কাজী নজরুল ইসলাম, সন্ধ্যা মুখ্যাপাধ্যাযের সোনালী স্মৃতি
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামে বড় ছেলে কাজী সব্যসাচী তখন আকাশবানীর অ্যানাউসার,তিনি কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কে প্রায়ই ফোন করে অনুরোধ করে বলতেন, দিদি মা আপনার গান খুব ভালবাসেন,তাঁকে দেখতে চান, তিনি যেন একবার তাদের বাড়িতে আসেন, নজরুল তখন থাকেন পাইকপাড়ায়৷
নিজের চোখে সন্ধ্যা দেখেছিলেন পাইকপাড়ার বাড়িতে নজরুল ইসলামের খাটের চেয়ে বেশ খানিকটা নীচে আরেকটা চৌকিতে শুয়ে আছেন তাঁর সহধর্মিণী প্রমীলা দেবী তখন তাঁর কোমর থেকে নীচ পর্যন্ত পক্ষঘাতে অবশ৷ ওই চৌকির নীচে ছিল রান্নার মশলাপাতি ও সরঞ্জাম ,সেসব দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন,নজরুল জায়া প্রমীলা দেবী কে তাঁর চৌকির নীচে রান্নার মশলাপাতি,সরঞ্জামের কথা জিজ্ঞেস করতে কবি পত্নী ঠিক কি বলেছিলেন সেকথা বরং আমরা গীতশ্রী সন্ধা মুখোপাধ্যায়ের মুখ দিয়ে শুনি-'আমার যতদূর মনে পড়ছে মা(প্রমীলা দেবী) আমাকে বলেছিলেন,নজরুল তাঁর হাতের রান্না ছাড়া খেতে চাইতেন না,এত অসহায় অবস্থাতেও মা সব কিছু করে যেতেন'৷
সন্ধা মুখোপাধ্যায়ের বিয়ের বছর দুই আগের ঘটনা,একদিন সঙ্গীত শিল্পী নিজে,তাঁর বউদি ও দিদির ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছিলেন নজরুলের পাইকপাড়ার বাড়িতে, সময়টা বর্ষাকাল,অনেক ফুলের সমারোহ,কবির জন্য সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়রা সঙ্গে নিয়েছিলেন চাঁপা,জুঁই,বেলফুল, মিষ্টি৷
প্রমীলা দেবী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়রা বাড়িতে আসায় খুব খুশি হয়েছেন,কবি পত্নী সুন্দরী ছিলেন,প্রমীলা দেবী কে দেখে সন্ধ্যার চোখের পলক যেন আর পড়ে না,নজরুল কে সেদিন স্নান করিয়ে খাটে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷
নিজের চোখে কবি কে দেখে সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আপ্লুত,একটু এগিয়ে গিয়ে তাঁর পায়ের কাছে ফুল রেখে তাকে প্রণাম করতেই আঃ করে চেঁচিয়ে উঠলেন৷
একটু ভয় পেয়ে সন্ধ্যা সরে যেতে প্রমীলা দেবী বলেছিলেন আসলে কবি তাদের দেখে ভীষণ খুশি হয়েছেন,সঙ্গে বলেছিলেন 'তোমরা ওর চিৎকারে কিছু মনে করো না'৷ সন্ধ্যা ওইদিন দেখেছিলেন নজরুলের অসাধারণ চোখ দুটি অনবরত ঘুরছে,তিনি তাদের দিকে তাকাচ্ছেন আর একটার পর একটা কাগজ কুচি কুচি করে ছিঁড়ছেন৷বাড়ির লোকেরা বলেছিলেন প্রতিদিন তাঁর জন্য খবরের কাগজ,ম্যাগাজিন যোগাড় করে রাখতে হয়,কাগজ ছেঁড়া তাঁর অভ্যেস হয়ে গিয়েছে৷
সম্ভবত সেদিন ছিল কাজী অনিরুদ্ধের ছেলের জন্মদিন! অনেকেই এসেছিলেন নজরুল কে দেখতে,অনেকে দিয়েছিলেন ফুল,মালা কেউ গান গেয়ে কবি কে শুনিয়েছেন,তিনি তাদের দিকে ফুল ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিয়েছেন৷ অনেকক্ষন তাঁকে বসিয়ে রাখায় হয়ত কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন! কিছু আগেই নজরুলকে স্নান করানো হয়েছিল৷
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- 'আমি শুধু ভাবছিলাম ভগবান মানুষটাকে কেন এমন করে দিলেন?যিনি অসহায় ও দুর্বল মানুষের মনের কথা আমাদের শুনিয়েছেন,যার তেজোদীপ্ত ভাষা প্রতি মুহূর্তে আমাদের ভাবায় তিনি নিজে আজ বাকহীন,কত অসহায়'৷
প্রথমবার পাইকপাড়ায় গিয়ে বিদ্রোহী কবি কে তাঁর বাড়িতে বাকহীন অবস্থায় দেখে বড় কষ্ট পেয়েছিলেন সন্ধ্যা৷ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়দের পরিচয় কি, তারা কারা,সেটুকু বোঝার ক্ষমতা তিনি তখন হারিয়েছেন৷
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সন্ধ্যা ভাবছিলেন মানুষটা যদি সুস্থ থাকতেন তাহলে কত গল্প তাঁর সঙ্গে করতে পারতেন,অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারতেন৷ বাড়িতে ফিরে সন্ধ্যা গল্প করেছিলেন তাদের কত সৌভাগ্য হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলকে নিজেদের চোখে দেখে এসেছেন,কিন্তু কবি ও কবি পত্নীর অবস্থা দেখে ভারাক্রান্ত হয়েছিল তাঁর হৃদয় সেই রেশ থেকে গিয়েছিল অনেকটা দীর্ঘ সময়৷ আজ ২৯আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের প্রয়াণ দিবস,আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী৷
সংকলনে—অরুণাভ সেন৷
ভালবাসি বাংলা
#কাজীনজরুলইসলাম
#গীতশ্রীসন্ধ্যামুখোপাধ্যায়
#বিদ্রোহীকবি
#ওগোমোরগীতিময়
#বাংলাগান
গ্রন্থঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার,
ওগো মোর গীতিময়,গীতশ্রী সন্ধা মুখোপাধ্যায়,অনুলিখন সুমন গুপ্ত
কোন মন্তব্য নেই