Header Ads

সংসদে বাদল অধিবেশন কংগ্রেস দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ

আঘাত সহ্য করা যায়,অপমান ভোলা যায় না: অধীর

মানস বন্দ্যোপাধ্যায়

সংসদের বাদল অধিবেশন একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো কংগ্রেস সহ বিরোধীদের কাছে। বিশেষ করে কংগ্রেসের কাছে। অধিবেশন শুরুর আগে এবং অধিবেশন চলাকালীন কেন্দ্রের মোদী সরকার একের পর এক বাহনায় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী,প্রাক্তন অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধী,প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার মামলায় চরম হেনস্থা করেছে। এক পক্ষ কাল ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে সোনিয়াকে। প্রবর্তন নির্দেশালয়ের অধিকারীরা রাহুলকেও জেরা করেছে। শুধু তাই নয়, বর্ষীয়ান নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে কেও অধিবেশন চলাকালীন ডেকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে জেরা করেছে। 
কংগ্রেসের প্রতিবাদী সভা থেকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রিয়াঙ্কাকে। চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়েছে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্য মন্ত্রী হরিশ রাওয়াতকে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অধীর চৌধুরীকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। হাতে ,মাথায় চোট পেয়েছেন তিনি। সংসদে দীর্ঘকাল সোজা কথা বলার মানুষ অধীর চৌধুরী।
 
এনিয়ে অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া কী?

