তিস্তার মুক্তির দাবিতে দেশ জুড়ে আন্দোলন
অজয় বসাক : :মানব অধিকার কর্মী তিস্তা শীতলাবাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কলকাতা,দিল্লী,দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহর,ঝারখন্ডে প্রতিবাদ ছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে অসমেও বিভিন্ন দল সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা তিস্তার মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন।
এমনকি জাতিসংঘ থেকেও তিস্তার গ্রেপ্তারের সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে। রাষ্টপুঞ্জের এক আধিকারিক বলেন, "মানব অধিকার রক্ষা কখনো অপরাধ হতে পারে না।"
উল্লেখ্য যে গুজরাটের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী এবং ভারতরের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দেওয়ার বিরোধীতা করে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলন গুজরাট দাঙ্গায় নিহত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। সেই মামালয় সহ মামলাকরী ছিলেন তিস্তা সেতলাবাদ। দীর্ঘ দুই দশক পর উচ্চতম ন্যায়ালয়ে এই মামলা খারিজের পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সম্বন্ধে বার্তা সম্প্রসারিত হয় এবং তার পরই গুজরাট পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা তিস্তাকে তার মুম্বাই স্থিত ঘর থেকে নিয়ে যান গুজরাটের আমেদাবাদে। একই সময় গ্রেপ্তার হোন গুজরাটের প্রাক্তন ডিজেপি আর.বি.শ্রীকুমার।
এই ঘটনায় এখন সরব দেশ ও দেশের বাইরেও।
উল্লেখ্য যে বিগত কয়েক বছর যাবত তিস্তা সেতলাবাদের সংগঠন সিজেপি অসমের নাগরিকত্ব সমস্যা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। এনআরসির সময় মানুষের আবেদন পত্র পূরণে সহায় করা ছাড়াও, ডিভোটার, ফরেইনার্স ট্রাইবুনাল থেকে প্রেরণ করা মামলা ইত্যাদির আইনি সহায় এবং ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে পঞ্চাশেরও অধিক মানুষকে মুক্ত করতে সহায় করেছেন। অসমের বিভিন্ন জেলার গ্রামের প্রান্তিক দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যারা নাগরিকত্ব সমস্যায় জর্জরিত তাদের আশা ও ভরসার অন্যতম জায়গা তিস্তা সেতলাবাদের সংগঠন সিজেপি।
অসমে এই বিশিষ্ট মানব অধিকার কর্মী তিস্তা সেতলাবাদের মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন বিভিন্ন দল সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা।
অসমের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি ডক্টর হীরেন গোহাঁই, গুয়াহাটী পান্ডু কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন মূরব্বী অধ্যাপক ডক্টর অমলকান্তি লাহা, বিশিষ্ট সমাজকর্মী হরকুমার গোস্বামী, শ্রমিক নেতা দেবজিৎ চৌধুরী প্রমুখ্যে বহু বুদ্ধিজীবি, লেখক, শিক্ষক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এবং তিস্তার মুক্তির দাবী জানান।
অসমের শক্তিশালী কণ্ঠ, বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ হীরেন গোহাঁই তিস্তা সেতলাবাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। ক্যা বিরোধী মঞ্চের পক্ষে তিনি এবং দেবেন তামুলী সম্প্রতি একটি বিবৃতি জারি করেছেন। বিবৃতিতে তারা লিখেছেন যে, গুজরাট পুলিশ এবং এটিএসের প্রতিশোধমূলক স্ট্রাইক দেখে তারা হতবাক ও বিরক্ত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এই মুহুর্তে এটি স্মরণ করা যেতে পারে যে এসআইটি রিপোর্ট প্রকাশের সময়ই অভিজ্ঞ সাংবাদিক, অভিজ্ঞ অধিকার কর্মী এবং কিছু সম্মানিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সেখানে কথিত ত্রুটিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং অনেক সমালোচনামূলক এবং ভিন্নমত পোষণ করেছিল। সেই রিপোর্টে গুরুতর পরিস্থিতিসাপেক্ষ প্রমাণও পাওয়া গেছে যে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার পটভূমিতে আরও বড় ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তাই তিস্তা সিতলবাদ, যার মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘ নিবেদিত এবং বিশিষ্ট কাজের প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে, যার জন্য তাকে 'পদ্মশ্রী' দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল, তিনি এই ধরনের অভিযোগের যোগ্য বলে মনে হয় না। আইপিসির বিভিন্ন ধারার অধীনে এমন গ্রেপ্তার এবং আটক তো দূর।" তারা তার মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবিও করেছে, "আমরা তার অবিলম্বে মুক্তি এবং তার নাগরিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবি করছি।"
অসমের ফরাম ফর সোসিয়াল হারমনি, অসম শ্রমিক মজুরি ইউনিয়ন, ঐকতান সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, সিজেপি অসম শাখা যৌথ ভাবে তিস্তা সিতলবাদের মুক্তির দাবি জানান। এদিকে অসম ক্যা বিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকেও তিস্তা সেতলাবাদের মুক্তির দাবী জানানো হয়।
ফরাম ফর সোসিয়াল হারমনির মূখ্য আহ্বায়ক বলেন, "বিশিষ্ট মানব অধিকার তিস্তা শীতলবাদের এই গ্রেপ্তার মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে আটক করে কন্ঠ রোধ করার অপচেষ্টা। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি চাই।"
সিজেপির অসম শাখার পক্ষে নন্দ ঘোষ বলেন," তিস্তা সেতলাবাদ দীর্ঘদিন যাবত নিপীড়িত মানুষের হয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন, তিনি সাহসের প্রতীক। মানবতার রক্ষার্থে তার মুক্তি দাবী করছি।"
কোন মন্তব্য নেই