Header Ads

২০০বছর অসমে বসবাস করেও বাংলাভাষী হিন্দু মুসলিম ভূমিপুত্র বা খিলনজিয়া হতে পারলো না,অভিযোগ চিত্ত রঞ্জন পালের

 নয়া ঠাহর , গুয়াহাটি- "দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠীর মানুষেরা অসমে বসবাস করে আসছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা এই জনগোষ্ঠীর মানুষদের  ভূমিপুত্রের মর্যদা দেন নি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গোপীনাথ বরদলৈ যে বৃহত্তর অসমিয়া জাতি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছেন।" এমন গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন চিত্তরঞ্জন পাল।
উল্লেখ্য,  গত  পরশু অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট বৈঠকে গরিয়া, মরিয়া, জলাহ, দেশি ও সৈয়দ কে ভূমিপুত্র মুসলমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে, যাঁরা অসমিয়া ভাষা কে সংখ্যাগরিষ্ঠ বানাতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই মুসলমান সম্প্রদায় কেই ব্রাত্য করে রেখেছে। বলাবাহুল্য, কথায় কথায় অবিশ্রাম একটি বাক্য উচ্চারিত হয় যে "অসম কে ত্রিপুরা হতে দেবো না।" অবশ্য অসমিয়া বুদ্ধিজীবীর একাংশ এমন বক্তব্যের পেছনে যুক্তি দেখান যে ১৮৩৬ সাল থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত অসমের রাজ্য ভাষা বাংলা ছিলো। কিন্তু তাঁরা কখনও এ কথা বলেন না যে ১৮২৬ সালে ইয়াণ্ডাবু সন্ধির পর অসমের কোর্ট কাছারি তে পার্সি ভাষার প্রচলন করেছিলো। পরবর্তীতে কলকাতা থেকে আগত বাঙালি ভদ্রলোক বাবুরা রাজ কার্যের সুবিধাৰ্থে বাংলা ভাষার প্রচলন করেছিলেন। পার্সি ভাষা থেকে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়েছিলো মাত্র।
প্রসঙ্গ উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালে যখন বৃটিশ ইণ্ডিয়ার সরকার অসমের রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতি পূর্ণ জেলা সিলেট ও অভিবক্ত গোয়ালপাড়া জেলা কে অসমের মানচিত্রে সংযুক্ত করে দেয়, তখন অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলাভাষীর জনসংখ্যা ছিলো এগারো লক্ষেরও বেশি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গোপীনাথ বরদলৈ-র ঐক্যান্তিক প্রচেষ্টার দরুণ ১৯৫০ সালে রাজ্য পুনর গঠনের নামে অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলাভাষী মুসলমানেরা রাতারাতি নিজেদের অসমিয়া ভাষী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। অবশ্য তার আগে ১৯৪৭ সালের ৬ই ও ৭ই জুলাই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো যে সিলেট ভারতে থাকবে নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে যাবে।
এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা কয়েক বছর আগে নিজেই এক টিভি চ্যানেলে বলেছেন যে বর্ণ হিন্দু অসমিয়া জনসংখ্যা মাত্র পঁচিশ শতাংশ। সে হিসেবে, তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ জনসংখ্যার রাজ্য অসমে প্রকৃত অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা মাত্র ৮২ লক্ষ ৫০ হাজার।
ওদিকে, ২০১১ সালের আদমশুমাড়ি অনুসারে অসমিয়া ভাষী দেড় কোটির বিপরীতে বাংলা ভাষীর সংখ্যা নব্বৈ লক্ষ। হিন্দু ভোট মেরুকরণ করার স্বার্থে ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা অনর্গল বলে বেড়ান যে বিজেপি-র মুসলমান ভোটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি সাহস থাকে তাহলে মুখ্যমন্ত্রী বলুন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মুসলমানদের অসমিয়া পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই, চিত্তরঞ্জন পাল চ্যালেঞ্জ করেন। ২০২১ সালে অদমশুমাড়ি অনুষ্ঠিত হয় নি। ওদিকে, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ৪৮.৩২ শতাংশ অসমিয়া ভাষী এবং ২৮.৯২ শতাংশ বাংলা ভাষীর সংখ্যা। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার গরিষ্ঠ সংখ্যক মুসলমানেরা নিজেদের অসমিয়া পরিচয় দিয়েও রেহাই পান নি। এক সুদূর প্রসারি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে বলে চিত্তরঞ্জন পাল মত পোষণ করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.