অত্যন্ত ক্ষুব্ধ অধীর চৌধুরী ঠান্ডা মাথায় বললেন, জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছি। সহ্য হয়ে গেছে। আঘাত সহ্য করা যায়,কিন্তু অপমান কখনোই ভোলা যায় না। তিনি বলেন,যেভাবে শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ সভায় নির্বিচারে মোদীর পুলিশ ও সুরক্ষা বাহিনী অত্যাচার চালিয়েছে শুক্রবার, তাতে ভারতে গণতন্ত্রের অস্তিত্বকেই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তোলা, প্রিয়াঙ্কার ওপর মহিলা পুলিশের হামলা নজিরবিহীন। 
তদন্তকারী সংস্থা প্রবর্তন নির্দেশালয়ের অধিকারীরা সোনিয়ার সঙ্গে  যে ধরনের আচরণ করেছেন সেটা সম্ভবত হিটলারের আমলেই সম্ভব। ম্যাডাম সোনিয়া ক্যান্সারে ভুগছেন ।সেটা জেনেও তাকে কয়েকদিন ধরে ১৮ ঘণ্টা জেরা করে মানসিক যন্ত্রনা দিতে এদের বিবেকে বাধে নি।
অধীর বাবু বলেন,এর আগে রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালে তার সমর্থকেরা তাকে সহমর্মিতা জানালে পুলিশ নির্বিচারে তাদের ওপর লাঠি চার্জ করে অনেককে জখম করেছে। এটা কী গণ তন্ত্র? মানুষের কী প্রতিবাদ জানানোর কোন অধিকার নেই! সংসদেও  শান্তিপূর্ন ভাবে প্রতিবাদ করার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সংসদ পরিসরে ধর্না,প্রতিবাদ ,পোস্টার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৭৫ বছরের ইতিহাসে এমনটি হয় নি। গণতন্ত্রের কাঠামোকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়াকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। তাদের ওপর বুলডোজার চলেছে বিভিন্ন আছিলায়। লক্ষ লক্ষ সাংবাদিক তাদের রুজি ,রোজগার হারিয়েছেন। সাংবাদিকদের পথে  নামতে দেখা যাচ্ছে। সংসদের ভিতরে যুগ যুগ ধরে যে সাংবাদিকেরা আসতেন সংবাদ সংগ্রহ করতে তাদের ডানা ছাঁটা হয়েছে। সংসদের সেন্ট্রাল হলে যাবার অনুমতি যাদের ছিল সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোন অনুশোচনা নেই শাসক দলের। দেশ চলছে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও গৃহ মন্ত্রী অমিত শাহর স্বৈরাচারী  নীতির দ্বারা। 
অধীর চৌধুরী আরো বলেন, তার ওপর শারীরিক নিগ্রহ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন।কিন্তু যেভাবে লাগাতার মৌলিক অধিকার হরণ করে শীর্ষ নেতাদের অপমান করা হচ্ছে সেটা কখনই ভুলে যাওয়া যায় না।  তিনি আরো বলেন, প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছিলেন। এর কারণ প্রাইভেট ব্যাংক গুলি সাধারণ ভাবে মানুষকে শোষণ করে যাচ্ছিল। সঞ্চিত টাকা আত্মসাৎ করে  ব্যাংক বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছিল অনেক ক্ষেত্রে। তাই তাদের রাষ্ট্রায়ত্ব করেছিলেন শ্রীমতী গান্ধী। ১৫ টির বেশী শিল্প সংস্থাকে রাষ্ট্রায়ত্ব (পি এস ইউ)  করেছিলেন তিনি। রাজীব গান্ধীও দুটি পি এস ইউ গঠন করেছিলেন। নরসিংহ রাও,মনমোহন সিং ও পি এস ইউ গুলিকে মজবুত করার চেষ্টা করেছেন।  কিন্তু মোদী মাত্র ৮ বছরে সব ব্যক্তিগত মালিকানার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন কি সরকারী প্রতিষ্ঠান বিমান, রেল কোনটাই বাদ যাচ্ছেনা। মূল্য বৃদ্ধি সর্ব কালের রেকর্ড। মধ্যবিত্ত দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছেন। নিম্ন বিত্ত উধাও। আত্মহত্যার প্রবণতা মোদীর আমলে সবচেয়ে বেশি। এটা নাকি, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। অপরদিকে আদানি,আম্বানি, টাটা,বাজাজ তাদের আয় বাড়িয়ে নিয়েছেন ৫০০ শতাংশ। এই হলো মোদীর বিকাশের নমুনা। 
তিনি বলেন,তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহু আঘাত আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন।  মুর্শিদাবাদ,বহরমপুর, মালদাতে সিপিএম বহুবার হামলা চালিয়েছে। আমি সাধ্য মতো শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করেছি। মাথা নিচু করিনি। সিপিএম এর গুণ্ডা বাহিনী আমার মাথা নত করতে পারেনি। 
তৃনমূল কংগ্রেস আসার পর চরম স্বৈরাচার  শুরু করেছে। চক্রান্ত করে আমার দলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের লোভ দেখিয়ে তৃনমূল কংগ্রেসের প্রতীক দিয়ে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করিয়ে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করেছে। আমি হারিনি। আমার দীর্ঘ দিনের জমি শঠতা করে কেড়ে নিয়েছে। তবুও মুর্শিদাবাদের মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আমি তাদের সুখে দুঃখে সাথে রয়েছি। এটাই বড় পাওনা। "
" তৃনমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ত্রাসের সঞ্চার করেছে। দলীয় কর্মী,নেতাদের অবাধে লুট করার ক্ষমতার ক্ষেত্রে খোলা ছুট দেওয়া হয়েছে। দেখতেই তো পাচ্ছেন কী ভাবে জমি থেকে ফসলের বদলে বেরিয়ে আসছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, সোনার অলঙ্কার, সারি সারি গোপন ফ্ল্যাট,বাগানবাড়ি। এইফ্ল্যাট ও বাগানবাড়ি একত্র করে এক জায়গায় আনলে একটা নতুন শহর গড়ে উঠতে পারে। এতো বড় চুরি ও লুট ভারতের ইতিহাসে কখনো দেখা যায় নি। এর আগে সারদা , নারদা,রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারিতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তদন্তে বহু নাম তথ্য সহ উঠে এসেছে। ফলাফল কী হলো? সম্পূর্ন জিরো। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাজীব   জড়িয়ে পড়লেন  সারদা মামলায় নথি লোপাট করার অভিযোগে। তাকে বাঁচাতে মমতা ছুটলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। অপরাধীর খাতা থেকে মুছে গেল তার নাম। এবারেও প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির পুকুর চুরি ধরা পড়ার পর পার্থকে দল থেকে,মন্ত্রীত্ব থেকে বহিস্কার করা হলো। কিন্তু ভয় থেকে গেল। পার্থ বললেন, এই টাকা তার নয়,অর্পিতা বললেন ,এই টাকা তার নয়। তাহলে টাকা কার? রামকৃষ্ণের কথা মতো,টাকা মাটি,মাটি টাকা তো হতে পারে না! তাহলে কার! প্রশ্ন এখানেই। পার্থ বলে দিলেন,তিনি সব ফাঁস করে দেবেন। ব্যস,ভয়ে সিঁটকে গেলেন দিদি,ভাইপো। দিনরাত মোদিকে গালি দেবার পর তাকে বাগে আনতে বড় কাজ করা হলো। উপ রাষ্ট্র পতি নির্বাচনে ভোট দানে বিরতির কথা ঘোষণা করলেন যাতে শাসক দলের প্রার্থী ধনকারের জয়ের পথ প্রশস্ত হয়ে যায়। মোদীকে ও খুশি করা যায়। আমি আগেই বলেছি মোদীর এই ইডি তদন্ত মমতাকে চাপে রাখা।কাজের কাজ কিছুই হবে না। পার্থ হয়ে যাবেন বলির পাঁঠা।
মমতা দীর্ঘকাল নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করে এসেছেন। এবারে শুধু বৈঠকে যোগদানই নয়,তিনি চারদিনের দিল্লি সফরে তিনবার মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করলেন। আজকেই দেখা করেছেন। এটা নাকি রাজ্যের বিভিন্ন বকেয়া সংক্রান্ত বৈঠক। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে সঙ্গে অভিজ্ঞ  আমলাদের নিলেন না কেন? আসলে এটা ছিল সম্পূর্ন সেটিং।  রাজ্যপাল থাকা কালীন দৈনিক অকথ্য গালি দেওয়া হতো যে জগদিপ ধনখরকে,সেই জাগদিপের নির্বাচনে জয় সুনিশ্চিত করতে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেন বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য হয়েও। এরফলে প্রায় ৫০ ,৬০ টি ভোট হারালেন বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভা। 
লক্ষ্যণীয় ভোটের আগে দিল্লি গেলেও মার্গারেট আলভা বা বিরোধী নেতাদের সঙ্গ এড়িয়ে গেলেন দিদি। মানুষ ঘাসে মুখ দিয়ে চলেন না।সবই বোঝেন। "
অধীর চৌধুরী আরো বলেন," রাষ্ট্র পতি নির্বাচনেও যশবন্ত সিনহাকে গাছে চড়িয়ে মই কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। মোদীর প্রার্থী দ্রৌপদীকে তিনি যোগ্য বলে আগেই বলে দিলেন। যশবন্ত তো এখন তার ওপর হাড়ে হাড়ে চটা। আসলে সুবিধাবাদী রাজনীতি করছেন মোদী , মমতা দুজনেই।  মানুষ সচেতন হতে চলেছেন। লক্ষ্য করুন সাম্প্রতিক অধিকাংশ উপ নির্বাচনে কংগ্রেস বেশি আসন দখল করেছে। ২০২৪ এ যারা কংগ্রেসকে অবহেলা করে মন্তব্য করছেন তারা বুঝতে পারবেন বাস্তবকে।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.