Header Ads

প্রবীণ দের জন্য ছবি "পুনম -"প্রদর্শন দিল্লীতে



*প্রবীণদের জন্য চলচ্চিত্র 'পুনম'-এর প্রদর্শন ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত* 

নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, নুতন দিল্লি: চারিস্তা ফাউন্ডেশন বয়স্কদের একাকীত্ব থেকে বের করে আনতে এবং তাদের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সমাজের প্রবীণদের মানসিক চাহিদা পূরণ করার কার্য্যে নিয়োজিত। চারিস্তা ফাউন্ডেশনের প্রযোজনায় একটি ছোট সামাজিক চলচ্চিত্র 'পুনম' রাজধানীর দর্শকদের কাছে স্ক্রিনিং করা হয় সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে। বয়স্কদের মানসিক যত্নের প্রয়োজনীয়তার প্রতি সমাজে এক সামগ্রিক সচেতনতা তৈরি করাই এ ছবির উদ্দেশ্য।
লেখিকা, পরিবেশ প্রকৌশলী এবং স্বর্ণপদক বিজয়ী রিজুতা গুপ্তা দ্বারা পরিচালিত একটি আলোচনার সভার প্রারম্ভে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল 2রা জুলাই 2022 সন্ধ্যায় দিল্লির দক্ষিণ এশিয়ার বৈদেশিক সংবাদদাতা ক্লাবে (FCC)। আলোচনার সভার উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজমেন্ট গুরু ব্রিগেডিয়ার চন্দ্র মুকেশ,  লেখক অমিত নাগপাল যিনি একজন বিজনেস স্টোরি টেলার, সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট লিডার মনীষা শর্মা। আর, উপস্থিত    ছিলেন রাধিকা অতুল আবরোল যিনি একজন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মী।
অনুষ্ঠানটিতে জীবনের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং ক্লাবের সদস্যদের পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের অনেকেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। শিল্পী দাস চৌহান, চারিস্তা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, এই সামাজিক স্বল্প-মেয়াদি  চলচ্চিত্রটির পিছনে অনুপ্রেরণা, বৃদ্ধ জীবনের নীরব ঘাতক যে একাকীত্ব, এবং এ বার্তাই ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য
ছবিটির নির্মাণ - এ কথাগুলো সভার শুরুতে নিজের বক্তব্যে বলেন। 
ছোট ফিল্মটি উপস্থিত দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়। পরবর্তীতে, যে আলোচনা সভাটি আয়োজিত হয় তা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি স্থায়ী ছিল।ওঙ্কারেশ্বর পান্ডে, অবজারভার গ্লোবাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান, প্রবীণদের বোধশক্তি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যারা প্রায় তিন দশকেরও বেশি চাকুরী করার পর অবসর গ্রহণ করেন এবং হঠাৎ করে জীবনের সেই পর্য্যায়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে এক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হন। পান্ডে এমন নীতির পক্ষে প্রশ্ন তোলেন যা সমাজকে এই ধরনের বরিষ্ঠ নাগরিকদের বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেবে। অবসরপ্রাপ্ত কিন্তু এখনও অতি-সক্রিয় ব্রিগেডিয়ার চন্দ্র মুকেশ, যিনি সম্প্রতি 69 বছর বয়সে পদার্পণ করেছেন বলেন, যে বরিষ্ঠ নাগরিকরা নিজেদের কর্ম দক্ষতা বাড়ানো এবং সমাজে প্রাসঙ্গিক থাকা জন্য সর্বদা সচেষ্ট হতে হবে ।
আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও এফসিসি-র সদস্য রত্নজ্যোতি দত্ত বয়স্কদের জন্য যে জাতীয় নীতিগুলি রয়েছে সেই সম্পর্কে জন-সচেতনতা তৈরি করার পক্ষে মত দেন। প্যানেলিস্ট মনীষা শর্মাও সাংবাদিক দত্তের পরামর্শে সম্মত হন এবং বলেন যে এই ধরনের সচেতনতা প্রচারাভিযান সকল স্তরে পরিচালিত হওয়া উচিত। শর্মা এই সত্যটি তুলে ধরেছিলেন যে খুবই  কম সংখ্যক কর্পোরেট সংস্থা আছে যারা তাদের CSR তহবিল বয়স্কদের সমস্যাগুলির জন্য খরচা করে। 
সাংবাদিক রত্নজ্যোতি দত্ত বলেন জাতীয় মহিলা কমিশন বা জাতীয় শিশু অধিকার কমিশনের মতো বয়স্কদের জন্য একটি নিবেদিত কমিশন বা আয়োগ থাকা উচিত। অমিত নাগপাল এই বিষয়ে আরও বলেন, "কর্পোরেটরা বয়স্কদের যত্নের ইস্যুতে ব্যয় করে না, তবে কেউ যদি তাদের এই ধারণাটি ভালভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়, তবে এই দিকেও তাদের আগ্রহ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।" রিজুতা গুপ্তও সম্মত হন যে কর্পোরেটদের জেগে উঠতে হবে। শিল্পী দাস চৌহান - প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, চারিস্তা ফাউন্ডেশন বলেন, "আমরা CSR-এর মাধ্যমে বয়স্কদের যত্ন নেওয়াকে কর্পোরেটদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।"
উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভিত্তিক সাংবাদিক বিশ্বদীপ গুপ্ত জানান কিভাবে আসাম সরকার সে রাজ্যে বৃদ্ধ বাবা-মাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য সন্তানদের উপর আইন প্রয়োগ করেছে। গুপ্ত প্রশ্ন তোলেন যে বাবা-মায়েরা সমাজের জন্য এমন কী ভুল করেছেন যে এই ধরনের আইন প্রয়োগের মতো পর্য্যায়ে বিষয়টি চলে এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আভা মরিয়দা ভাট তার বক্তব্যে বলেন যে বাবা-মায়েরা তাদের বোধহয় বৃদ্ধ জীবনের জন্য মানসিকরূপে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি জোর দিয়ে ছিলেন যে প্রত্যেককে জীবনের এই পর্য্যায়ের জন্য নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা উচিত শুরু থেকেই।
শ্রোতাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজোষ্ঠা সদস্য ছিলেন বর্ষীয়াণ সাংবাদিক কে.এন. গুপ্তা। তিনি এখনও নিজেকে সংবাদ সংস্থা পিআইও-টিভি-র সম্পাদনার দৈন্দিন কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি নতুন দিল্লির গুলমোহর পার্ক রেসিডেন্টস কলোনিতে যেভাবে সূচনা করেছিলেন ঠিক তেমনই কমিউনিটি স্তরে সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্টিভিটি সেন্টার স্থাপনের মতো বাস্তবিক ধারণাগুলি বাস্তবায়নের কথা উপস্থিত শ্রুতাদের সম্মুখে তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের ক্লাবের বা এফসিসি-র সভাপতি মুনীশ গুপ্তা এই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটান এই বলে যে আমাদের উচিত বাবা-মায়ের সাথে তেমনই ব্যবহার করা, যেভাবে তারা আমাদের সাথে আচরণ করেছিল যখন আমরা শিশু ছিলাম। তিনি বলেন যে এ কার্য্যটির মাধ্যমে সমাজে কিছু অবদান ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সমাজে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি গর্বিতভাবে বলেছিলেন, "যদি কেউ বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারে তবে তা আমাদের ভারতবর্ষ করতে পারে। কারণ, আমাদের নাগরিকরা বছরের পর বছর বৃদ্ধা মাতা-পিতাদের সেবা করার নিদর্শন সমাজে রেখে গেছেন।"  
"আমাদের অবশ্যই বয়স্কদের জীবনকে আরও উন্নত করতে অবদান রাখতে হবে," বলেন মুনীশ গুপ্তা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.