Header Ads

ত্রিপুরার সুমন পাটারি সাহিত্য একাডেমির যুব পুরস্কার পেলেন

সাহিত্য অকাদেমির যুব পুরস্কার ও উত্তর-পূর্বের বাংলা লেখালিখি
  বাসব রায় ,গুয়াহাটি
ত্রিপুরার সুমন পাটারি সাহিত্য অকাদেমির যুব পুরস্কার পেয়েছেন, লিখে কিছু হয় না কবিতাবইয়ের জন্য। খবরটা শুনে দীর্ঘকাল পর অনিবর্চনীয় আনন্দ পেয়েছি। মনে হয়েছে, এ তো শুধু সুমনের পুরস্কার নয়, এ আমাদের সবার, আমরা, যাঁরা, উত্তর-পূর্ব ভারতে বসে বাংলায় লেখালিখি করি। 
অন্যদের কথা জানি না, কিন্তু আমার কাছে সুমন পাটারির পুরস্কার প্রাপ্তি বিশেষ অর্থবহ। কেন?
সুমন কি আমার প্রিয় কবি? না।
সুমনকে কি আমি বিশেষ ভালোবাসি? না।
সুমনের কবিতা কি অসাধারণ? জানি না।
চল্লিশ বছরের নীচে আর কেউ কি সুমনের চেয়ে ভালো কবিতা লেখেন না? জানি না। 
তাহলে, বিশেষ অর্থবহ বলছি কেন?
বলছি, এবং সুযোগ পেলে বারবার বলব যে এই পুরস্কার শুধু সুমনের নয়, আমাদের সবার, উত্তর-পূর্বে বসে বাংলাভাষায় লিখছেন, সবার। 
এবং এটাই কারণ। এতদিন সাহিত্য অকাদেমির পুরস্কারের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাংলাভাষার লেখকদের কাব্যগ্রন্থ-বই শুধু শর্টলিস্টেড থাকত। যেমন দেবীপ্রসাদ সিংহের সীমান্তের ওপর থমকে থাকা পা, অশোক দেবের সদাপুরাণ, কমলিকা মজুমদারের উইদ লাভ, কমলিকা প্রভৃতি। সুমনের পুরস্কার প্রাপ্তি সেই অচলায়তনকে ভেঙে দিয়েছে। 
উত্তর-পূর্বের বাংলাভাষার লেখকদের মধ্যে এপর্যন্ত দুজন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। মজার ব্যাপার হল মৌলিক রচনার জন্য অসমের যে বাঙালি কবি, রবীন্দ্র সরকার, ওই পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁর কাব্যগ্রন্থটি অসমিয়া। আর পেয়েছেন উষারঞ্জন ভট্টাচার্য ; বীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের যে বইটি জ্ঞানপীঠ পেয়েছিল তার অনুবাদ করে, মৃত্যুঞ্জয়। বলাবাহুল্য এই দুজনের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্তি আমাদের ততটা আনন্দ দেয়নি যা কি না সুমনের যুব পুরস্কারে পেয়েছি। কারণ ওই একটাই উত্তর-পূর্ব ভারতে বসে বাংলায় মৌলিক লেখা লিখে সুমন জয়ী হয়েছেন। 
আনন্দবাজারে না লিখলে অভীকচন্দ্র সরকার পুরস্কার হয়তো পাওয়া যায় না, কিন্তু ভারতচন্দ্র সরকার পুরস্কার যে পাওয়া যেতেই পারে সুমন তার আশ্চর্য উদাহরণ।
বহুকাল ধরেই বলে-লিখে আসছি যে আবহমান বাংলা সাহিত্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাংলা লেখালিখিকে আর আলাদা করা যায় না। দেবী-দীপংকর-মিথিলেশ-বদরুজ্জামান-কান্তার-দুলাল-বিজয়ার গল্প, অমিতাভ-প্রবুদ্ধ-অশোক-সঞ্জয়-স্বর্ণালি-চিরশ্রী-অভিজিৎ-তপনের কবিতা, সমর-মানিক-শেখর-কল্পনা-সুতপার উপন্যাস শুধু আবহমান বাংলা সাহিত্যের মূল স্রোতের নয়, বিশ্বসাহিত্যের উৎকর্ষের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। 
আর সুমনের লেখালিখি খানিকটা পড়ার সুবাদে একথা বলতেই পারি যে সুমন প্রিভিলেজড ক্লাসের লেখা লেখেন না। রবিবার মধ্যাহ্নভোজনের পর দ্বিপ্রাহরিক ঘুমের আগে যারা খবরের কাগজে ছোটগল্প পড়ে, তাদের জন্য সুমন লেখেন না। আর তাই সুমনের লেখা হল আমাদের লেখা, আমাদের জন্য লেখা।
সুমনের পুরস্কার আমার মধ্যে এ প্রতীতির জন্ম দিয়েছে যে বেঁচে থাকতেই থাকতেই দেখে যাব কোনো এক তীর্থঙ্কর বা কমলিকা অথবা অর্জুন কিংবা পায়েল উত্তর-পূর্ব ভারতে বসে বাংলায় মৌলিক লেখালিখির জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পাচ্ছেন। 
লাব্বিউ সুমন।

একটু সংযোজন, উত্তর-পূর্ব ভারতের শ‍্যামল ভট্টাচার্য ও সুজিৎ চৌধুরী‌ও সাহিত্য অকাদেমি অনুবাদ পুরস্কার পেয়েছেন।
আর লেখার সময় ভুলে গেছিলাম প্রবুদ্ধ যে এখন বেঁচে নেই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.