বিজেপি ক্ষমতায় এলে অসম চুক্তির বিরোধিতা করবেন বলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক দিন টিভি কে বলেছিলেন
২য় পর্ব
চিত্ত পাল
অসমের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সম্ভবতঃ ৬ই এপ্রিল যোরহাট শহরে "নিউজ লাইভ" এর প্রেক্ষাপট অনুষ্ঠানে প্রশ্ন ত্তোরে বলেছিলেন যে যদি বিজেপি দল আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে, তাহলে আমরা "অসম চুক্তি"র বিরোধিতা করবো। কারণ প্রধানমন্ত্রী কিংবা সারা অসম ছাত্র সংস্থাকে কে অধিকার দিয়েছে এমন চুক্তি করতে? সর্ব ভারতীয় পর্যায়ে এন আর সি-র ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ সাল হয়েছে। শুধু অসমেই কেনো ১৯৭১ সাল হবে? কেন অসম রাজ্য কুড়ি বছরের অতিরিক্ত বোঝা বহন করবে? সুপ্রীম কোর্টের সাংবিধানিক বিচারপীঠে এ সংক্রান্তীয় একটি মামলা রয়েছে, বিজেপি সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসলে আমরা সুপ্রীম কোর্টে অ্যাফিডেভিট দাখিল করে ১৯৭১ সালের পরিবর্তে ১৯৫১ সাল কে ভিত্তিবর্ষ করতে বলবো। ডঃ শর্মা এটাও বলেছেন যে মানবীয়তার খাতিরে এই কুড়ি বছরে যে অবৈধ বিদেশি এসেছেন, তাদের আমরা অসম থেকে তাড়িয়ে দেবো না। তারা থাকবে খাবে, যদিও তারা নাগরিকত্ব পাবে না।
বলাবাহুল্য, ভূমিপুত্র অসমিয়া জনগোষ্ঠীর প্রতি এমন স্পষ্ট এবং সোজা সাপটা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও হিন্দু বাঙালিরা কোনো গুরুত্ব দেন নি। সিঁদূরে মেঘ দেখেও আৎকে ওঠেন নি। শুধু তাই নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন হয়েছে। সুচী অনুসারে সে বছর নাগরিকত্ব আইনের রুলস প্রস্তুত করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে অসমে এন আর সি করা অনিবাৰ্য হয়ে পড়ছিলো বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অসমে দুমুখো নীতির জন্যই ২০১৬ সালের নির্বাচনে এমন দুর্দশার সন্মুখীন হতে বাধ্য হয়েছে। অসম চুক্তি সম্পর্কীয় যে কোন আলোচনা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। কখনও কোন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় নি। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত তরুণ গগৈ ২০০৫ সালের ৩রা মে গুয়াহাটির কয়নাধরা স্থিত মুখ্যমন্ত্রীর বাস ভবনে আসু-র তিনজন নেতা ক্রমে উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল কুমার ভট্টাচাৰ্য, সভাপতি তপন কুমার গগৈ ও সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ রায় মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গগৈর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এই বৈঠকের সমস্ত ব্যবস্থাপনা তদানীন্তন রাজ্যের প্রতি মন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা করেছিলেন বলে গুঞ্জন শোনা গেছে। বিষয় টি সেখানেই শেষ হয় নি। পরদিন অর্থাৎ ৪ঠা মে প্রাইভেট ফ্লাইটে উড়িয়ে তাদের নয়াদিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিঙ অসম থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। সে সুবাদতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিলো। তাই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গগৈ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত করতে খুব একটা অসুবিধার সন্মুখীন হন নি। ওই দিনের অর্থাৎ ২০০৫ সালের ৫ই মে তারিখে অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় অসমে এন আর সি প্রস্তুত করার শেষ পেরেক মারা হয়েছিলো। অথচ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিঙ ২০০৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর রাজ্যসভায় উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী কে অনুরোধ জানিয়ে ১৯৭১ সালের পর ভারতে আসা হিন্দু বাঙালিদের রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম অনুসারে খাদ্য স্বাস্থ্য শিক্ষা পুনর্বাসন ইত্যাদি দিতে অনুরোধ করেছিলেন। একই কথা তিনি ২০০৫ সালের ১০ই মার্চ লোকসভায় বলেছিলেন।তিনি অবশ্য পরে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান কেন্দ্ৰীয় মন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়ালের আমলে ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সহ একাধিক দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি কথায় কথায় একদিন স্যাটেলাইট চ্যানেলে বলেছিলেন, "আমিই তো ওই ত্রিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত করার মুখ্য কারিগর ছিলাম"। অবশ্য ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর তরুণ গগৈ ভোটের আশায় হিন্দু বাঙালি ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সহানুভূতি আদায় করতে সে বছর ১৬ জুলাই তারিখে এক ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা অনুসারে যেহেতু পরবর্তী ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়েছে, সে জন্য ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা মতে বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম সকল কে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। এই সিদ্ধান্ত তদানীন্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিঙের কাছে পাঠানো হয়েছিলো বলে জানা গেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গগৈকে টিভি চ্যানেলে এটাও বলতে শোনা গেছে যে তিনিই নাকি রাজীব গান্ধীকে অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত করতে রাজী করিয়ে ছিলেন। কারণ তখন তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক থাকার পাশাপাশি গুজরাটের তত্ববধায়ক ছিলেন। রাজ্য রাজনীতি তে ক্ষমতায় থাকা প্রয়াত হিতেশ্বর শইকীয়ার সঙ্গে অহি-নকুল সম্পর্ক ছিলো বলে স্বজন বিদিত। অসমের ভাষিক সংখ্যালঘু বাঙালি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রায় দু কোটি মানুষের নাগরিকত্ব এখন সুপ্রীম কোর্টের সাংবিধানিক বিচারপীঠে ঝুলছে।
(ক্রমশঃ)
কোন মন্তব্য নেই