Header Ads

শিলচর বন্যার পরের লড়াই আরো কঠিন

 ✍আমাদের যুদ্ধের কথা
সীমা ঘোষ


জীবনযুদ্ধে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর একটা শহর পড়ে আছে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে । কী ভয়ঙ্কর সে যুদ্ধ , যখন একেবারে নিরস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় তাকে একেবারে অপ্রস্তুত। এ যেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিরস্ত্র মেঘনাদের সামনে অস্ত্র নিয়ে লক্ষণের অতর্কিত প্রবেশ ।

প্রবল প্রতিপক্ষ হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠেছে তখন দিন দিন বুনো জন্তুর মতো ।  আপাত নিরীহ মানুষ বরাকের তীরে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে, হার না মানা প্রতিজ্ঞায় । সত্যি কি সে হাত ধরে ? হ্যাঁ, ধরে । এই বিপর্যয়ের সামনে সেই সব অকুতোভয় তরুণ তরুণী বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে । পরস্পরের সাহস আশা ভরসা হয়ে উঠেছে এরাই। তারা তাদের সত্যিকার সাধ্যের বাইরে গিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গেছে মানুষকে বাঁচাতে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে । অথচ কত কথাই না বলা হয় ।এরা আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর ধান্দাসর্বস্ব। 
কিন্তু, আমি দেখেছি এদের দিকে। শুনেছি দুকান ভরে সেই গান , 
" মাগো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে/ তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি/ তোমার ভয় নাই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি! / আমরা হারব না হারব না / তোমার মাটির একটি কনা ছাড়ব না..."। সত্যি এদের সত্যিকার পথে চালিত করার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের আজ খুব প্রয়োজন। কী না পারে এরা ? এই বিপর্যয় বুঝিয়ে দিয়ে গেছে । 

কমলা রোড বিলপার পাবলিক স্কুল শ্যামানন্দ রোড এখনও কীভাবে পড়ে আছে সকালের সেই সব ছবি । মল্লরাজা বলছেন, জল বের করবেন, শহর পরিস্কার করবেন,  এখনও যারা জলবন্দি তাদের সব ধরনের সাহায্য করবেন । তাহলে এত দেরি কেন ? যে সব মানুষ ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করে কোনো মতে প্রাণ নিয়ে এখন এক বুক অবসাদ নিয়ে এই নোংরা দুর্গন্ধময় পরিবেশে আছেন তাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে এত দেরি কেন ? রাস্তায় রাস্তায় গলিতে গলিতে পচা গলিত শবদেহের মতো ঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা পড়ে আছে । একটু ব্লিচিং পাউডার পর্যন্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করে নি প্রশাসন। তো তাঁরা কীসের আঁটি বাঁধছেন এখনো ? আছেন কেন তাঁরা ? আমার দেখে এই ক্ষোভ হচ্ছে।যাঁরা আছেন তাঁদের কী হচ্ছে ? 

 আসামে এসে প্রথম একটি শব্দ শিখেছিলাম," লাহে লাহ" মানে ধীরে ধীরে । ধীরে ধীরে কাজ করা নাকি এখানকার স্বভাবজাত বিষয় । রাস্তায় গলিতে হেঁটে হেঁটে  তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ কুড়িয়ে এলাম ।

গতকাল হাতে ফোন ছিল না কোনো ফটো তুলতে পারি নি , কিন্তু পশ্চিম কৃষ্ণচরণ রোড ( ড. মণিকা দেবের গলি বলেও এখন পরিচিত) , শান্তি লেন তরণী রোডের ভিতরে মধুসূদন লেন সব পচা জলে ভরে আছে । 

পাবলিক স্কুল রোডে আমার সহকর্মী, ড. পিনাকী দাসের সঙ্গে একটু কথা হলো, বুঝলাম, আমার দেখা নেহাত বাইরে থেকে, কিন্তু যারা জলবন্দি হয়ে আটদিন দশদিন বারো দিন বিদ্যুৎ বিহীন জলহীন খাদ্যহীন ওষুধপত্রহীন হয়ে ছিলেন,আসল খবর সেখানে। আমি তার এক কনাও নই ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.