হতেন ।*

★  *তারপর ১৯৯৭ সালে ইনসুলিন প্রস্তুতকারকদের চাপে সেই মাত্রা এক লাফে কমিয়ে 126 ml  করা হয়।  ফলে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা ৩.৫ % থেকে এক লাফে বেড়ে ৮ % হয়ে যায় , অর্থাৎ রোগের কোনরূপ  বহিঃপ্রকাশ ছাড়াই স্রেফ ব্যবসায়িক স্বার্থে ৪.৫ % মানুষকে রোগী বানিয়ে ফেলা হলো!  ১৯৯৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই মানদণ্ডে সায় দেয়।*

 *এদিকে ফুলে-ফেঁপে ওঠা ইনসুলিন প্রস্তুতকারকেরা অঢেল মুনাফা বিনিয়োগ করে সারা বিশ্বে নিত্য-নতুন প্ল্যান্ট বসাতে থাকে। তাদের চাপে নতি স্বীকার করে American Diabetes Association (ADA) ২০০৩ সালে রক্তে শর্করার মাত্রা 100 ml কে ডায়াবেটিস রোগের মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দেয়।  ফলে কোনো কারণ ছাড়াই ২৭% মানুষ ডায়বেটিস রোগী হয়ে যায়।*

★ *বর্তমানে American Diabetes Association (ADA) কর্তৃক ঘোষিত মানদন্ড হচ্ছে ----*

*>140 mg P.P  হিসাবে বিশ্বের ৫০ % মানুষকে কৌশলে ডায়বেটিক  রোগী বানিয়ে ফেলা হয়েছে,  এদের অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগী না হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ওষুধ খেয়ে নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক ভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে মারা যাচ্ছেন।*

*অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, টেস্ট করালেই যে কোনো মানুষ প্রি-ডায়াবেটিক রোগী হিসেবে গণ্য হবেন  !!!*

*এদিকে আমাদের দেশের ঔষধ  কোম্পানিগুলি ডায়াবেটিসের মানদণ্ড হিসেবে রক্তে শর্করার মাত্রা ৬.৫ % থেকে কমিয়ে  ৫.৫%-এ নামিয়ে আনার জন্য তাদের এজেন্ট বা প্রতিনিধিদের দ্বারা অবিরাম ডাক্তারদের মগজ ধোলাই করে চলেছেন,  এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে  সফলও হয়েছেন।*

*পরিণামে আর কিছু হোক বা না হোক দেশে ডায়াবেটিসের ওষুধ বিক্রিতে মাত্রাতিরিক্ত লাভ বৃদ্ধি সুনিশ্চিত হয়েছে।*

 *যদিও অনেক চিকিৎসক মনে করেন- রক্তে শর্করার মাত্রা সর্বোচ্চ ১১% পর্যন্ত ডায়াবেটিস হিসেবে গণ্য করা যায় না।*

 *প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০১২ সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট বিশ্ববিখ্যাত এক ঔষধ  কোম্পানিকে ৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তারা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যে ওষুধ বাজারজাত করছে, তা খেয়ে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যুহার ৪৩% বেড়ে গেছে! পরে জানা যায়, ওই কোম্পানির কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ব্যাপারটি জানতো,  এবং তাদের ট্রায়াল থেকেও ঐ একই রিপোর্ট এসেছিল। কিন্তু তারা সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে মুনাফা অর্জনকে প্রাধান্য দিয়েছিলো,  মানুষের প্রাণের কোন  মূল্য তাদের বিবেচনায় ছিল না।  ফলে ঐ সময়ে তারা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মুনাফা করেছিলো ।*

*হ্যাঁ, এই হচ্ছে আধুনিক পুঁজিবাদের (!) অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা !!* 

*ভাবুন, ভাবা প্র‍্যাক্টিস করুন।*

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.